এইদিন ওয়েবডেস্ক,বেইজিং,১৮ জানুয়ারী : বিগত ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীনের জনসংখ্যা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে । মঙ্গলবার সরকারী তথ্যে দেখা গেছে,বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি এখন জনসংখ্যা সংকটের মুখোমুখি । নতুন বছরে চীনকে সরিয়ে বৃহৎ জনবহুল দেশের তকমা পেতে চলেছে ভারত । ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট চীনে কর্মশক্তির বয়সের সাথে সাথে জন্মের হার রেকর্ড কমতে শুরু করেছে । এত দ্রুত হ্রাসের কারনে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে,যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে পারে জনসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ।
২০২২ সালের শেষে চীনের মূল ভূখণ্ডের জনসংখ্যা প্রায় ১,৪১১,৭৫০,০০০-এ দাঁড়িয়েছে, বেইজিংয়ের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (NBS) মঙ্গলবার জানিয়েছে, আগের বছরের শেষের তুলনায় জনসংখ্যা ৮৫০,০০০ কমেছে । গত বছর জন্মের সংখ্যা ছিল ৯.৫৯ মিলিয়ন । যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০.৪১ মিলিয়ন ।
শেষবার চীনের জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে, কারণ তখন দেশটি তার আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ দুর্ভিক্ষের সাথে লড়াই করেছিল, যা ‘গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড’ নামে পরিচিত । মাও সেতুং-এর ভ্রান্ত কৃষি নীতির ফলস্বরূপ সেই বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছিল । চীন তার কঠোর এক-সন্তান নীতির অবসান ঘটিয়েছে ১৯৮০-এর দশকে,অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভয়ের কারণে যা আরোপ করা হয়েছিল । ২০১৬ সালে দুই সন্তান এবং পরে ২০২১ সালে দম্পতিদের তিনটি সন্তান নেওয়ার অনুমতি দেওয়া শুরু করে। কিন্তু এটি চীনের জনসংখ্যাগত পতনকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ।
পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ঝিওয়েই ঝাং বলেছেন,’আগামী বছরগুলিতে জনসংখ্যা সম্ভবত আরও হ্রাস পাবে ।’ অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক শিউজিয়ান পেং এএফপিকে বলেছেন,’চীনা জনগণও দশক-দীর্ঘ এক সন্তান নীতির কারণে ছোট পরিবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে । চীনা সরকারকে জন্মদানকে উৎসাহিত করার জন্য কার্যকর নীতি খুঁজে বের করতে হবে, অন্যথায়, উর্বরতা আরও কমবে ।’
অনেক স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই দম্পতিদের সন্তান ধারণে উৎসাহিত করার ব্যবস্থা চালু করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, শেনজেনের দক্ষিণ মেগাসিটি এখন একটি জন্ম বোনাস অফার দিচ্ছে এবং শিশুর তিন বছর বয়স পর্যন্ত ভাতা প্রদান করা হচ্ছে । যে দম্পতি তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দেয় তারা সরকারিভাবে ৩,০০০ ইউয়ান বা ৪৪৪ ডলার পায়, আর তাদের তৃতীয় সন্তানের জন্য সেটা বেড়ে হয় ১০,০০০ ইউয়ান । দেশটির পূর্বে জিনান শহর পয়লা জানুয়ারী থেকে দ্বিতীয় সন্তানের দম্পতিদের জন্য ৬০০ ইউয়ান মাসিক উপবৃত্তি প্রদান করেছে ।
তবুও বিশ্লেষকরা যুক্তি দিয়েছেন যে আরও অনেক কিছু করা দরকার । গবেষক পেং এএফপিকে বলেছেন,’সন্তান লালন-পালনের খরচ কমানোর জন্য একটি ব্যাপক প্যাকেজ জরুরী । যা সন্তানের জন্মদান,প্রতিপালন এবং শিক্ষায় সহায়তা করবে । এছাড়া জন্ম দেওয়ার পরে মহিলাদের কাজের নিরাপত্তাহীনতা বিশেষভাবে মোকাবেলা করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন ।।