প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ মার্চ : দলের প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের নাম ঘোষনার সাথে সাথেই পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন বিধানসভা এলাকায় বিজেপি শিবিরে ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে । শুক্রবার সকাল থেকেই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ দেখাযায় বর্ধমান ,মেমারি,খণ্ডঘোষ পূর্বস্থলী,মন্তেশ্বর ও কালনা বিধানসভা এলাকায়। কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে এদিন পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি কর্মীরা আবার কোথাও বিজেপি কর্মীরা তাঁদের পার্টি অফিসেই তালা মেরে দিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়। ভোটের মুখে প্রার্থী নিয়ে বিজেপি শিবিরে ক্ষোভ বিক্ষোভ চরমে ওঠায় উৎফুল্ল তৃণমূল শিবির।যদিও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি ক্ষোভ বিক্ষোভ সাময়িক। দলের কর্মীরা দলের স্বার্থেই সবকিছু ভুলে একসাথে ভোটের লড়াইয়ে নেমে পড়বে।
বিজেপি নেতৃত্ব পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভায় প্রার্থী করেছেন বিজ্ঞানী গোবর্ধন দাসকে । কিন্তু দলের কর্মীরা তাঁকে মেনে না নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধেই বিষ্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন ।বৃহস্পতিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও
একটি ভিডিও ভাইরাল হয় । সেই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেদেন পূর্বস্থলী বিধানসভারই বিজেপি কর্মী রানা সিনহা । এদিন বেলায় রানা সিনহার অনুগামীরা পোস্টার হাতে নিয়ে প্রার্থী গোবর্ধন দাসের বাড়ির সামনে হাজির হয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেন। পরে পথে নেমেও তারা বিক্ষোভ দেখায় ।প্রার্থী বদলের দাবিতে কালনা-কাটোয়া এসটিকেকে রোডে ছাতনী মোড়ে রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে তারা বিক্ষোভে সামিল হয় ।বিক্ষোভ কারীরা দাবি তোলেন গোবর্ধন দাসকে প্রার্থী হিসাবে তারা মানবেন না । এলাকার মানুষের সুখে দুঃখে যিনি পাশে থাকেন এমন ব্যক্তিকেই প্রার্থী করতে হবে বলে তারা দাবি তুলেছেন । দল এই দাবি না মানলে রানা সিনহা কে পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা আশনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করাণো হবে বলে তাঁর অনুগামীরা এদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন । রানা সিনহা এদিন অভিযোগে বলেন,“দল পুরোনো বিজেপি কর্মীদের এখন মান্যতা দিচ্ছে না।গোবর্ধন দাস টাকার বিনিময়ে এখানে টিকিট নিয়ে ক্ষমতা দেখাতে চাইছেন।এই প্রার্থীকে সরানো না সরালে তিনি নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়বেন“।
পূর্বস্থলীর পাশাপাশি মন্তেশ্বর বিধানসভাতেই বিজেপি শিবিরে ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়িয়েছে । এই বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী করেছে সদ্য তৃণমূল ত্যাগী বিধায়ক সৈকত পাঁজাকে । মন্তেশ্বরের আদি বিজেপি কর্মীরা তাঁকে মেনে নিতে পারছেন না। সেই ক্ষোভ এদিন আছড়ে পড়ে মন্তেশ্বরের বিজেপি কার্যালয়ে। বিক্ষুব্ধরা বিজেপি পার্টি অফিসের সামনে প্রার্থী বদলের দাবিতে শ্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখায় । পরে তারা বিজেপি পার্টি অফিসে তালাও মেরে দেন।একই বিধানসভার সাতগাছিয়ায় থাকা বিজেপির পার্টি অফিসেও দুপুর থেকে তালা পড়ে যায় । এই বিষয়ে বিজেপি নেতা বিশ্বজিৎ পোদ্দার বলেন,‘প্রার্থী নিয়ে কিছু কর্মী সমর্থকদের ক্ষোভ রয়েছে। তাদের আমরা বোঝাচ্ছি। ক্ষোভ বিক্ষোভ ভুলে দলের স্বার্থে সবাই ভোটের লড়াইয়ে নেমে পড়বেন বলেই আমরা মনে করছি । কারণ বাংলায় বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন বিজেপি কর্মীদের মূল লক্ষ ।’ বিজেপি প্রার্থী সৈকত পাঁজা ক্ষোভ বিক্ষোভের বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান নি । কিছুদিন আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুকে প্রার্থী করা নিয়েও বিজেপি শিবিরে ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়িয়েছে ।
প্রতিবাদে বিজেপি কর্মীরা বৃহস্পতিবার রাতে কালনার উত্তর গোয়ারা এলাকায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান।শুক্রবার দেখাযায় বিজেপি কর্মীরাই তৃণমূলের পতাকা কাঁধে তুলে নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী দেবপ্রসাদ বাগের সমর্থনে প্রচার নেমে পড়েন।এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন , “তৃণমূলের গদ্দাররাই এখন বিজেপির সম্পদ হয়েগিয়েছে । দলের দুর্দিনের নেতা কর্মীদের আর কোন গুরুত্ব দিতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব ।সেটা বুঝে গিয়ে বিজেপি দলের পুরানো নেতা কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই ভরসা রাখছেন“ । বিজেপির জেলা সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ জানিয়েচেন , “এই ক্ষোভ বেশিদিনের জন্য নয়। । খুব শিগ্রি সব মিটে যাবে । দলের সকলেই একসাথে কাজ করবেন “।
একই ভাবে বর্ধমান দক্ষিন বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী সন্দীপ নন্দী ,মেমারি বিধানসভার প্রার্থী ভীষ্মদেব ভট্টাচার্য্য এবং খণ্ডঘোষ বিধান সভার বিজেপি প্রার্থী বিজন মণ্ডলকে মেনে নিতে পারেন নি দলের বেশকিছু কর্মী ও সমর্থক ।বিজন মণ্ডলকে বহিরাগত আখ্যা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মহিলা সংক্রান্ত নানা অভিযোগ ব্যক্ত করছে দলেরই একটা অংশ ।
সন্দীপ নন্দীর বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী আবার রামবিলাশ পাশোয়ানের লোকজনশক্তি পার্টিতে যোগ দিয়ে সন্দীপ নন্দীকে টাইট দেওয়ার কৌশল নিয়েছে । এদিনই বর্ধমান সদর জেলার বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি শেখ সামিন তাঁর অনুগামীদের িয়ে লোক জনশক্তি পার্টিতে যোগ দেন ।ভীষ্মদেব ভট্টাচার্য্য কে মেনে নিতে না পেরে মেমারির বেশ কিছু বিজেপি নেতা কর্মী ও সমর্থক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের জন্য তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন । মেমারির তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মধুসূদন ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন ,বিজেপি নেতা কর্মী ও সমর্থকদের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান সময়ের অপেক্ষা মাত্র । যদিও তিন বিজেপি প্রার্থী এই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চান নি । তাঁরা শুধু বলেন , তৃণমূল যে খেলাই খেলুক তাতে লাভ কিছু করতে পারবে না । দলের অনুগতরা বিজেপির হয়েই ভোটে লড়বে ।।