দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),০২ ফেব্রুয়ারী : রঙবেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো মঞ্চে বসে রয়েছেন শতবর্ষে পা রাখা পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার ন’নগর গ্রামের বাসিন্দা ঘনশ্যাম মণ্ডল । মাথায় একটি জন্মদিনের টুপি পরিয়ে দিয়েছেন নাতি নাতনিদের ছেলেমেয়েরা । জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আগত নিমন্ত্রিতরা বৃদ্ধের হাতে তুলে দিচ্ছেন ফুলের তোড়া ও উপহার সামগ্রী । শত বসন্ত পার করা ঘনশ্যামবাবুর জন্মদিন বৃহস্পতিবার ধুমধাম করে উদযাপন করল পরিবারের লোকজন । জড়ানো গলায় ঘনশ্যাম মণ্ডল বলেন, ‘কলকাতার বাড়ি থেকে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু যখন অন্তর্ধান হয়ে যান তখন আমার বয়স ছিল ২২ বছর । আজও স্পষ্ট মনে পড়ে হিরোশিমা নাগাসাকিতে ফেলা আমেরিকার পরমানু বোমার কথা । এরকম কত পুরনো স্মৃতি আজ চোখের সামনে প্রায়ই ভেসে ওঠে ।’
জানা যায়,১৯২৩ সালের ২ ফ্রেবুয়ারী ন’নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন পেশায় স্কুল শিক্ষক ঘনশ্যাম মণ্ডল । পঞ্চম থেকে ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়াশোনা কাটোয়ার শ্রীখন্ড উচ্চ বিদ্যালয়ে । পড়া শেষে শুরু করেন শিক্ষকতা । প্রথমে ঘনশ্যামবাবুর বাবার দান করা জমিতে গড়ে ওঠা প্রাথমিক বিদ্যালয় বিনা বেতনে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি । তখন তিনি ২০ বছরের যুবক । পরে দেশ স্বাধীন হলে তিনি কোশিগ্রাম অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন । ৬৫ বছর বয়সে অবসরগ্রহণের আগে পর্যন্ত ওই স্কুলেই শিক্ষকতা করেছেন ঘনশ্যাম মণ্ডল । তিনি বলেন,’কোশিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমি যখন শিক্ষকতায় ঢুকি তখন আমার বেতন ছিল মাসিক মাত্র ৬০ টাকা । অবসর নেওয়ার সময় বেতন হয় ৯০০ টাকা । পৈতৃক জমিজমায় চাষবাস আর ওই নামমাত্র বেতনে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা ও সংসার খরচ চালাতাম । অবশ্য এখন আমি ২০ হাজার টাকা পেনশন পাচ্ছি ।’
কিন্তু শতবর্ষে পা রেখেও ঘনশ্যাম মণ্ডল আজও চিরতরুণ । শুধু কানের শ্রবণ শক্তির সমস্যা ছাড়া কোনো রোগ বাসা বাধতে পারেনি তাঁর শরীরে । বরাবরের অভ্যাস মত রোজ সকাল ছটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়েন তিনি । তারপর সূর্যপ্রণাম সেরে তবেই প্রাতরাশ করেন । কিন্তু এই বয়সে এত জীবনী শক্তির উৎস কি ? মুচকি হেঁসে ঘনশ্যামবাবু বলেন, ‘স্বাস্থ্য ঠিক রাখার অন্যতম দুটি মূলমন্ত্র হচ্ছে পরিমিত আহার ও নিয়ম মেনে খাওয়া দাওয়া । আর সর্বদা নিজেকে সর্বদা টেনশন মুক্ত রাখা ।’
জানা গেছে,ঘনশ্যামবাবুর স্ত্রী সুধারাণীদেবী প্রায় ১১ বছর আগে মারা গেছেন । তাঁদের চার ছেলে, দুই মেয়ে । ৬৮ বছর বয়সে মারা গেছেন তাঁদের মেজ ছেলে নির্মলবাবু । বড় ছেলে প্রশান্ত মণ্ডলের বয়স এখন ৭৫ । সেজ ছেলে বাসুদেব মণ্ডলের কাছেই থাকেন ঘনশ্যামবাবু । এদিন তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে কোশিগ্রামে একটি লজে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল । পরিবারের লোকজন আত্মীয়স্বজন ছাড়াও হাজার খানেক নিমন্ত্রিত ছিল । পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ঘনশ্যামবাবুর নাতি ও তাঁদের ছেলেমেয়েরা ।।