প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১১ মার্চ : ধর্মঘটে সামিল হওয়ার জন্য শুক্রবার স্কুল বন্ধ রাখার ফল স্বরূপ শনিবার পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুলের বাইরে গাছতলায় কাটাতে হল শিক্ষকদের। এদিন এমনই দৃশ্য দেখাযায় বর্ধমানের মির্জাপুরের নরেন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তবুও স্কুল গেটের তালা খোলেননি ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা । এর জেরে শুক্রবারের পর শনিবারও বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন বন্ধ থাকার পাশাপাশি মিডডে মিল পাওয়া থেকেও বঞ্চিল হল পড়ুয়ারা । শুধু নরেন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়,এদিন একই রকম ঘটনা ঘটেছে পূর্বস্থলীর হাটসিমলা জুনিয়র হাই স্কুলে । গ্রামবাসীদের পাশাপাশি এলাকার তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির কর্ম্যাধ্যক্ষ বিকাশ বসাক এদিন স্কুলে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। এইসব নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে নাদনঘাট থানার পুলিশ বিদ্যালয়ে পৌছে পরিস্থিতি সামাল দেয় ।
নরেন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সংখ্যা ২৫০ জন। এদের জন্য রয়েছেন সাত জন শিক্ষক ও শিক্ষিকা । ডিএ সহ একাধিক দাবিতে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ শুক্রবার ধর্মঘটের ডাক দেয়। সেই ডাকে
সাড়া দিয়ে ওইদিন এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে গরহাজির থাকলেন । তালা বন্ধ থাকে বিদ্যালয়ের গেট । আর এদিন শিক্ষক শিক্ষিকারা
সাড়ে ১০ টার মধ্যে বিদ্যালয়ে হাজির হলেও তারা দেখেন স্কুলের গেটে ডবল তালা লাগানো রয়েছে ।
খোঁজ নিয়ে শিক্ষকরা জানতে পারেন শুক্রবার তাঁরা কেউ স্কুলে না আসায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা বিদ্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় গৃহে আর ঢুকতে না পেরে বাইরে গাছতলাতেই কিছুক্ষণ পড়ুয়াদের ক্লাস নেন বলে শিক্ষকরা দাবি করেছেন ।
ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বাবু হাজরা,ললিতমোহন ঘোষ সহ আরো অনেকে এদিন বলেন,শুক্রবার বিদ্যালয় সব বন্ধ থাকায় কোনোরকম পঠনপাঠন হয়নি। এমনকি পড়ুয়াদের মিডডে মিলও পায়নি । সরকারি প্রতিষ্ঠান এইভাবে কেন বন্ধ করা হল ? ইচ্ছা মত এমনটা করা যায় না ।
দেখুন ভিডিও 👇
গ্রামবাসীদের আরো অভিযোগ ছুটির দিন না হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রী ও মিড ডে মিলের কর্মীদের শুক্রবার স্কুলে আসতে বারণ করা হয়েছিল । একজন শিক্ষক এসেও যদি শুক্রবার পড়ুয়াদের মিডডে মিল খাওয়াতো তাহলে এর কোনো প্রভাব পড়ত না। এর সাথে কোনো রাজনীতির যোগ নেই, এটা গ্রামের মানুষের ক্ষোভএই সবের বিহিত চেয়েই বিদ্যালয়ের গেটে তালা উপর তালা ঝোলানো হয়েছে ।’ ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে আলোচনার পর স্কুল খুলে যাবে বলে অভিভাবকরা মন্তব্য করেছেন। শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকা ও পড়ুয়াদের মিডডে মিল না পাওয়া নিয়ে এদিন পূর্বস্থলীর হাটসিমলা জুনিয়র হাই স্কুলেগিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন এলাকাবাসীরা ।
যদিও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষে সুব্রত ঘোষ বলেন ,“বিদ্যালয়ের গেটে কে বা কারা তালা লাগিয়েছে তা আমরা জানি না। আমরা বিদ্যালয়ে এসে গেটে তালা লাগানো রয়েছে দেখতে পাই । বিদ্যালয় গৃহে ঢুকতে না পেরে আমরা ঘটনা বৃত্তান্ত ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি ।’ অপর দিকে হাটসিমলা জুনিয়র হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তপন মুড়া স্বীকার করে নেন,ডিএর দাবিতে ডাকা ধর্মঘট সফল করার জন্য তাঁরা স্কুলে হাজির হইনি । স্কুল বন্ধ রাখা হবে এই বিষয়ে তাঁরা কোন পড়ুয়াকেই কিছু জানাননি ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধূসুদন ভট্টাচার্য জানান,বিষয়টি খুবই উদ্বেগের । শুক্রবার যাঁরা তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেছে সেটা তাঁরা করতেই পারেন । কিন্তু পদ্ধতিটা না মেনে চললে সবার ক্ষতি । শুক্রবার মিডডে মিল বন্ধ ,আজও বন্ধ, পঠনপাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হলো।শুক্রবার যে প্রতিবাদ হয়েছে এবং তার পাল্টা এদিন যে প্রতিবাদ কোনটাই সমিচিন হয়নি। আমি ডিআই সাহেবকে বিষয়টি দেখতে বলেছি ।।