এইদিন ওয়েবডেস্ক,গোরক্ষপুর,৩০ জানুয়ারী : গোরক্ষনাথ মন্দিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পিএসি জওয়ান ও নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় ধৃত আহমেদ মুর্তজা আব্বাসির(Ahmad Murtaza Abbasi) ইসলামি স্টেট (আইএসআইএস) ও অন্যান্য দেশবিরোধী শক্তির সাথে যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে এটিএস ও জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা(এনআইএ) । নাভি মুম্বাইয়ের তাজ হাইটস প্ল্যান্ট ৬৯ নম্বরের বাসিন্দা মুর্তজার সঙ্গে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগের একাধিক তথ্য প্রমাণ হাতে পেয়েছে তদন্তকারী দল । তদন্তকারী দল জানতে পেরেছে,মুর্তজার জন্ম হয়েছিল ১৯৯২ সালে ৫ জানুয়ারী গোরখপুরের আব্বাসি নার্সিং হোমে । পড়াশোনার সময় থেকেই সে ইয়েমেনি-আমেরিকান ইমাম আনোয়ার আল আলাকিকে তাঁর আদর্শ বলে মনে করত ।
মুর্তজা ‘ইসলামিক জাগরণ ফোরামে’ উগ্র ইসলামি আলোচনা শুনতো,এমনকি তাদের প্রশ্নও করত ।
সে ২৯ ডলার মূল্যের একটি আন্তর্জাতিক সিম কিনেছিল । ওই সিম ব্যবহার করে সে ফেসবুক এবং টেলিগ্রাফে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে । তারপর ওই দুই অ্যাকাউন্ট থেকে সে সিরিয়া, আরব বিপ্লব এবং আইএসআই সম্পর্কিত ভিডিও দেখত । শুধু তাইই নয়, ২০২০-২১ সালে তার নেপালের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উপসাগরীয় দেশগুলিতে প্রায় আট লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী দল । মুর্তুজা ২০১৩ সালে পাসপোর্ট হাতে পায় এবং ২০১৫ সালে তার বাবার সাথে সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গিয়েছিল ।
তদন্তকারী দল জানতে পেরেছে, ২০২২ সালের ২ এপ্রিল রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিদ্ধার্থনগর জেলার আলিগড়োয়ায় চলে গিয়েছিল মুর্তজা । সীমান্ত পেরিয়ে প্রথমে নেপালের একটি মাদ্রাসায় যায় । মাদ্রাসা থেকে ফিরে এসে আলীগড়োয়ার একটি দোকান থেকে দুটি হাঁসুয়া কেনে । তারপর ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ফেরার সময় মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বারের আগে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে । পূর্ব পরিকল্পনা অনুয়ায়ী ২০ তম ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল গোপাল কুমারের কাছে এসে প্রধান ফটকের পাহারায় থাকা পিএসি তার এসএলআর রাইফেল (স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র) ছিনিয়ে নেয় । গোপাল কুমার কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে হাঁসুয়ার কোপ বসিয়ে দেয় । গোপালের চিৎকার শুনে কনস্টেবল সুনীল দৌড়ে গেলে মুর্তজা তার পায়ে হাঁসুয়ার কোপ বসিয়ে দেয় । পরে অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে ঘিরে ফেললে ধর্মীয় স্লোগান দিতে দিতে সে মন্দিরের গেটের ভেতরে প্রবেশ করে । যদিও তার আগে সাইকেল স্ট্যান্ডের গেটের সামনে থেকে তাকে ধরে ফেলে নিরাপত্তা রক্ষীরা । এরপর ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ খতিয়ে দেখে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে তার যোগসূত্রের প্রমান পায় তদন্তকারী দল । তদন্তকারী দল জানতে পেরেছে যে সে দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে জিহাদি সাহিত্য নিয়ে চর্চা করছিল । নেপাল সীমান্তবর্তী মাদ্রাসায় নিয়মিত যেত আহমেদ মুর্তজা আব্বাসি । যদিও সে তদন্তকারী দলকে বিভ্রান্ত করার প্রাণপন চেষ্টা করেছিল । কিন্তু সে সফল হয়নি । শেষ পর্যন্ত পোড় খাওয়া আধিকারিকরা তার সেই চালাকি ধরে ফেলে ।
গোরখপুরের গোরক্ষনাথ মন্দিরে নিরাপত্তা কর্মীদের উপর হামলার ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর শুক্রবার লখনউ-ভিত্তিক সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াডের (এটিএস) বিশেষ আদালতের বিচারক বিবেকানন্দ শরণ ত্রিপাঠী ধৃত আহমদ মুর্তজা আব্বাসিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে । আজ সোমবার আদালতে তার সাজা ঘোষণা হবে ।।