দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৭ জানুয়ারী : মাস ছয়েক আগে ছিলেন বদ্ধ উন্মাদ । বাম পা’টা ভেঙে যাওয়ায় ধাতব ফ্রেম লাগানো ছিল । ফ্রেমটি খুলে গিয়ে পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয় । ক্ষতস্থান দিয়ে বেরিয়ে আসছিল পূঁজরক্ত । বছর ত্রিশের ওই যুবক একদিন ওই অবস্থাতে কাটোয়া কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে বসেছিলেন । নজরে পড়ে যায় হাসপাতালের সুপার ডাঃ সৌভিক আলমের । তিনি ওই যুবকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন । বর্ধমান হাসপাতালে অক্ষয় দাস নামে ওই যুবকের চিকিৎসা চলছিল । বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলে হাসপাতাল থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় । কিন্তু তিনি ভুলতে পারেননি কাটোয়া হাসপাতালের সুপারের সেই মানবিকতার কথা । তাই ওই যুবক সুস্থ হতেই প্রথমেই ছুটে আসেন কাটোয়া হাসপাতালের সুপারের কাছে । শুক্রবার সুপারের অফিসে গিয়ে তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানান । সেই সঙ্গে নিরাশ্রয় ওই যুবক সুপারকে একটা কাজ দেখে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন । সুপার তাঁকে আশ্বাসও দিয়েছেন বলে জানা গেছে ।
জানা গেছে,ঘরবাড়ি ও পরিবার সব থাকা সত্ত্বেও নিরাশ্রয় অক্ষয় দাস । কাটোয়ার গিধগ্রামে নিজেদের পৈতৃক ভিটে রয়েছে তার । কিন্তু অক্ষয়ের যখন চার বছর বয়স তখন তার মা সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যান । তারপর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার বাবা মিলন দাস । আর তখন থেকেই অক্ষয়ের জীবনে নেমে আসে দুর্দৈব । সৎমায়ের অত্যাচারে এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে মাত্র ৮ বছর বয়সেই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন অক্ষয় । কাটোয়া থেকে ট্রেনে চলে যান মুর্শিদাবাদের সালারে । রেলস্টেশনে বসে খিদের জ্বালায় কান্নাকাটি করতে দেখে তাকে উদ্ধার করে বহরমপুর হোমে পাঠিয়ে দিয়েছিল পুলিশ ।
অক্ষয় এদিন বলেন,’হোম থেকে আমার বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল । কিন্তু সৎমা আমায় বাড়িতে জায়গা দিতে রাজি হয়নি । সেই কারনে আমায় কাটোয়ার আনন্দ নিকেতন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল । সেখানে আমি অষ্টম শ্রেণির পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি । তারপর আর পড়াশোনা করতে মন চায়নি । সেই কারনে আমায় কাটোয়ার গোয়াই গ্রামে ‘প্রেমানন্দ ডিজেবল আশ্রমে’ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল । এতদিন আমি সেখানেই ছিলাম ।’
দেখুন ভিডিও :-
কিন্তু মাথার সমস্যা দেখা দিল কিভাবে ? এর উত্তরে অক্ষয় বলেন,’বছর তিনেক আগে আমি দিল্লি নির্মান শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলাম । এক ঠিকাদার আমায় নিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু মাস তিনেক কাজ করার পর মালিকের সঙ্গে বেতন নিয়ে সমস্যা হয় । এনিয়ে বচসা চলাকালীন আমায় একটি নির্মিয়মান বাড়ির ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেওয়া হয় । আমার বাম পা ভেঙে যায় । এছাড়া মাথায় গুরুতর আঘাত লেগে আমি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি ।’
জানা গেছে,দিল্লিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পালিয়ে কাটোয়ায় চলে আসেন মানসিক ভারসাম্যহীন অক্ষয় । একদিন কাটোয়া হাসপাতাল চত্বরে বসে থাকার সময় হাসপাতাল সুপার ডাঃ সৌভিক আলমের নজরে পড়ে যান তিনি । তারপর সুপার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন ।
ডাঃ আলম বলেন, ‘আজ যখন ওই যুবক আমার অফিসে এসে নিজের পরিচয় দেয় খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম । যেদিন যুবককে উদ্ধার করে বর্ধমানে পাঠানো হয়েছিল তখন ঠিকমতো কথা বলতে পারছিল না । তার বাম পায়ের অবস্থাও ভালো ছিল না । ওই অবস্থা থেকে সে যে সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছে এটাই বড় কথা । আজ যুবককে সুস্থ দেখে সত্যি খুব আনন্দ পেয়েছি ।’।