জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),২০ জানুয়ারী : পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা পুরসভার পরিচালনায় শুক্রবার থেকে মহাসমারোহে শুরু হল শশতাব্দী প্রাচীন রটন্তী কালী পুজো এবং পুজোকে কেন্দ্র করে মেলা ও গুসকরা উৎসব। ফিতে কেটে উৎসবের সূচনা করেন মহকুমা শাসক (বর্ধমান উত্তর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস ও স্থানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার । উপস্থিত ছিলেন পৌরপ্রধান কুশল মুখার্জ্জী সহ অন্যান্যরা।
পুরসভার পক্ষ থেকে উৎসব উপলক্ষ্যে প্রথম দিনেই একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী বনানী সামন্ত। শিশু শিল্পী বিহান ও তৎসহ পৌলিমা ও সানন্দার নৃত্য যথেষ্ট আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু শীর্ষার অসাধারণ নৃত্য সবার প্রশংসা আদায় করে নেয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দেবব্রত শ্যাম। উৎসব উপলক্ষ্যে আগামী সাত দিন ধরে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তরা । মেলায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ প্রশাসন ও পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্ত ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এর আগে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে মঞ্চে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বরণ করে নেওয়া হয় ও হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহার। মহকুমা শাসক ও বিধায়ক ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আউশগ্রাম ১ সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অরিন্দম মুখোপাধ্যায়, ডিএসপি (ডি এণ্ড টি) বীরেন্দ্র কুমার পাঠক, আউসগ্রাম থানার আইসি আব্দুল রব, গুসকরা পুলিশ ফাঁড়ির ওসি নীতু সিং, পুরসভার বড়বাবু মধুসূদন পাল, চোংদার বাড়ির সদস্য শ্যামল চোংদার, ভাইস চেয়ারম্যান বেলি বেগম, চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী সহ সমস্ত কাউন্সিলাররা এবং শহরের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। একেবারে শেষলগ্নে উপস্থিত হন অতিরিক্ত জেলা শাসক সুপ্রিয় অধিকারী ।
শ্যামল বাবু বলেন,’আনুমানিক দেড় শতাধিক বছর আগে তাদের পরিবারের সদস্য মহাবিষ্ণু চোংদারের হাত ধরে রটন্তী কালী পুজো শুরু হয়। তখন ছিল তালপাতার ছাউনি। পরে সাধক রতনেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আরও বলেন- প্রথম দিকে ছোট আকারে মেলা হলেও ১৯৯৫ সালে গুসকরা পুরসভা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এই মেলার আকার ও গুরুত্ব বেড়ে যায়।’ বিধায়ক বলেন,’রটন্তী পুজো এবং মেলা গুসকরার গর্ব। সুতরাং এর ঐতিহ্য বজায় রাখার দায়িত্ব সবার। তিনি প্রত্যেককে মেলাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আবেদন করেন।’ অন্যদিকে পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন,’ভূমিপুত্র হিসাবে আমি এই পুজো ও মেলার গুরুত্ব জানি। তিনি আশা করেন মেলায় উপস্থিত প্রত্যেকেই সেই গুরুত্বের মর্যাদা দেবেন।’
প্রসঙ্গত,হিন্দু ধর্মে প্রতি অমাবস্যায় নানা নামে দেবী কালীর পুজো করা হয়। একমাত্র রটন্তী কালী পুজো হয় চতুর্দশীতে। শাস্ত্রমতে দেবী মহামায়া সঙ্গীদের ক্ষিদে মেটাতে ছিন্নমস্তা রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। দেবীর এই মহিমা চতুর্দিকে রটে গিয়েছিল। এই রটে যাওয়া থেকেই দেবী রটন্তী কালী নামে পরিচিত হয়েছেন ।।