এইদিন ওয়েবডেস্ক,বেরেলি(উত্তরপ্রদেশ),১৮ ফেব্রুয়ারী : স্ত্রীকে খুন করে প্রেমিকাকে “ভ্যালেন্টাইন ডে”-এর উপহার দিল উত্তরপ্রদেশের বেরেলির বিথরী চানপুরের পদরথপুর গ্রামের বাসিন্দা ফারুক আলম ৷ তারপর সে স্ত্রী নাসরিনের সমস্ত গহনা সরিয়ে ফেলে ডাকাতির গল্প ফাঁদে । কিন্তু পুলিশের ম্যারাথন জেরায় শেষ পর্যন্ত সে নিজের অপরাধের কথা কবুল করে । শুক্রবার ফারুক অপরাধ স্বীকার করার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে । তার দেখানো জায়গা থেকে উদ্ধার হয় গয়না ও খুনে ব্যবহৃত একটি চাকু । প্রসঙ্গত, ফারুকের প্রেমিকা হল নাসরিনেরই এক আত্মীয়া ।
অমৃত বিচারের প্রতিবেদনে জানা গেছে,গত ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ফারুক আলমের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে । রাত একটার দিকে ফারুক তার আট বছরের ছেলের মাধ্যমে তার শ্যালক শাকির ও গ্রামে বসবাসকারী গ্রামের প্রধানকে ডাকাতির খবর পাঠায় । খবর পেয়ে লোকজন তার বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে তার স্ত্রী নাসরিনের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে ।ফারুক নিজেও রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল । ফারুক তাদের জানায়,রাতে ওষুধ খাওয়ার অজুহাতে ডাকাতরা ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং ছুরিকাঘাত করে আহত করে । কিন্তু তার স্ত্রী নাসরিন একজন দুষ্কৃতীকে চিনে ফেললে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় বলে দাবি করে ফারুক ।
এরপর ফারুকের শ্যালক শাকির বিথরি থানায় ডাকাতির মামলা রজু করলে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ । কিন্তু ফারুকের কথাবার্তায় সন্দেহের সৃষ্টি হয় পুলিশের মনে । শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ফারুককে ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । ইতিমধ্যে পুলিশ জানতে পেরে যায় নাসরিনের এক আত্মীয়ার সঙ্গে ফারুকের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে । বৃহস্পতিবার রাতে ফারুকের প্রেমিকাকে থানায় নিয়ে আসে বিথরি থানা পুলিশ । ডাকা হয় ফারুকের শ্বশুর ও শাশুড়ীকেই । প্রথমে ফারুক পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলেও চারজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ভেঙে পড়ে । পরে ফারুকের মোবাইল ফোন থেকে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর প্রমাণ পুলিশের হাতে চলে আসে ।
জানা গেছে,পুলিশের জেরায় ফারুক কবুল করেছে নাসরিনের ওই আত্মীয়ার সঙ্গে দেড় বছর ধরে তার যোগাযোগ রয়েছে । ফারুক দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইছিল । কিন্তু কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না নাসরিন । এই কারনে সে নাসরিনকে খুনের পরিকল্পনা করে । নাসরিনকে হত্যা করে প্রেমিকাকে “ভ্যালেন্টাইন ডে”-এর উপহার দিতে চেয়েছিল । তাই ভালোবাসা দিবসের রাতকেই বেছে নেয় সে । তার অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল ফারুক । ঘটনার দিন রাতে বৃদ্ধা মাকে নেশাজাতীয় ইনজেকশন দিয়েছিল এবং ছেলে জায়েদ ও আরসলানের খাবারে মেশানো হয়েছিল ঘুমের ওষুধ ।
দুই মেয়েকে আগেই আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল ফারুক । তারপর গভীর রাতে স্ত্রীর দোপাট্টা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে । স্ত্রী পেট ব্লেড দিয়ে চিড়ে সেখানে একটি সবজি কাটার ছুরি চেপে ধরে । তখন ফারুকের মা ও দুই ছেলে ওষুধের প্রভাবে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । নাসরীনকে হত্যার পর আলমারিতে রাখা জামাকাপড় ফেলে দিয়ে গয়না তার দোকানে লুকিয়ে রেখে দিয়ে আসে । ফিরে এসে নিজেকেও ক্ষতবিক্ষত করে ফারুক । এরপর বড় ছেলে জায়েদকে তুলে শ্যালক ও বাকিদের ডেকে পাঠিয়ে ডাকাতির গল্প শোনায় । শুক্রবার ঘটনার পুননির্মাণের পর শনিবার ধৃতকে আদালতে পাঠায় পুলিশ ।।