এইদিন ওয়েবডেস্ক,ওয়াশিংটন,০৯ মার্চ : বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর ঘটে চলা একের পর এক মুসলিম কট্টরপন্থীদের হামলা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিবৌখ্রী ঐক্য পরিষদকে সেভাবে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি । বাংলাদেশের হিন্দুদের অবর্ণনীয় দূর্দশা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার সূযোগ থাকলেও এই বিষয়ে তাঁদের এযাবৎ উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ । সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হিবৌখ্রী ঐক্য পরিষদের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে । কিন্তু এবার এই কমিটি গঠনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন বাংলাদেশ আমেরিকান রিপাবলিকান পার্টির কর্মকর্তা বিদ্যুৎ সরকার । সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তিনি । সেখানে খোলাখুলি মত প্রকাশ করেছে বর্ষীয়ান ওই মার্কিন হিন্দু নেতা । নিচে তাঁর সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল :-
সাক্ষাৎকারে বিদ্যুৎ সরকার জানান যুক্তরাস্ট্র হিবৌখ্রী ঐক্য পরিষদের এক অংশকে আবারও নতুন কলেবরে নবীন প্রবীন নতুন কিছু মুখ নিয়ে নববসন্তের সুচনার আগে একই পুরনো কমিটিকে নতুন করে বর্ধিত করা হয়েছে গতি আনার জন্য । নবীন প্রবীনদের সংযুক্তকরন যা দেরীতে হলেও তারা যে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুভব করেছে,এজন্য তিনি তাঁদের প্রশংসা করেন ও সাধুবাদ জানান।
তবে তাঁর প্রশ্ন যে, বাংলাদেশ হিবৌখ্রী ঐক্য পরিষদ অনুমোদিত কমিটিটি আসলে হল বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ । যেটি অ্যাটর্নি অশোক কর্মকারের নিয়ন্ত্রনে । কেন্দ্রের অনুমোদিত হিসাবে তিনিই মূলত সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন । শীতাংশু গুহ, দ্বীজেন ভট্টাচার্য্য, নব্যেন্দু দত্তের নেতৃত্বে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইউনিটি কাউন্সিল আছে। তাহলে কি উদ্দেশ্যে এই ইউনিটি কাউন্সিল আবার পরিবর্ধন করা হয়েছে ? তারা কি করবে ? তাদের সংগঠনের অতীত ও বর্তমানের নীতিতে পার্থক্যটা কি ?
তিনি বলেন,প্রবাসীদের ওনারা ব্যাখ্যা করে বলুন অশোক কর্মকারের ঐক্য পরিষদ ও এই এক্সটেন্ডেট ইউনিটি কাউন্সিল এর মধ্যে মুল পার্থক্য কি ? আরো বড় প্রশ্ন অনুমোদিত ও অননুমোদিত এ দুটি দলের উপর কতজনের বিশ্বাস,সমর্থন,লোকবল তাদের সঙ্গে আছে ? জনগন কি তাদেরকে সংখ্যালঘু আন্দোলন পরিচালনার জন্য বিশ্বাস করে? ১৯৮৯ সালের হিবৌ খ্রীস্টান ইউনিটি কাউন্সিল আর এখনকার হিবৌখ্রী কি একই অবস্থানে আছে ? তাঁর কথায়,আগে যখন কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরদের এনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পক্ষে দাবীদাওয়া ও বক্তব্য পেশ করে তাদের সম্মানে অর্থায়ন করা হত, তখন মানুষকে জায়গা দেওয়ার মতো নিউইয়র্কের বড় বড় হল ঘরগুলিতে তিল জায়গা থাকতো না । তখন জনগন তাদেরকে বিশ্বাস করে মুক্ত হস্তে দান করেছিল ।
তাঁর প্রশ্ন,গত বছর ১৩ ই অক্টোবর দুর্গাপুজার ঘটনার পরে কোন কংগ্রেসম্যান বা সিনেটরদের দিয়ে কংগ্রেসে কোন নিন্দা প্রস্তাব ওঠাতে পেরেছি ? এই বিষয়ে কি ইউনিটি কাউন্সিলে কোন উদ্যোগ বা কোন প্রকার পদক্ষেপ নিয়েছিল ? হিন্দু ডেমোক্রেটিক নেতাসহ দুই একজনের একক প্রচেষ্টাকে বাদ দিলে এই লোক দেখানো আন্দোলনের ফলাফল কার্যত শূণ্য । তাঁর কথায়, আমেরিকাতে বিনা পয়সায় কোন কিছু হয় না । গিভ এন্ড টেক-এর বিষয়টি এখানে জড়িয়ে আছে । অর্থ ঢেলে কংগ্রেসম্যান সিনেটর এবং প্রথম সারির রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের সংযুক্ত করে দাবী আদায় করতে হয়, বিনাপয়সায় কোনো দাবী আদায় করা যায় না, এমনকি চার্চ বা নন প্রফিট সংস্থাগুলিতেও যারা কাজ করেন তাদেরকেও টাকা দিয়ে কাজ করানো হয় । এটা বাংলাদেশ নয়,এটা আমেরিকা, সমাজসেবাও বিনামুল্যে হয় না । পকেটে হাত দেবে না, রাস্তায় দাঁড়াবে না, দু কলম লিখে কি দাবী আদায় হয়ে যাবে ? চেষ্টা, পরিশ্রমও অর্থ ব্যয় না করে কিছুই অর্জন করা যাবে না।
