এইদিন ওয়েবডেস্ক,ইসলামাবাদ,২৩ জানুয়ারী : কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের রিজার্ভ কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভয়াবহ বন্যার কারণে ভেঙে পড়েছে পাকিস্তানের অর্থনীতি । খাদ্য সামগ্রী ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগাম ছোঁওয়া । দু’বেলার খাবার জোটাতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে পাকিস্থানের সাধারণ মানুষের । সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে । খাদ্যের জন্য কার্যত হাহাকার চলছে পাকিস্তানে । তাই কোথাও অল্প দামে খাবার বিক্রির খবর পেলেই সেখানে ভিড় উপচে পড়ছে । গত শনিবার সিন্ধ প্রদেশের মিরপুর খাস নামে একটি জায়গায় কম দামে আটা কিনতে গিয়ে পদপৃষ্ঠ হয়ে মারা গেছে হারিসং কোলহি নামে এক ব্যক্তি । তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ৬০ টাকা দরে ৫ কেজি আটা কিনতে গিয়েছিলেন। সাধারণ বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি আটা ১৩০ থেকে ১৪০ পাকিস্তানি মূদ্রায় বিক্রি হচ্ছে ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের টেক্সটাইল শিল্পের অবস্থাও শোচনীয় হয়ে পড়েছে । একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে এই শিল্পে নিয়োজিত অসংখ্য কর্মী হারিয়েছেন চাকরি । পাকিস্তান টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্যে অনুযায়ী, এই শিল্পে নিয়োজিত ৭০ লাখ মানুষ এযাবৎ চাকরি হারিয়েছেন ।
এদিকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক গত সপ্তাহে জানিয়েছিল,বিদেশি রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে। ২০১৪ সালের পর যা সর্বনিম্ন। যার প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে সৌদি আরব। তবে এই অর্থ ব্যবহার করা যাবে না। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে মাত্র তিন সপ্তাহের পণ্য আমদানি করতে পারবে ইসলামাবাদ ।
আটলান্টিক কাউন্সিলের পাকিস্তান ইনিশিয়েটিভের পরিচালক উজাইর ইউনুস বলেছেন, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এখন দ্বিগুণ। এমনকি ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার আগেও খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছিল। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগণ মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
ইউনুস জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে ইমরান খান ক্ষমতায় আসার আগে পূর্ববর্তী সরকার অনেক ঋণ করেছিল। এরপর এটি সামাল দিতে ২০১৯ সালে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ধর্ণা দেন ইমরান। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে এটি পিছিয়ে যায়। এরপর শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বিভিন্ন ঝামেলার কারণে পাকিস্তান এ ঋণ এখনো পায়নি। এখন ডলার ঘাটতির প্রভাব এতটাই তীব্র হয়েছে যে অতিপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীও আমদানি করতে বেগ পেতে হচ্ছে ইসলামাবাদকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে কয়েক দিন পর থেকে সাধারণ মানুষ ওষুধ পর্যন্ত পাবে না ।
এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে পাকিস্তানি নেতারা এখন বিভিন্ন দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাহায্যের আশায় । পাকিস্থানের সাম্প্রতিক বন্যার কারনে তাদের ১০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পশ্চিমি দেশগুলি । এখন সেই দিকেই তাকিয়ে আছে দুর্ভিক্ষ কবলিত এই দেশটি । এছাড়া সাহায্যের আশায় সৌদি আরব ও আরব আমিরাতে গিয়ে আকুতি জানিয়ে এসেছিলেন পাকিস্তানে নতুন সেনাপ্রধান আসিম মুনির । তবে তাকে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি বলে খবর ।।