এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,১৪ মার্চ : সবেমাত্র সন্ধ্যা নেমেছে । প্রতিদিনের মত কাজ সেরে নিজেদের গাড়ি চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন চিকিৎসক দম্পতি । সেই সময় শহরের জনবহুল রাস্তায় তাঁদের গাড়ি আটকায় কয়েকজন দুষ্কৃতি । তারা চিকিৎসক দম্পতিকে গাড়ি থেকে বের করে বেদম মারধর শুরু করে দেয় । আশেপাশে ভিড় করেন পথচারী ও স্থানীয় মানুষজন । ছিল পুলিশও । কিন্তু ওই দম্পতিকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে সাধারন মানুষের সঙ্গে ওই ঘটনার ভিডিও নিজের মোবাইলে রেকর্ড করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মী । শনিবার সন্ধ্যায় চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে মালদা শহরের রাজ হোটেল মোড় এলাকায় । ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন মোহাম্মদ ওয়াসিমুল হক ও শেফালী সরকার নামে ওই চিকিৎসক দম্পতিকে উদ্ধার করে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন । আক্রান্তের তরফ থেকে এনিয়ে ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে । তবে রবিবার সকাল পর্যন্ত গ্রেফতারের কোনও খবর নেই বলে জানা গেছে । এদিকে কর্তব্যরত ওই পুলিশ কর্মীর এই ভূমিকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় ।
মালদা জেলার পরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত রয়েছেন মোহাম্মদ ওয়াসিমুল হক । শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ পরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কাজ শেষে চিকিৎসক ওয়াসিমুল ও তার স্ত্রী শেফালী সরকার মালদা শহরে পিরোজপুর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন । রাজ হোটেল মোড় এলাকায় তাঁদের গাড়ি আসতেই স্থানীয় কয়েকজন দুষ্কৃতী পথ আটকায় ।
অভিযোগ,ট্রাফিক সিগন্যালের পুলিশের সামনেই দুষ্কৃতিরা এই দম্পতিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি চিকিৎসকের স্ত্রীর শ্রীলতাহানি ও করে । পুলিশ ও সাধারণ মানুষের সামনে প্রায় মিনিট পনেরো ধরে চলে এই নারকীয় অত্যাচার । চিকিৎসক ও তার স্ত্রী রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে মাটিতে । কিন্তু তা সত্ত্বেও কর্তব্যরত পুলিশ কর্মী তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টাই করেননি । উলটে তিনি সমগ্র ঘটনার ভিডিও নিজের মোবাইলে রেকর্ড করে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতি মাসুম খান ও তার দলবল এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের । স্থানীয় বাসিন্দা আনিসুর রহমান জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই এ এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাসুম খান ও তার দলবল । এর পেছনে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতাদের মদদ রয়েছে । এলাকায় দুষ্কৃতী মূলক কাজ কর্ম থেকে শুরু করে মাদকদ্রব্য পাচার সমস্ত কিছুতেই মাসুম খানের নাম উঠে আসছে । তবে প্রতিবারই দুষ্কৃতী মূলক কাজকর্ম করার পর কোন এক অদৃশ্য কারণে ছাড়া পেয়ে যায় মাসুম খান সহ তার দলবল । তৃণমূল নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকায় পুলিশ তার টিকি ছুঁতে পারেনা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের ।
আক্রান্ত চিকিৎসক মোহাম্মদ ওয়াসিমুল হক বলেন, ‘পরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে মালদা শহরে ঢোকার সময় রাজ হোটেল মোড় এলাকায় কয়েকজন দুষ্কৃতী আমার গাড়ি আটকায় । কিছু বুঝে উঠার আগেই দুষ্কৃতীরা আমার স্ত্রীকে ধরে গাড়ির ভিতর থেকে টেনে বের করে । স্ত্রীকে আক্রান্ত হতে দেখে আমি বাঁচাতে যাই । তারপরেই ওরা আমাকে ও আমার স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করে । আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসে আমার ছোট ভাই । তাকেও বেধড়ক মারধর করে দুষ্কৃতিরা । আর এইসব ঘটনা ঘটে পুলিশের সামনেই । কিন্তু পুলিশ আমাদের বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করেনি । আমি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি ইংরেজবাজার থানায় । কিন্তু এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ ।’
এদিিিি
এদিকে ভরসন্ধ্যায় চিকিৎসক দম্পতি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অজয় গাঙ্গুলী । তিনি বলেন, ‘দুষ্কৃতীরাজ চলছে মালদায় । ভর সন্ধ্যায় মহিলার শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে । চিকিৎসক কে পেটানো হচ্ছে । আর এর পেছনে মদদ রয়েছে তৃণমূল নেতাদের । অবিলম্বে এই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার না করা হলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’
অন্যদিকে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র শুভময় বসু বলেন, ‘এই ঘটনার সাথে তৃণমূল নেতাদের কোনো সম্পর্ক নেই । চিকিৎসক দম্পতির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই । পুলিশ দুষ্কৃতিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করুক ।’।