এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৯ ফেব্রুয়ারী : যাঁর লেখা গান গেয়ে বিশ্বের দরবারে গর্ব করে বাংলাদেশ । সেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই চুড়ান্ত অপমান করল বাংলাদেশের জিহাদিরা । মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর ফতোয়া জারি এবং বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের প্রতিবাদে মুখে ‘টেপ’ লাগানো এবং পেরেক বিদ্ধ ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্য হাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ভাস্কর্য তৈরি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)– সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাশে স্থাপন করা হয়েছিল । কিন্তু রাতের অন্ধকারে সেই মূর্তিটা গায়েব করে দেওয়া হয় । পরে কবিগুরুর ভাস্কর্যের মাথাটি দেখতে পাওয়া যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে জঞ্জালের মধ্যে । বিশ্বকবির এই প্রকার অবমাননায় চরম ক্ষুব্ধ দুই বাংলার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ । কিন্তু এতবড় ঘটনার পরেও অভিযোগ দায়ের তো দূরের কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো হেলদোল নেই বলে অভিযোগ উঠছে বাংলাদেশের একাংশের মানুষের মধ্যে ।
কবিগুরুর ভাঙাচোরা ভাস্কর্যের ছবি পোস্ট করে অয়ন চক্রবর্তী নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ l কারা যেন বলে ওপার বাংলা এপার বাংলা ? কারা যেন অমর একুশ ভাষা দিবস গর্ব করে পালন করে ? কারা যেন বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান দেয় ?’
রঞ্জনা মুখার্জি লিখেছেন,’রাতের অন্ধকারে ভেঙে ফেলা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ভাষ্কর্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । যে রাষ্ট্রে জাতীয় সংগীত রচনাকারীর মূর্তি ভাঙ্গা নিয়ে প্রতিবাদ করতে পারেনা সেই রাষ্ট্রের জনসচেতন মানুষদের আবার গরুচোরদের পক্ষ নিয়ে কথা বলাটা বিলাসিতা মাত্র ।’ অনেকে কবিগুরুর মূর্তিটি বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছিল বলেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানীও দাবি করেছেন,’ওই ভাস্কর্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল ।’ কিন্তু দেশের জাতীয় সঙ্গীতের স্রষ্টার ভাস্কর্যটি ভাঙচুর না করে সসম্মানে কি সরানো যেত না ? যদিও এই প্রশ্নের সদুত্তর তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি তার কাছ থেকে ।
প্রসঙ্গত,সাড়ে ১৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্যটি বাঁশ, থার্মোকল ও বইয়ের কাগজ দিয়ে তৈরি করিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা । লেখক, শিল্পী ও সাংবাদিকসহ দেশের সব পর্যায়ের মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধার প্রতিবাদে নির্মিত ভাস্কর্যটি গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাজু ভাস্কর্যের পাশে আনুষ্ঠানিক ভসবে রাখার পরিকল্পনা ছিল তাদের । কিন্তু তার দিন দুয়েক পরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লক্ষ্য করা যায় ভাস্কর্যটি উধাও হয়ে গেছে । তারই প্রতিবাদে সেখানে ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ’ লেখা ব্যানার টানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে । পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে জঞ্জালের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা যায় ভাস্কর্যের মাথাটি ।।