জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১৭ মার্চ : পূর্বসুরিদের পথ অনুসরণ করে রাজ্যের বাইরে ক্রীড়া জগতে আবার বাংলার মুখ উজ্জ্বল করলেন তিন কন্যা – রিমিল হেমব্রম, অদিতি জয়সওয়াল ও রুমা বিশ্বাস । গত ৯ ই মার্চ থেকে গুজরাটে পুলিশ আর্চারি গ্রাউন্ডে শুরু হয়েছে এনটিপিসি সিনিয়র ন্যাশনাল আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা। চলবে ১৮ মার্চ পর্যন্ত । বেঙ্গল আর্চারি অ্যাকাডেমির ঝাড়গ্রামের কোচ শেখর লাহুরীর তত্ত্বাবধানে বাংলা থেকে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম-২ নং ব্লকের কোটা অঞ্চলের খুলেপাড়া গ্রামের মেয়ে রিমিল হেমব্রম, কলকাতার অদিতি জয়সওয়াল ও মালদহর রুমা বিশ্বাস এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। সিনিয়র আর্চারি বিভাগের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ১৩ ই ও ১৪ ই মার্চ। পূর্বসুরিদের পথ অনুসরণ করে সেখানে বাংলার সম্মান রক্ষা করেন এই তিন কন্যা। দলগতভাবে তারা সোনার মেডেল এবং রিমিল ব্যক্তিগত মহিলা বিভাগে ব্রোঞ্জ জয় করে দেশের বুকে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেন ।
প্রসঙ্গত,আদিবাসী কন্যা রিমিল ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আয়োজিত জুনিয়র,সাব জুনিয়র ও সিনিয়র বিভাগে অংশগ্রহণ করে এবং বিভিন্ন সময় সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জ পদক জয় করে। যদিও সাই-এর তত্ত্বাবধানে ঐ সময় সে বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত তীরন্দাজি প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও পরবর্তীকালে আর্থিক কারণে ও কোনো মহল থেকে কোনোরূপ সাহায্য না পেয়ে অনুশীলন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এক প্রতিভার যখন অকাল মৃত্যু ঘটতে চলেছে ঠিক তখনই তার সামনে অপ্রত্যাশিতভাবে আবার সুযোগ এসে যায়। ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে জোটে আর্থিক সাহায্য। নিবিড় অনুশীলনে নিজেকে নিমজ্জিত করেন তিনি । তারই ফলশ্রুতি হিসাবে ২০২২ সালে স্টেট মিট চ্যাম্পিয়ন হয়, ২০২৩ সালের চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জয় এবং এই মার্চে ন্যাশনালে অংশগ্রহণ করে ব্রোঞ্জ ও সোনা জয় করে সবার সামনে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরে সে । তার এই সাফল্যে খুব খুশি পূর্ব বর্ধমান তথা মেমারির ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ । প্রত্যেকেই আগামী দিনে তার আরও সাফল্য কামনা করে। জেলার গর্ব রিমিলের দিকে সমস্ত রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তারা স্থানীয় প্রশাসন তথা বিধায়কের কাছে আবেদন করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রিমিল মেমারি সংহতিপল্লী সানরাইজ ক্লাবের সহযোগিতায় ও মেমারি-১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সনাতন হেমব্রমের উদ্যোগে মেমারি বিরসা মুন্ডা আর্চারি একাডেমির কোচ হিসেবে কাজ করছেন । আগামী দিনে তার হাত ধরে হয়তো আরও অনেক রিমিল তৈরি হবে।
তার সাফল্যের জন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রিমিল বললেন,একটা সময় ভেবেছিলাম এই জীবনে হয়তো আর আর্চারিতে অংশগ্রহণ করতে পারব না। তুলে রাখতে হবে নিজের সাধের তির ধনুক । ঠিক সেই সময় আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাদের জন্যই আবার আমি মাঠে নামার সুযোগ পেলাম। সরকারের কাছে তার অনুরোধ, আমার মত আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল ও যোগ্য ক্রীড়াবিদদের দিকে যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে উঠে আসবে আরও অনেক প্রতিভা যারা বাংলার মুখ উজ্জ্বল করবে ।।