এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৩ ফেব্রুয়ারী : সোমবার রাজ্যপালের ভাষণের উপর বিধানসভায় বক্তব্য পেশ করার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার । রাজ্য সরকার রাজ্যপালকে ভুল তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে নিজের বক্তব্য পেশ করে শুভেন্দু অধিকারী । কিন্তু তিনি কয়েক মিনিট বক্তব্য রাখার পরেই স্পিকার তাঁকে জানিয়ে দেন, তাঁর নির্দিষ্ট অভিযোগকে মান্যতা দেওয়া হবে না । তাতেই ক্ষুব্ধ শুভেন্দু অধিকারীসহ বিজেপি বিধায়করা বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করলেন । বিধানসভার বাইরে রাজ্যপালের বক্তব্যের কপি ছিঁড়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা ।
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন,’আজ রাজ্যপালের ভাষণের উপর প্রতিক্রিয়া দেওয়ার শেষ দিন । আমি ডাইভার্সন অফ মানি,ইনডিসিপ্লিন অফ ফাইন্যান্সিয়াল রুলস এন্ড রেগুলেশন এবং ভাইলেশন ওফ দ্য সিপিসি গাইড লাইন নিয়ে বলতে শুরু করেছিলাম । এই কথাগুলো শুনলে সরকারের মঙ্গল হত । ক্যাগ কোমড়ে দড়ি পরানোর সুযোগ পেত না ।’
শুভেন্দু বলেন,’আমি বলেছি মুখ্যমন্ত্রী জেলায় জেলায় সভা করে বেড়াচ্ছেন,সেই সভা তার করার অধিকার আছে,কিন্তু মিডডে মিলের টাকা থেকে নয় । জমি অধিগ্রহণ, জাতীয় সড়ক ও রেলের ল্যান্ড অ্যাক্যুইজিশের টাকা থেকে নয় । এসটি/এসসি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের টাকা থেকে নয় । আমি বলেছি আপনি কিছু আই এস,আইপিএসকে সরকারি ফ্লাট বাংলোও দিচ্ছেন আবার এইচআরের টাকা নিতেও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন,১৬ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা । মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ ত্রিবেদী ৩ বছরে এইচআরের তুলেছেন ।’ তিনি বলেন,’এতক্ষণ অবদি ঠিক ছিল,কিন্তু যেই মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে হাত পরে গেছে,দুয়ারে সরকারে হাত পরে গেছে, অর্থ নয়ছয় করে দান খয়রাতিতে যেই হাত পরে গেছে এবং পেয়ারের আইএস,আইপিএস দের গায়ে যেই হাত পরে গেছে,মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি প্রথমে ববি হাকিমকে বাধা দেওয়ার জন্য উসকালেন । ববি হাকিম শুরু করেছিল,আমি তেড়ে ধরতে বসে পড়েছে । তারপরে দেখলো হল না,ববি ফেল । সাথে সাথে স্পীকারকে বললো আপনি বক্তব্য থেকে এগুলো বাদ দিন । অধ্যক্ষ মহদয় লজ্জার মাথা খেয়ে বিধানসভার গরিমা,বিধানসভার কাস্টম, বিধানসভার কনভেনশন,রীতিনীতি সব বিসর্জন দিয়ে সরাসরি তার সচিবালয়ের কর্মীরা যারা রেকর্ডিয়ে ছিল তাদের তিনি বললেন, বিরোধী দলনেতা মুখ্যমন্ত্রী, আই এস,আইপিএস দের সম্পর্কে যা বলছেন এক্সপাঞ্জ করুন ।’
এরপর শুভেন্দু বলেছেন,’বিরোধী দলনেতা ২ কোটি ২৮ লক্ষ ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করছে,আমরা বিরোধী দলের এতজন বিধায়ক আছি , আমার কথা যদি সব বাতিলই করে দেন,মুখ্যমন্ত্রীর ত্রুটি বিচ্যুতি, নয়ছয়, চাকরি কেলেঙ্কারী, ডিএ কেলেঙ্কারী এগুলো যদি বলা না যায় তাহলে এই সভা কি করে চলতে পারে ? এটা তো তৃণমূলের দলীয় সভায় পরিণত হয়েছে । আমরা বিরোধিতা করেছি, আমাদের বিধায়করা সাউটিং শ্লোগান দিয়েছেন,আমি অধ্যক্ষকে এক মিনিট সময় দিয়েছি, সম্মানের সঙ্গে তাঁকে সিদ্ধান্ত তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি । কিন্তু উনি সিদ্ধান্ত তুলে না নিয়ে আমায় বক্তব্য শুরু করতে বললেন। কিন্তু আমি করিনি । এটা পশ্চিমবঙ্গের গনতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয় ।’
শুভেন্দুর অভিযোগ,’আসলে কিছুদিন আগে দক্ষিণ কলকাতায় টাকা উদ্ধার করেছে ইডি তাতে খুব বিচলিত মুখ্যমন্ত্রী । তাই তিনি এই ধরণের অসংসদীয় কাজ করে বিরোধীদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন । এই অত্যাচারী শাসকদের উৎখাত না করা পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না ।’
এদিকে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের (Motion of Priviledge) নোটিস আনার প্রস্তাব দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । প্রথমে জানা যায় আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুভেন্দুকে সাসপেন্ড করেছেন স্পিকার । পরে বিধানসভার তরফে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী দলনেতার হয়ে ক্ষমা চাওয়ায় ওই সাপপেনশন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে । অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’বিজেপি পার্টির পক্ষ থেকে ঠিক করা হয়েছে আমরা নিয়ম মেনে স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবো । আমরা ১৬ তারিখে অনাস্থা সাবমিট করবো তবে তার আগে আইনটা দেখে নিই ।’।