প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩০ জানুয়ারী : বালি- মাটির মত প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ করা যাবে না।বালির অবৈধ কারবার বন্ধ করার জন্য কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ বহুবার প্রশাসনিক সভা থেকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির কোন বদল ঘটে নি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করেই রমরমিয়ে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকে বালির অবৈধ কারবার চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।এক বালি কারবারি আবার দামোদরের সিকস্তি জমি থেকেও বালি লুঠ করেনিচ্ছে বলে ব্লকের কনকপুর ও চলবলপুর গ্রামের বাসিন্দারা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন। যদিও এত কিছুর পরেও অসাধু বালি কারবারীদের দৌরাত্ব বন্ধ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এই দুই গ্রামের বাসিন্দারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন ।
দামোদর থেকে অবৈধ উপায়ে বালি উত্তোলন নিয়ে
কনকপুর গ্রামের বাসিন্দারা আইনজীবী মাধ্যমে জেলা ও ব্লক প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন । তাঁদের অভিযোগ, নদী ভাঙ্গনের কারণে পূর্বে কনকপুর ও চলবলপুর মৌজার অনেকের জমি দামোদরের গর্ভে চলে যায়। পরে সেইসব সিকস্তি জমি পুনরায় স্বস্থানে জেগে ওঠে।সরকার বা প্রশাসন কেউই ওই সিকস্তি জমি থেকে বালি কেটে তুলে নেওয়ার অনুমতি কাউকেই দেয় নি।তবুও জামালপুরের দাদপুর এলাকার জনৈক বালি কারবারী সৈয়দ নিয়াজুদ্দিন জেসিবি দিয়ে ওই সিকস্তি জমি কেটে বালি তুলে নিয়ে লরি ও ট্র্যাক্টরে লোড করে পাচার করে দিচ্ছে।এমনটা না করার জন্য গ্রাম বাসীরা বহুবার নিয়াজুদ্দিনকে বললেও তিনি তা মানেন নি। উল্টে সিকস্তি জমি থেকে আরো বেপরোয়া ভাবে বালি কেটে তুলে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের ।
কনকপুর গ্রামের বাসিন্দা মহাদেব দাস ও কৌশিক ঘোষ বলেন,’সৈয়দ নিয়াজুদ্দিনকে সরকার বালি তোলার লিজ দিয়েছে কনকপুর ও চলবলপুর মৌজার সিকস্তি জমিথেকে অনেকটা দূরের ১৩ নম্বর ঘাটে ।কিন্তু নির্দিষ্ট ওই ঘাট থেকে বালি না তুলে তিনি এইদুই মৌজার সিকস্তি জমিতে জেসিবি নামিয়ে বালি লুঠ করে নিচ্ছেন। প্রত্যেক দিন শয়ে শয়ে ট্র্যাক্টর ও লরিতে সেই বালি লোড করে পাচার করে দিচ্ছেন’।কৌশিক ঘোষ এও জানান,“ওই সিকস্তি জমির সমস্ত মালিকের নাম এখনও সরকারী রেকর্ডে নথিভুক্ত রয়েছে। তবুও সরকারকে ’রয়াল্টি’ ফাঁকি দিয়েই ওই সিকস্তি জমি থেকে বালি লুঠ করে পাচার চলছে।এটা বন্ধ করার জন্য ইতিপূর্বে তাঁরা ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক (বিলআরও) কে দু’বার দরখাস্ত জমা দেন।এছাড়াও জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলা শাসক(ভূমি)কেও লিখিত ভাবে জানান। একবার বিএলআরও সরজোমিনে সিকস্তি জমি এলাকা ঘুরে দেখে বলে যান,’এখানে বালি কাটতে আর দেওয়া হবে না’।কিন্তু তার পরদিন থেকে ফের একই রকম ভাবে সিকস্তি জমি থেকে বালি কেটে লুঠ শুরু হয়ে যায়।তা নিয়ে বিএলআরওকে জানাতে গেলে উনি হাত তুলে নেন“।বিএলআরও (জামালপুর) দিলীপ দেবনাথ যদিও জোরগলায় দাবি করেছেন,জামালপুর ব্লকে নাকি শুধুমাত্র ১৯ টি বৈধ খাদানই চলছে।এর বাইরে কোথাও বেআইনি ভাবে খাদান চলা বা অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন হচ্ছে এমন কোন অভিযোগ তিনি পাননি বলে জানান ।
দুই মৌজা এলাকার সিকস্তি জমিথেকে অবৈজ্ঞানিক ভাবে বালি কেটে তুলে নেওয়াটা আসলে দুই গ্রামকে ধ্বংস কারে দেওয়ার চক্রান্ত বলে মনে করছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসী কৌশিক ও মহাদেব স্পষ্ট জানিয়েদেন,“আগামী ২ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমানে প্রশাসনিক সভা করতে আসছেন।সেই সভাথেকে মুখ্যমন্ত্রী জামালপুর ব্লকে চলা অবৈধ বালির কারবার বন্ধে কি নির্দেশ দেন তা তাঁরা দেখে নিতে চান। তার পরেই তাঁরা কনকপুর ও চলবলপুর মৌজার সিকস্তি জমি থেকে বালি লুঠ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করবেন বলে জানান।
বালি ব্যবসায়ী সৈয়দ নিয়াজুদ্দিন অবশ্য দাবি করেছেন,তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।তিনি দাবি করেন,’লিজের নির্দিষ্ট জায়গা থেকেই ওখানে বালি তোলা হয়। পাল্টা অভিযগে তিনি বলেন,’যাঁরা আমার বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ করছে তাঁরা খুব ভাল করেই জানেন আমি একজন লাইসেন্স প্রাপ্ত বালি ব্যবসায়ী।তা সত্ত্বেও ওইসব ব্যক্তিরা মাঝে মধ্যেই তাঁর কাছে টাকার দাবি করতেন। সেই দাবি তিনি আর মানতে চাননি।আর তার জন্যই অপর কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে গাটছাড়া বেঁধে ওই ব্যক্তিরা বারে বারে তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ জানাচ্ছেন।আগেও ওই ব্যক্তিরা এমন অভিযোগ অনেকবার করেছে।সেইসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনও ওয়াকিবহাল রয়েছে ।’
বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার বলেন,
‘পুরোটাই বিএলআরও-র দেখার কথা । ব্লকের ভূমি দফতর থেকে ডিমারকেশন করে দেওয়া জায়গার বাইরে বালি তোলা হলে সেটা বেআইনি কাজ। এমনটা কেউ করে থাকলে তাকে রেয়াত করা হবে না। আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’।