জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),১৮ জানুয়ারী : মাঝে মাঝে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জী একটু কঠোর হয়ে কড়া মন্তব্য করলেই নড়েচড়ে বসে রাজ্যের ভূমিরাজস্ব দপ্তর। অবৈধ বালিঘাট বা ওভারলোড বালির গাড়ি ধরার তৎপরতা বাড়ে। ধরপাকড়ও শুরু হয়। এতদিন যারা নাকের ডগা দিয়ে ওভারলোড বালির গাড়ি নিয়ে যায় আশ্চর্যজনকভাবে তাদের কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়। ধৃত গাড়ি থেকে জরিমানা আদায় করা হয়। সরকারের রাজস্ব বাড়ে। দু’দিন পর সব চুপচাপ। নাহলে এমনিতে ভূমিরাজস্ব দপ্তরটি ‘দুর্নীতির আখড়া”, “ঘুঘুর বাসা” – এমনই অভিযোগ সাধারণ মানুষের।
খবরে প্রকাশ পূর্ব বর্ধমান জেলার নতুনহাটে লোচনদাস সেতুর কাছ থেকেই নাকি বালি মাফিয়ারা অজয় নদ থেকে অবৈধভাবে বালি তুলছে। এরফলে যে সেতুটি দুর্বল হয়ে পড়বে সেই ধারণা এই বালি মাফিয়াদের মত ভূমিরাজস্ব দপ্তরেরও একশ্রেণির আধিকারিকদেরও নাই। তাদের লক্ষ্য শুধু অতিরিক্ত আয়। তাতে সমাজের ক্ষতি হলেও তাদের কিছু যায় আসেনা। অবশ্য বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে তাদের সাময়িক তৎপরতা বাড়ে। আইওয়াশ করার জন্য দু’চারটে বালি তোলার যন্ত্র বা নৌকা আটক করা হয়। কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হয়। তারপর আবার একই ঘটনা ঘটে।
একই খবর সামনে আসে যে বালি মাফিয়াদের দাপটে নাকি নতুনহাটের উজানী মেলা আজ বিবর্ণ। অথচ ঢিল ছোড়া দূরত্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তরটি অবস্থিত। অথচ তাদের আচরণ অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের মত। দেখেও না দেখার ভান করে।
দপ্তর বা পুলিশের তৎপরতা বাড়লে ওভারলোড গাড়িগুলো তখন ‘ট্রাক’ পরিবর্তন করে। দিনের আলোর পরিবর্তে রাতের অন্ধকারে সেগুলো চলাচল করে। সরকারের রাজস্বের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তারও ক্ষতি হয়। এনএইচ-২বি সহ সমস্ত জাতীয় বা রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে চলাচল করা বালির গাড়ি থেকে এমনভাবে জল ঝরে পড়ে মনে হবে বৃষ্টি হয়েছে। অজয়, দামোদর, ময়ূরাক্ষী সহ যেসব নদী থেকে বালি তোলা হয় সেইসব নদী সংলগ্ন গ্রামের রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ। দশ টনের রোলার ব্যবহার করে তৈরি করা রাস্তার উপর দিয়ে ২৫-৩০ টন বালি বা পাথর নিয়ে গাড়ি ছুটলে রাস্তার অবস্থা কি হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। বৃষ্টির জল জমলে মনে হবে রাস্তার মধ্যেই গড়ে উঠেছে সুইমিংপুল। শুধু রাস্তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠেনা,
মাঝে মাঝে ওভারলোড গাড়ি ফেঁসে গিয়ে তীব্র যানজটেরও সৃষ্টি হয়। সমস্যায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিম মঙ্গলকোটের পালিগ্রামের জনৈক বাসিন্দা বললেন,’আমাদের গ্রামের ভিতর দিয়ে রাতের অন্ধকারে যেভাবে বালির গাড়িগুলো ছুটে যায় তাতে যেমন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তেমনি রাস্তারও যথেষ্ট ক্ষতি হয়। যেকোনো ব্যক্তি রাস্তার অবস্থা সরেজমিনে তদন্ত করে দেখতে পারেন ।’একই অভিযোগ কোগ্রামের ছাত্রছাত্রীদের। তাদের বক্তব্য বালি বা মাটি বোঝাই ট্রাক্টরগুলো এমন বিপজ্জনক গতিতে ছুটে যায় জীবন হাতে করে বিদ্যালয় যেতে হয়। মনে হয় যেকোনো সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওভার লোডের গাড়ির দৌরাত্ম স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে উদ্যোগী হোক রাজ্যের শাসকদল।।