এইদিন ওয়েবডেস্ক,মুম্বাই,৩০ জানুয়ারী : গত বছরের এপ্রিলে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষনাথ মন্দিরের নিরাপত্তা রক্ষীদের উপর প্রাণঘাতী হামলায় দোষী সব্যস্ত আহমেদ মুর্তজা আব্বাসিকে (Ahmad Murtaza Abbasi) সোমবার মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিল বিশেষ এনআইএ আদালত । অভিযুক্তকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২২ ধারায় মৃত্যুদণ্ড এবং ৩০৭ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে ।
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা(এনআইএ) ও মহারাষ্ট্র স্পেশাল টাস্ক ফোর্স(এটিএস) তদন্তে জানতে পেরেছে, ২০২২ সালের ২ এপ্রিল রাতে সিদ্ধার্থনগর জেলার আলিগড়োয়ায় সীমান্ত পেরিয়ে নেপালের একটি মাদ্রাসায় গিয়েছিল মুর্তজা আব্বাসি । সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আলীগড়োয়ার একটি দোকান থেকে দুটি হাঁসুয়া কিনেছিল । পরের দিন অর্থাৎ ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় গোরক্ষনাথ মন্দিরের নিরাপত্তা রক্ষীদের উপর ওই হাঁসুয়া দিয়ে হামলা চালায় সে । সেই সময় ২০ তম ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল গোপাল কুমার ডিউটিতে ছিলেন । মুর্তাজা তার এসএলআর রাইফেলটি ছিনিয়ে নেয় এবং তার কোমড়ে হাঁসুয়ার কোপ বসিয়ে দেয় । আরও এক কনস্টেবলের পায়ে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়েছিল মুর্তাজা । যদিও পরে সে ধরা পড়ে যায় ।
জানা গেছে, গোরখপুরের সিভিল লাইন এলাকার বাসিন্দা, আহমেদ মুর্তজা আব্বাসি ১৯৯২ সালের ৫ জানুয়ারী গোরখপুরের আব্বাসি নার্সিং হোমে জন্মগ্রহণ করে । পড়াশোনার সময় থেকেই সে ইয়েমেনি-আমেরিকান ইমাম আনোয়ার আল আলাকিকে তার আদর্শ বলে মনে করত । মুর্তজা ইসলামিক জাগরণ ফোরামে উগ্র ইসলামের আলোচনা শুনত এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করত । সে ২৯ ডলার মূল্যের একটি আন্তর্জাতিক সিম কিনেছিল । আর ওই সিম ব্যবহার করে ফেসবুক এবং টেলিগ্রামে তার অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিল । সিরিয়া, আরব বিপ্লব এবং আইএসআই সম্পর্কিত ভিডিও দেখতে ব্যবহার করত ওই অ্যাকাউন্ট দুটি । পড়াশুনার সময় সে ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে নেপালি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উপসাগরীয় দেশে টাকাও পাঠিয়েছিল বলে জানতে পারে তদন্তকারী দল । ২০২০-২১ সালে নেপালের অ্যাকাউন্ট থেকে উপসাগরীয় দেশগুলিতে প্রায় আট লক্ষ টাকা পাঠানো হয়েছিল বলে তার অ্যাকাউন্টের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারে পুলিশ ।
মুর্তজা লখনউয়ের সেন্ট জন ভাস্কো স্কুল থেকে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করার পর মুম্বাইয়ে থ্রি থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে । এই সময়ে সে উপসাগরীয় দেশগুলিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলিও দেখতে শুরু করে এবং সেদিকে ঝুঁকে পড়ে । ২০১৫-১৬ সালে একটি কোম্পানিতে কাজ করেছে মুর্তাজা । কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারনে সে চাকরি ছেড়ে দেয় । এরপর ২০১৭ সালে সে অনলাইন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করে । ইতিমধ্যে ২০১৫ সালে বাবার সাথে সৌদি ওমরাহ করে আসে । ২০১৯ সালের জুনে সে জৌনপুরের মুল্লা টোলার বাসিন্দা এক তরুনীকে বিয়ে করে । যদিও সেই সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি । ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাদের তালাক হয়ে যায় । তালাকের পর থেকে হাই-টেক কম্পিউটার কোডিং শেখার জন্য কাজ শুরু করে মুর্তাজা ।
আহমেদ মুর্তজা আব্বাসিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএসআইএস) সাথে যোগসূত্রের কথা জানতে পারে তদন্তকারী দল । এমনকি সে আইএসের পক্ষে লড়াইয়ের শপথ নিয়েছিল এবং ওই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সমর্থকদের আর্থিক সহায়তাও দিয়েছিল বলে জানা যায় । যদিও মুর্তাজার পক্ষ থেকে আদালতে দাবি করা হয় সেই সময় সে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল । যদিও তার এই দাবিকে আমল দেয়নি আদালত ।।