প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ মার্চ :জাল ই-চালান ব্যবহার করে দামোদর থেকে বালি লুট করে পাচার কাণ্ডের পর্দা কয়েকদিন আগেই পুলিশ ফাঁস করেছে।সই জালিয়াতি কাণ্ডে জড়িত পাচ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ই-চালান জালিয়তি চক্রের আঁতুর ঘরে খোঁজ চালাচ্ছে। এত কিছুর পরেও পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে বন্ধ হয় নি বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য।কৌশল বদলে এবার তারা শুর করেছিল দামোদরে একাধীক নৌকা নামিয়ে লিজ বিহীন জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ বালি চুরি।যা সোমবার রুখে দিল জামালপুর থানার জ্যোৎশ্রীরাম এলাকার বাসিন্দারা।পুলিশ এই ঘটনারও তদন্ত শুর করেছে শুরু হয়েছে দামোদরে নৌকা নামিয়ে বালি চুরি চক্রের মূল পাণ্ডাদের খোঁজ।পাল্টা জ্যোৎৎশ্রীরাম গ্রাম থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরের একটি বালি খাদানের ম্যানেজার জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামের এক যুবকের বিরুদ্ধে তিন লক্ষ টাকা তোলা চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।যা নিয়ে হুলস্থল পড়ে গিয়েছে ।
জামালপুর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম জ্যোৎশ্রীরাম। এখানকার বেশিরভাগ পরিবারের পুরুষ ও মহিলারা স্নান সহ নানা কাজে দামোদরের নদের জল ব্যবহার করেন।গ্রামবাসী তমাল সিংহ,আশিস দাস ,সন্দীপ মাঝি-রা বলের জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামে দামোদরের সদর ঘাট ও তার আশেপাশে লিজ প্রাপ্ত কোন বালি খাদান নেই।বালি খাদান রয়েছে জ্যোৎশ্রীরাম গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে শাহহোশেনপুর- জ্যোৎচাঁদ এলাকায় । সেখানকার বালি খাদানেয় অন্যতম মালিক জামালপুর থানার রাজারামপুর গ্রামনিবাসী জয়দেব গড়াং। আর ওই বালি খাদানে ম্যানেজারি করেন ওড়িষ্যা থেকে জামালপুরে বসবাস করা জয়ন্ত প্রধান ওরফে পাণ্ডব।
তমাল সিংহ সহ জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামের বহু মানুষের অভিযোগ ,গোটা জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চল জুড়ে দামোদরের যে কোন জায়গা থেকে বালি চুরির জন্য জয়দেব গড়াং ও তাঁর ম্যানেজার তাদের নৌকা বাহিনী কে কাছে লাগায়।নিত্যদিন তারা দামোদরে একাধীক নৌকা নামিয়ে বালি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে । জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামের সদর ঘাটের কাছে আর এল আই পাম্প রয়েছে ।স্নান সহ নানা কাজ সদর ঘাটে সারেন জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামের বাসিদ্দারা ।সেই সদর ঘাট এলাকায় দামোদরের কীনারা বরাবর নৌকা বাহিনী প্রতিদিন পাঁচ-ছয়টি নৌকায় বালি লোড করে নিয়ে যাওয়ায় গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।তার কারণে সদর ঘাট মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। তমাল সিংহ বলেন, সদর ঘাট ও তার আশপাশ থেকে বালি না তোলার জন্য গ্রাবাসীরা বহুবার জয়দেব গরাং ও পাণ্ডবের নৌকা বাহিনীকে বলেছিল । তার পরেই নৌকা বাহিনী বালি তোলা চালিয়ে যায় । এদিন একই ভাবে নৌকা বাহিনী সদর ঘাট সংলগ্ন জায়দা থেকে বালি তোলা শুরু করলে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ মাত্রা ছারায় ।দামোদর থেকে বালি চুরি করা কালীন গ্রামের যুবকরা একজোট হয়ে দামোদরে নেমে বালি বোঝাই তিনটি নৌকা ও নৌকায় বালি তোলায় যুক্ত জনা ৩০ লেবার কে ধরে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয় ।পুলিশ এসে বালি তোলায় যুক্ত লেবারদের ছেড়ে দিয়ে তিনটি নৌকা আটক করে রেখেছে।নৌকা বাহিনী নামিয়ে দামোদর থেকে যথেচ্ছ ভাবে বালি লেটের ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামের বাসিন্দারা ।
গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়া নৌকা বাহিনীর এক সদস্য বুদ্ধদেব মাঝি বলেন, আমরা জ্যোৎশ্রীরাম গ্রাম এলাকায় ঢুকে দামোদর থেকে বালি তুলো নৌকায় লোড করছিলাম বলে গ্রামবাসীরা আমাদের আটকায়।আমরা যে খাদানের হয়ে কাজ করি সেই খাদানের ম্যানেজার পাণ্ডব বাবু আমাদের বলেছিল, দামোদরের যেখানে খুশি বালি তুলবি । কিছু হলে আমরা বুঝে নেব। ম্যানেজার বাবুর কথা মতই যেখানে ভালো ভানের বালি মিলছে সেখানেই আমরা ৩০-৪০ জন লেবার নৌকা নিয়ে বালি তুলে নি । এতদিন কোন সমস্যা হয় নি।কিছুদিন হল খাদান মালিক ও ম্যানেজারের কথা মত শাহহোসেনপুর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে জ্যোৎশ্রীরাম গ্রাম এলাকায় নৌকা নিয়ে দামোদর থেকে বালি তুলছিলাম। এদিন জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামের লোকজন নৌকাসহ ধরে আমাদের আটকে রাখে । বুদ্ধদের মাঝি এও বলেন,খাদান মালিক ও ম্যানেজার পাণ্ডব বাবু আমাদের ফাঁসিয়ে দিয়ে এখন নিজেরা দায় ঝেড়ে ফেলছে।
শাহহোশেনপুরে খাদানের ম্যানেজার জয়ন্ত প্রধান ওরফে পাণ্ডব বাবু এদিন সব অভিযোগ অস্বীকার করে এই খবর ধামাচাপা দেবার জন্য জামালপুরের সাংবাদিকের অফিসে এসে অনুরোধ করেন। কিন্তু সেই অনুরোধ প্রত্যাখাত হওয়ার পর পাল্টা চাল চেলে ঝানু পাণ্ডব বাবু বলেন,এদিন বেলা ৯টার পর নৌকা ও নৌকার লেবারদের আটকে রেখে জৌৎৎশ্রীরাম গ্রামের চিন্ময় সরকার আমায় ডেকে পাঠায় । দুপুরে আমি সেখানে গলে চিন্ময় আমার কাছে ৩ লক্ষ টাকা এবং তিন গাড়ি বালি দাবি কর। সেই দাবি আমি না মানার পর জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামের যুবকরা জামালপুর থানায় খবর দেয় । পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে নৌকাগুলি আটকে রাখে
তবে পাণ্ডব বাবু স্বীকার করো নিয়েছেন তাঁর মালিক জয়দেব গড়াংয়ের খাদান শাহহোশেনপুরে । সেখান সেখে জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার । একাধীক নৌকা নিয়ে জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামে বালি তুলতে যাওয়া লোকজনের বিষয়ে প্রথমে দায় ঝেড়ে ফেলেন পাণ্ডব বাবু । পরে যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামের লোকজন নৌকা সহ নৌকা বাহিনীকে আটকানোর পর আপনি কোন দায়ে সেখানে গেলেন?দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে যাবার পরেও তিন লক্ষ টাকা তোলা চাওয়া নিয়ে থানায় অভিযোগ জানালেন না কেন?এইসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে না পেরে পাণ্ডব বাবু কার্যত পলায়ন করেন। আর জয়দেব গড়াং তো সমস্ত দায় ঝেড়ে ফেলে বলেন ,কে কোথায় বালি কাটতে গিয়ে ধরা পড়েছে তা আমার জানা নেই ।
তবে কিছু লোক এদিন আমার শাহহোশেনপুরের খাদানের ঘাট থেকে নৌকা তুলে নিয়ে গেছে বলে বেলা ১০ নাগাদ আমার কাছে খবর আসে। বাকি কি ঘটনা তা আমার জানানেই । ম্যানেজারকে
ঘটনা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। মানেজার বলেছিল জ্যোৎশ্রীরাম গ্রামের কয়েকজন তাদের দাবির কথা ম্যানেজারকে নাকি জানিয়েছে। নৌকা তুলে নিয়ে যাওয়া ও পরে অনৈতিক দাবি করা নিয়ে থানায় কি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন?
উত্তরে সজল বাবু জবাব,না জানানো হয়নি।
জামালপুর থানার পুলিশ কর্তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন,দামোদর থেকে বালি তুলতে গিয়ে ধরা পড়া তিনটি নৌকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মামলা রুজু হয়েছে । এই সংক্রান্ত ঘটনায় কেউ কারুর কাছে মোটা টাকার দাবি করেছে এমন কোন অভিযোগ থানায় জমা পড়ে নি বলে পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন।।