প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ মার্চ : হাইকোর্টে হওয়া মামলার নিস্পত্তি এখনও হয় নি। তা সত্ত্বেও লিক্যুইডেশনে চলে যাওয়া বর্ধমানের প্রণবানন্দ সমবায় ব্যাংকের অফিস দখল করে সেখানে তৈরি হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়। প্রায় ২৭ বছর ধরে তালা বন্ধ হয়ে থাকা এই সমবায় ব্যাঙ্কের দরজার তালা ভেঙে ঢুকে নির্মাণকাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে ক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্থ আমানতকারীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।সমবায় দপ্তর অবশ্য এ ব্যাপারে নীরব রয়েছে। আধিকারিকরা এনিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
আমানতকারীদের কথা জানা গিয়েছে,জমা রাখা টাকা ফেরত দিতে না পারায় ১৯৯৬ সালে বন্ধ হয়ে যায় বর্ধমানের প্রণবানন্দ সমবায় ব্যাংক।তালা ঝুলে যায় সংস্থার অফিসগুলিতে। ব্যাঙ্কের উচ্চ পদাধিকারীরা আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করে গা-ঢাকা দেন বলে অভিযোগ ওঠে। টাকা ফেরত না পেয়ে আন্দোলনে নামেন ব্যাংকের এজেন্ট ও আমানতকারীরা। এনিয়ে রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। রাজ্য সমবায় দপ্তর এনিয়ে তদন্তে নামে। ব্যাংকের পরিচালন সমিতি পদত্যাগ করে। সমবায় দপ্তরের জয়েন্ট রেজিস্টার পদমর্যাদার অফিসারকে ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে বসানো হয়।তারপর দীর্ঘদিন না হওয়া অডিট চালু হয়।তখ বেশকিছু অনিয়ম ধরা পড়লে। রিজার্ভ ব্যাংকও পৃথক তদন্তে নামে। তদন্তে আরও বেশকিছু গরমিল ধরাপড়ায় রিজার্ভ ব্যাংক প্রণবানন্দ সমবায় ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করে।একই সময়ে এই ব্যাংকের প্রশাসক আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য দুর্নীতিদমন শাখা তদন্তে নামে। বেশ কয়েকজন আধিকারিক গ্রেপ্তারও হন। পরে সমবায় দপ্তর ব্যাংকটিকে লিক্যুইডেশনে পাঠায়।
শুধু লিক্যুইডেশনে পাঠানোই নয় ,সমবায় দপ্তরের ইন্সপেক্টর ফেলারাম মুখোপাধ্যায়কে লিক্যুইডেটর হিসেবে বসানো হয়।এমনকি এনিয়ে কলকাতা হাইকোের্ট মামলা হয়।সেই মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। শহরের খোসবাগান এলাকায় ব্যাংকের হেড অফিসে লিক্যুইডেটারের নির্দেশে তালা ঝোলানো হয়।কিন্তু,প্রায় ২৬ বছর বাদে রাতের অন্ধকারে সেই তালা ভেঙে সেখানে পার্টি অফিস তৈরি করা হচ্ছে বলে প্রতারিত আমানতকারীদের অবিযোগ।তাঁদের বক্তব্য,কয়েক বছর আগেও বন্ধ অফিস দখল করে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। সেবার বিষয়টি সমবায় মন্ত্রীর গোচরে আনা হয়।মন্ত্রীর নির্দেশে তখনকার মত নির্মাণকাজ বন্ধ হয়।কিন্তু এখন পুণরার একই ঘটনা শুরু হলেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে সমবায় দপ্তর নীরব রয়েছে বলে প্রতারিত আমানতকারীদের অভিযোগ । তাঁদের বক্তব্য, লিক্যুইডেশনে চলে যাওয়া সম্পত্তি এভাবে দখল করা যায় না। এটা বেআইনি।এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের দাবী তারা করেছেন ।
এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপায়কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,এমন কোন ঘটনার কথা আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি।এইসব কোনভাবেই কাম্য নয়“।আপর দিকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন,“এই ঘটনার কথা আমার জানা নেই। এইটুকুই বলবো আদালতের নির্দেশ সবার মেনে চলা উচিৎ ।।