বিদ্যুৎ সরকার আরো বলেন,সংখ্যালঘুদের মুক্তির জন্য যে কাজ গুলি করা দরকার সেই কাজগুলি করার জন্য দেশে ও প্রবাসে কোন দলই সে পথে হাঁটেনা । তারা লোক দেখানোর জন্য দেখনদারী সংঘটন বানিয়ে রেখেছে । কারন সংখ্যালঘুদের মুক্তির জন্য যে প্রধান ৩ টি দাবি, তা নিয়ে তাদের কোন দলই সহমত নয়।
তিনি সংখ্যালঘুদের দাবিগুলি উল্লেখ করে বলেন
প্রথমত, সংখ্যালঘুদের স্বীকৃতি । জাতিসংঘের সনদ আনুযায়ী ১০ শতাংশের এর নীচে যে কোন দেশে সংখ্যালঘুদের স্বীকৃতি জাতিসংঘ সনদে আছে । জাতিসংঘের ঐ নিয়ম মানার অঙ্গীকার করে বাংলাদেশ এই চার্টারে সাক্ষর করেছে । সংখ্যালঘুদের অস্তিত্বের নিরাপত্তা বিধান করতে সংখ্যালঘু স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা আছে। সংখ্যালঘু স্বীকৃতি হলে কি কি অধিকার পাবো তার সূযোগ সুবিধা, অল্প কথায় এখানে বলা যাবে না ।
দ্বিতীয়ত,সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রতিটা জেলায় একজন করে প্রতিনিধি অবশ্যই পার্লামেন্টে থাকতে হবে । দুই তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে পার্লামেন্টে আসা আওয়ামী লীগের পক্ষে এই প্রক্রিয়াটি এই মুহুর্তে পার্লামেন্টে তোলা, পাশ করানো বা আইনে পরিনত করা অসম্ভব নয় । সকল সংখ্যালঘু জন প্রতিনিধিগন নির্বাচিত বা সংরক্ষিত হিসাবে হতে পারে যেমন করে মহিলা আসনগুলি সংবিধানে সংরক্ষিত করা হয়েছে। একইভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ ,খ্রীস্টান,কাদিয়ানী আহমেদিয়া,আদিবাসী গারো, হাজং, চাকমা, সাওতাল, মুরং,মনিপুরি, সবারই আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।
মানবাধিকার ও সংখ্যালঘুদের সম অধিকারের এই আইন যদি পাশ করায় তাহলে বর্তমান সরকারকে নিয়ে সারা বিশ্বে ধন্য ধন্য বয়ে যাবে, এমনকি সরকারের প্রধানকে নোবেল শান্তি পুরুস্কার দিয়েও সম্মানিত করা হতে পারে । তখন আমেরিকা ইউরোপ ভারত সহ সব দেশ মানবাধিকার ও সংখ্যালঘুদের সম অধিকারের এই আইন যদি পাশ করায় তাহলে বর্তমান সরকার সারা বিশ্বে নজির সৃষ্টি করবে । এমনকি সরকারের প্রধানের নোবেল শান্তি পুরুস্কার পাওয়া কার্যত নিশ্চিত হয়ে যাবে । তখন আমেরিকা ইউরোপ ভারত সহ সব দেশ এই সরকারকে পুনঃনির্বাচিত করার জন্য সর্বাত্মক সমর্থন, সাহায্য ও সহযোগিতা করবে, এটাও নিশ্চিত । সাথে সাথে সংখ্যালঘুদের সমস্ত সমস্যা সমাধান এর একটি প্রধান বাধা অতিক্রম করা যাবে। এমনকি এটি একটি উদাহরণ হিসাবে সারা বিশ্বে নজির স্থাপিত হবে। এই একটি সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে পরবর্তীতে অন্যান্য সমস্যাগুলিরও সমাধানের পথ খুলে যাবে ।
তৃতীয়ত,সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা বিধান করতে স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনের ভার সংখ্যালঘুর হাতে দিতে হবে, এছাড়া অন্যান্য স্থানে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব আনুপাতিক হারে নিশ্চিত করতে হবে । তাঁর মতে, এই অতি সহজ সমাধানটি নিয়ে সংখ্যালঘুদের কোন দল আন্দোলন করে না। তাহলে তাদের মধ্যে কেবল অন্তকলহ, আভ্যন্তরীণ কোন্দল চলছে । মাঝে মাঝে কেবল ৭২-এর সংবিধান ফেরত চাই,রাস্ট্র ধর্ম বাতিল চাই এই বলে নির্বাচন আসার আগে সরকারী প্রেসক্রিপশন মতো মাঠে নামে। ৭২-এর সংবিধানেও নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে, সে আলোকে অবলা নারীদের জন্য সংরক্ষিত মহিলা আসন বরাদ্দ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎবাবু বলেন,বর্তমান প্রেক্ষাপটে অবলা নারীদের চেয়েও সংখ্যালঘুদের করুন অবস্থা । নারীদের থেকেও দুর্বল সংখ্যালঘুদের জন্য কেন সংরক্ষিত আসন বরাদ্ধ করা ও এর জন্য আন্দোলন করা যাবে না? সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থা ও সমস্যার সমাধান রাষ্ট্রধর্ম বহাল রেখে ও ৭২-এর সংবিধানের অবর্তমানেও প্রচলিত আইনের মাধ্যমেও করা যায় যদি সরকারের সদিচ্ছা ও সংখ্যালঘু দলগুলির আন্দোলনের গতি তীব্রতর করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থে দেশ ও বিদেশের হিন্দুত্বপন্থী দল বা গোষ্ঠীগুলির আন্দোলনে অনীহা দেখে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ সরকার ।।