শ্যামসুন্দর ঘোষ,পূর্বস্থলী(পূর্ব বর্ধমান),২১ ফেব্রুয়ারী : দীর্ঘ প্রায় ৬ দশক একসাথে পথচলা । জীবনের প্রতিটি ঘাত প্রতিঘাতে সহধর্মিণীকে সর্বদা পাশে পেয়েছিলেন । স্ত্রীর উৎসাহ আর সক্রিয় সহযোগিতায় প্রবল প্রতিকুলতাকে জয় করে সংসারটাকে খাড়া করেছেন । মানুষ করেছেন ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলেকে । ছেলেমেয়ে সকলেই আজ সংসারী । ফলে বার্ধক্যে স্ত্রীই হয়ে উঠেছিল একমাত্র অবলম্বন । সেই স্ত্রীর মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী-২ ব্লকের মেড়তলা পঞ্চায়েতের কামারডাঙ্গার বাসিন্দা শচীন রায় (৯০) । স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই বেশ কিছু দিন ধরে বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগছিলে । রবিবার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন শচীনবাবুর স্ত্রী ক্ষ্যান্তবালা রায় (৮২) । কিন্তু সেই শোক আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি । স্ত্রীর মৃত্যুর আট চল্লিশঘন্টা কাটতে না কাটতেই স্ত্রীর পথেরই পথিক হলেন ওই বৃদ্ধ । বৃদ্ধ দম্পতির অমর প্রেম দেখে অবিভূত এলাকার বাসিন্দারা । মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে জোড়া মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান পরিবার ।
নিহত দম্পতির মেজ মেয়ে হরমতী মন্ডল কাঁদতে কাঁদতে বলেন,’বাবা-মা দু’জনে বিছানায় হাত ধরাধরি করে ঘুনতেন । শেষ জীবনে মাকে চোখের আড়ালে যেতে দিতো না বাবা । রবিবার মা মারা গেছে শুনে বাবা গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়েন । তাঁকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছিল । কিন্তু শেষ রক্ষা হল না ।’
পরিবার সূত্রে জানা গেছে,শচীন রায় ও ক্ষ্যান্তবালাদেবী বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন । চিকিৎসা চলছিল তাঁদের । রবিবার সকালে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন ক্ষ্যান্তবালাদেবী । তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল পরিবার । কিন্তু তার আগেই মৃত্যু হয় তাঁর । ওইদিন বিকেল নবদ্বীপ মহাশ্মশানে বৃদ্ধার মৃতদেহটি দাহ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় । দাহ শেষে সন্ধ্যা নাগাদ শবযাত্রীরা বাড়ি ফেরে । আর তারপর থেকেই বৃদ্ধ শচীন রায়ের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে । সোমবার তাঁকে পূর্বস্থলী হাসপাতালে নিয়ে করা হয়েছিল । কিন্তু মঙ্গলবার সকাল ১১ টা নাগাদ চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষনা করেন । হরমতীদেবী বলেন,’বাবার শেষ মুহুর্তে আমি পাশে ছিলাম । বারবার উনি মায়ের কথা বলছিলেন । এদিন সকালে ‘ক্ষ্যান্ত এসেছ’ বলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাবা ।’।