প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ মার্চ : উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম দিনের পরীক্ষা দিয়ে ফেরার সময় দুর্ঘটনায় ছাগলের মৃত্যুর দৃশ্য দেখার পর থেকেই মানসিক চাপে ভুগছিল ছাত্রী । সেই চাপের মধ্যেই বৃহস্পতিবার ইংরেজি পরীক্ষা দিতে দিতে ওই ছাত্রী পরীক্ষাকেন্দ্রেই জ্ঞান হারালেন । এমন ঘটনায় এদিন ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার বেরুগ্রাম আচার্য গিরিশচন্দ্র বসু বিদ্যাপীঠে । জ্ঞান হারানো পরীক্ষার্থী পল্লবী চট্টোপাধ্যায়কে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখানে বেশ কিছুক্ষন চিকিৎসা চলার পর নাকে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো অবস্থায় হাসপাতালের বেড়ে বসেই ওই ছাত্রী পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেন ।কিন্তু পরীক্ষা দেওয়া সম্পূর্ণ করতে না পেরে ওই ছাত্রী ফের সেখানে জ্ঞান হারলে পরিবারের লোকজন তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। বাকি পরীক্ষা গুলি ছাত্রীটি আর দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ।
প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায় জানা গিয়েছে,পল্লবী চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি জামালপুর থানার বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের জামুদহ গ্রামে । সে স্থানীয় চক্ষণজাদি জিএম ইনস্টিটিউশনের ছাত্রী । পরীক্ষাকেন্দ্র বেরুগ্রাম আচার্য গিরিশচন্দ্র বসু বিদ্যাপীঠ থেকেই সে এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে । গত মঙ্গলবার পল্লবী এই কেন্দ্রে বসে বাংলা পরীক্ষা ঠিকঠাক ভাবেই দিয়েছিল । কিন্তু ইংরাজিতে তার মেধা থাকা সত্ত্বেও জ্ঞান হারানোর কারণে এদিন তাঁর ইংরাজি পরীক্ষা দেওয়া কর্যত ভণ্ডুল হয়ে যায় ।
শিক্ষক অখিল মজুমদারের কথায়, ইংরাজি পরীক্ষা দিতে শুরু করার পর ঘন্টাখানেক কাটতে না কাটতে ছাত্রী পরীক্ষাকেন্দ্রেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরীক্ষা কেন্দ্রে থাকা আশা কর্মীরা, প্রাথমিক শুশ্রুষা করার পরেও ছাত্রের জ্ঞান না ফেরায় ছাত্রীকে নিয়ে দ্রুত জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে আসেন । সেখানে জরুরী ভিত্তিতে ছাত্রীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় । কিছুক্ষণ চিকিৎসা চলার পর ছাত্রীর জ্ঞান ফিরলে হাসপাতালের বেডে বসে ছাত্রী যাতে পরীক্ষা দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়। শেষ পর্যন্ত অক্সিজেন মাস্ক মুখে লাগানো অবস্থায় পল্লবী ফের হাসপাতালে বেডে বসেই উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দেওয়া শুরু করে । চিকিৎসকরা জানান,
ছাত্রীর শ্বাসকষ্ট থাকায় অক্সিজেন মাস্ক নিয়েই ছাত্রী যাতে পরীক্ষা দিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হয়।অতিরিক্ত টেনশন ছাত্রীর অসুস্থতার কারণ বলে প্রথমিক অনুমান চিকিৎসকদের ।
ছাত্রীর বাবা পলাশ চট্টৌপাধ্যায় বলেন,আমার মেয়ে পল্লবী নিউরোর পেশেন্ট । কোন রকম মানসিক চাপ একদম নিতে পারে না । বেশ কিছুদিন ধরে তার চিকিৎসা চলছে । এমন অবস্থার মধ্যেই মঙ্গলবার আমার মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা দিতে যায় । ওই দিন পরীক্ষা দিয়ে টোটোয় চেপে ফেরার সময় টোটোর চাকায় পিষ্ট হয়ে একটি ছাগলের মৃত্যুর ঘটনা দেখার পর থেকেই ভয়ে আতঙ্কে পল্লবীর মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি হয় । সেই অবস্থার মধ্যেই আমার মেয়ে এদিন উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরাজি পরীক্ষা দিতে যায়। পরীক্ষা কেন্দ্রেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জামালপুর হাসপাতালে চিকিৎসা চলার পর জ্ঞান ফিরলে সেখানে নাকে অক্সিজেন মাস্ক নিয়ে ফের পরীক্ষা দিতে বসে । কিন্তু বেশীক্ষণ পরীক্ষা দিতে পারে না । ফের জ্ঞান হারায় । এর পর মেয়েকে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন বলে পলাল বাবু জানিয়েছেন। বাকি দিনগুলির পরীক্ষা পল্লবী আর দিতে পারবে কিনা উৎকন্ঠায় রয়েছে ছাত্রীর পরিবার ।।