এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৬ ফেব্রুয়ারী : হতদরিদ্র পরিবার । বাবার মৃত্যুর পর অতিকষ্টে সংসার চালায় মা । তারই মাঝে তিনি ধারদেনা করে একই গ্রামের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন । কিন্তু বছর তিনেক আগে সন্তানের জন্মের পরেই শুরু হয় স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অমানবিক নির্যাতন । কারন সন্তান জন্মগতভাবে অসুস্থ,তার দায় চাপিয়ে দেওয়া হয় গৃহবধুর উপরেই । অসুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়ার অপরাধে বাপের বাড়ি থেকে অতিরিক্ত টাকা ও মোটরসাইকেল আনার জন্য ফরমান শোনায় স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন । কিন্তু চাহিদা পূরণ না হওয়ায় প্রতিরাতে মারধরের পাশাপাশি বধুর সর্বাঙ্গে বিড়ির ছ্যাঁকা দিতে শুরু করে তার স্বামী । শেষ পর্যন্ত বধুকে গ্রামছাড়া করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার এরুয়ার গ্রামের ঘটনা । বৃহস্পতিবার অসুস্থ ছেলেকে কোলে করে ভাতার থানায় এসে স্বামী শেখ বুলু,শাশুড়ি, ভাসুর, জায়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন মর্জিনা বেগম নামে ওই গৃহবধু ।
জানা গেছে,ভাতার থানার এরুয়ার গ্রামেই বাপের বাড়ি মর্জিনা বেগমের । কিছুটা পাশেই বাড়ি পেশায় রাজমিস্ত্রি শেখ বুলুর । বছর সাতেক আগে বুলুর সঙ্গে দেখাশোনা করে বিয়ে হয় মর্জিনার । তাদের একটি তিন বছরের একটি সন্তান রয়েছে । মর্জিনা বেগমের কথায়,’অভাবের মাঝেও শুশুরবাড়ির দাবি মত তিন ভরি সোনার গহনা,নগদ ৫০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন দানসামগ্রী যৌতুক হিসাবে দিয়েছিলেন আমার মা । কিন্তু আমি অসুস্থ ছেলের জন্ম দেওয়ায় তার দায় আমার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয় । সন্তানের জন্মের পর থেকেই অতিরিক্ত পন বাবদ নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং আমার স্বামীর জন্য একটি মোটরসাইকেলের দাবিতে আমায় চাপ দিতে করতে শুরু করে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা । কিন্তু আমার বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো নয় । তাই দিতে পারেননি আমার মা ।’
তিনি বলেন,’তারপর থেকেই আমার উপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন । প্রতিরাতে আমার স্বামী আমায় মারধর করত । পাশাপাশি সারা শরীরে জ্বলন্ত বিড়ির ছ্যাঁকা দিত । অত অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারেনি । তাই বাধ্য হয়ে সপ্তাহ তিনেক আগে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম । পরের দিন মা আমাকে ভাতার হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করিয়েছিল ।’ তার অভিযোগ, কিন্তু হাসপাতাল থেকে শ্বশুরবাড়ি ফিরতেই স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেদের হামলার মুখে পড়তে হয় আমাকে । প্রাণ বাঁচাতে আমি গ্রাম ছেড়ে পূর্ব বর্ধমানের গলসির এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিই ।’
এদিন আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে ভাতার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মর্জিনা বেগম । পুলিশের কাছে তিনি ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন । তার অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।।