জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),১৫ জানুয়ারী : অবশেষে বর্ণময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে গত ১৪ ই জানুয়ারি তিনদিন ব্যাপী পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা বালিকা বিদ্যালয়ের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী উৎসব শেষ হলো। ১২ ই জানুয়ারি থেকে এই উৎসব শুরু হয়। প্রথম দু’টো দিন ছিল পুরোপুরি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে। তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১৪ ই জানুয়ারি দিনটি ছেড়ে দেওয়া হয় প্রাক্তনীদের হাতে এবং এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো বিদ্যালয়টি তার ছাত্রীদের জন্য গর্বিত। সম্ভবত এই প্রথম কোনো একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনীরা এত গুরুত্ব পেল।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারী ২০২২)শুরুটা হয়েছিল মলি, রিয়া প্রমুখ প্রাক্তনীদের হাত ধরে। মশাল হাতে তাদের এগিয়ে যাওয়া দেখে মনে হবে বর্তমান ছাত্রীদের কাছে তারা আলোর দূত। ওরা যেন অনুচ্চারিত ভাবে বলতে চাইছে – এভাবেই তোমরা আমাদের প্রিয় বিদ্যালয়ের সম্মান সর্বদা আলোকিত করে রাখবে। আবার শেষটাও হয়েছিল প্রাক্তনীদের হাত ধরে । তিনদিন ধরেই প্রাক্তনীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। শুধু তাই নয় শেষ দিনে যেভাবে তারা মঞ্চে উঠে নিজেদের মত করে স্মৃতিচারণ করতে থাকে সেটাও ছিল বিরল ঘটনা। পুরস্কার বিতরণ করার পরই বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে মঞ্চটা তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে সেই অতীতের মত অনুষ্ঠান মঞ্চ তারা মাতিয়ে তুলেছে। এদের কেউ সদ্য কেউবা দীর্ঘ ২০-২৫ বছর আগে এই বিদ্যালয় থেকে পাঠ শেষ করলেও সেদিনের মত কিশোরী সুলভ উচ্ছ্বাস আজও তাদের মধ্যে বজায় ছিল ।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একজন প্রাক্তনী যখন বলেন এই বিদ্যালয়ে আমার মা ও আমি পড়েছি, এখন আমার মেয়ে পড়ছে – হাততালিতে ফেটে পড়ে উপস্থিত দর্শক। অনুশীলনী ছাড়াই তাদের নৃত্য বা সঙ্গীত পরিবেশন দর্শকদের যথেষ্ট আনন্দ দেয়। ‘সুয়োরাণীর সাধ’ গল্প অবলম্বনে প্রাক্তন ছাত্রীদের পরিবেশিত নৃত্যনাট্য ছিল অসাধারণ। এছাড়াও প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রীদের যৌথ উদ্যোগে পরিবেশিত ‘তিলোত্তমা’ নাটক ছিল যথেষ্ট আকর্ষণীয়। এটাই ছিল অনুষ্ঠানের শেষ কর্মসূচি।
শেষ দিনে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্রীদের পুরস্কৃত করা হয়। সেখানেই শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজেন্দ্রপ্রসাদ আগরওয়াল বিদ্যালয়ের মধ্যে যে ফাঁকা মাঠটি পড়ে আছে তার অন্তত ৫০০০ বর্গফুট টাইল দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জানা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই এই কাজ শুরু হবে।
তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি কুশল মুখার্জ্জী বললেন, ‘সবার সহযোগিতা না থাকলে এতবড় একটা অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যেত না ।’ তিনি আরও বলেন,’নিজের দীর্ঘ জীবনে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ অর্থাৎ আট বছর একজন ছাত্রী এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেতে পারে। তারপর সে হয়ে যায় প্রাক্তন। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রতি তার আবেগ বিন্দুমাত্র কমেনা। তাই আমরা সেই আবেগকে সম্মান জানিয়ে প্রত্যেক প্রাক্তনীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাই। বিভিন্ন কারণে অনেকেই আসতে পারেননি। যারা এসেছিলেন তারা নিজেদের মত করে উপভোগ করেছেন। এটা আমাদের বড় পাওনা।’।