প্রদীপ চট্টৌপাধ্যায়,বর্ধমান,২৬ জানুয়ারি : প্রকাণ্ড আকৃতির জগদ্ধাত্রী ও কালি প্রতিমার পুজো হলে দেবী সরস্বতী কেন পিছিয়ে থাকবেন । তাই দেবী জগদ্ধাত্রী ও কালির সঙ্গে পাল্লা দিতে সামান্য পাঁচ ফুট শারীরিক উচ্চতার মৃতশিল্পী তৈরি করে ফেলেন তিরিশ ফুট উচ্চতার সরস্বতী প্রতিমা ।সুবিশাল মণ্ডপে তাগ লাগানো সেই সরস্বতী প্রতিমার পুজো হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের গোলাবাড়ি এলাকায়।যে পুজো দেখতে বৃহস্পতির সকাল থেকে দেবীর বহু ভক্ত সেখানে পৌছে যান। দর্শনার্থীর ভিড় দেখে বেজায় উৎফুল্ল পুজো আয়োজকরা। তাঁরা দাবি করলেন,’চন্দননগর সহ বিভিন্ন জায়গায় চল্লিশ-পঞ্চাশ ফুট উচ্চতার জগদ্ধাত্রী ও কালি প্রতিমার পুজো হতে তাঁরাতো দেখেছেন।তাহলে বিদ্যার দেবী কেন জগদ্ধাত্রী ও কালির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবেন না !
’গোলাবাড়ি’এলাকা নিয়ে জামালপুরবাসীর মধ্যে
একটা কৌতুহল রয়েইছে।কারণ এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে ,“বহুকাল আগে এই এলাকায় নাকি দূর্গো গড়ে ইংরেজ বণিকরা আস্তানা গড়েছিল। এমনকি সেখানেই তারা বড়বড় গোলায় শস্য মজুত করতো“। এমন এক এলাকায় এইবছর নজকাড়া ভাবে সরস্বতী পুজো করারার সিদ্নান্ত নিয়ে ফেলে একদল যুবক । পুজোর জন্য তাঁরা লক্ষাধীক টাকার বাজেটও বরাদ্দ করে ফেলে । ওই যুবকরাই মাস দু’আড়াই আগে তিরিশ ফুট উচ্চতার প্রতিমা তৈরির বরাত দিয়ে দেয় সংলগ্ন এলাকার তরুণ মৃৎ শিল্পী প্রসেনজিত দাস কে । দিন রাত এক করে খেটে সরস্বতী পুজোর আগের দিনেই প্রসেনজিৎ প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে ফেলে। ওই দিন রাতের মধ্যেই প্রতিমার সঙ্গে মানানসই বিশাল মণ্ডপও তৈরি হয়ে যায় । এদিন সেই মণ্ডপেই ঘটাকরে হল তিরিশ ফুট উচ্চতার সুবিশাল সরস্বতী প্রতিমার পুজো । যে পুজো দেখতে এদিন সকাল থেকে বহু মানুষ সেখানে হাজির হন।
মৃৎ শিল্পী প্রসেনজিৎ দাস বলেন,’এত বড় আকৃতির প্রতিমা তৈরির কাজ আগে আমি কখনো করিনি। তা ছাড়া আমি তো তেমন লম্বা মানুষ নই ।বরাত নিয়ে আসা পুজো উদ্যোক্তারা যখন বলে তাঁরা ৩০ ফুট উচ্চতার সরস্বতী প্রতিমার পুজো করবে তখন তা শুনে চমকেই গিয়েছিলাম । পরে অবস্য বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবেই নিয়ে ফেলি। শুরু করেদি প্রতিমা তৈরির কাঠামোর সরঞ্জাম জোগাড় করা । তা করতে গিয়ে বেশ কয়েকটা দিন কেটে যায় । কাঠামো তৈরির কাজ শেষ হতেই মাটির কাজ শুরু করি ।’ প্রসেনজিৎ জানান,৫৭ দিনের মধ্যে তিনি ৩০ ফুট উচ্চতার প্রতিমা তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলেন । বুধবার রাতের মধ্যে প্রতিমায় ডাকের সাজ পরানোর কাজও শেষ করে ফেলেন। এদিন তাঁর হাতে গড়া প্রতিমার পুজো হয় মহা ধুমধাম করে হয়। বহু মানুষ তাঁর হাতে গড়া দেবী সরস্বতীর প্রতিমা দেখে ছবি তুললেন, প্রশংসাও করলেন। এমনটা দেখে তাঁর খবই ভালো লেগেছে বলে শিল্পী প্রসেনজিৎ দাস জানান ।
পুজো আয়োজকদের পক্ষে দেবাশিষ ভট্টাচার্য্য
বলেন,এই বছর জগদ্ধাত্রী পুজোয় আমি ও আমার বন্ধুরা মিলে চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে যাই । সেখানে গিয়ে দেখি এক একটা মণ্ডপে বিশাল বিশাল আকৃতির জগদ্ধাত্রী প্রতিমার পুজো হচ্ছে। কালি পুজোতেও মেমারির আমাদপুরে ও অন্য কয়েকটি জায়গায় বিশাল বিশাল কালি প্রতিমার পুজো হতো দেখি। তখন আমাদের মনে একটাই কথা ঘুরপাক খেতে থাকে, ৩০-৪০ ফুট উচ্চতার জগদ্ধাত্রী বা কালি প্রতিমার পুজো হতে পারলে এমন বড় সরস্বতী প্রতিমার করতে অসুবিধা কোথায় । বিষয়টি নিয়ে গ্রামের কয়েকজন ব্রাহ্মন পুজারির সঙ্গেও কথা বলেন। পুজারিরাও আপত্তির কিছু জানান না । এর পরেই গোলাবাড়ি এলাকায় ৩০ ফুট উচ্চতার সরস্বতী প্রতিমা পুজোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বলে দেবাশিষ বাবু জানান।পাশাপাশি তিনি এও বলেন,’জামালপুর ব্লকে তাঁরাই প্রথম বৃহৎ সরস্বতী প্রতিমার পুজোকরে সবার নজর কাড়ে পেরেছেন ।’।