জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,০৯ জানুয়ারী : ছাত্র স্বার্থে রাজ্য সরকার প্রবর্তিত বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে ছাত্রদের সচেতন করার লক্ষ্যে গত বছর ২৭ শে ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তি মারফত রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর বর্তমান বছরে রাজ্য সরকার পোষিত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ২ রা জানুয়ারি থেকে ৭ ই জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন যুগোপযোগী অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য নির্দেশ দেন এবং কি ধরনের অনুষ্ঠান করতে হবে তার একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনাও দেয়।এছাড়া স্বাস্থ্য সচেতনতা,পরিচ্ছন্নতা ও সাংস্কৃতিক বিষয়েও ছাত্রদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অভিভাবকদেরও সচেতন করার কথা বলা হয়।
শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ মেনে গত ৭ ই জানুয়ারি শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় বর্ধমানের রথতলা মনোহর দাস বিদ্যানিকেতন সেই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে একদিনের টিচার্স ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম পালন করে। অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল “ওয়াশ” অর্থাৎ ওয়াটার, স্যানিটেশন এবং হাইজিন। সেমিনারটি দুটি অর্ধে বিভক্ত ছিল – প্রথম অর্ধ মধ্যাহ্ন ভোজের আগে পর্যন্ত হয় এবং পরে বিকেল চারটে পর্যন্ত সেটা চলে।
রিসোর্স পার্সন হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ এর স্টেট কনসুলেটর বিশ্বজিৎ মাইতি এবং দিল্লী আইটির রিসার্চ এসোসিয়েট ড. অন্তরা সরকার। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় থেকে প্রায় ১৫০ জনের মতো সহ-শিক্ষক ও শিক্ষিকা এবং প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত ছিলেন ।
পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’র মাধ্যমে দুই রিসোর্স পার্সন আলোচ্য বিষয়গুলি উপস্থিত শ্রোতাদের সামনে সহজ সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘কমপ্লান্ট মডেল স্কুলের’ ভূমিকা কী হওয়া উচিত এবং তার গুরুত্বও তারা সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন। এক সময় আলোচনা সভা উচ্চমাত্রায় পৌঁছে যায়।
একটানা আলোচনা যাতে শ্রোতাদের কাছে বিরক্তিকর না হয়ে ওঠে তার জন্য আলোচনার মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল। অনুষ্ঠানে টাউন স্কুলের (জুনিয়ার) শিক্ষিকা অন্তরা দাঁ স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন এবং পিয়ালী পাল পরিবেশন করেন সঙ্গীত। দুজনেই উপস্থিত সকল শিক্ষক- শিক্ষিকার প্রশংসা কুড়িয়ে নেন।
সঞ্চালনার গুণে এই ধরনের ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠান সরস হয়ে ওঠে। যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সেই কাজটিই করেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হাটগোবিন্দপুর বিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ‘বৃক্ষবন্ধু’ সোমনাথ গুপ্ত। সঞ্চালনার মাঝে মাঝে তার টুকরো টুকরো প্রাসঙ্গিক মন্তব্য অনুষ্ঠানে অন্যমাত্রা এনে দেয়।
সেমিনারটি আয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে আয়োজক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাগত ভাষণে সেমিনারের বিষয়বস্তু ও বর্তমান সময়ে তার প্রয়োজনীয়তা সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন – বর্তমানে বিদ্যালয়গুলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব। এছাড়া সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে সন্তানসম ছাত্র- ছাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে সার্বিক জনস্বাস্থ্যের প্রতি তিনি গুরুত্ব দেন। তিনি আরও বলেন,’প্রাপ্ত সুযোগকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করে কিভাবে সর্বাধিক সুফল পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে অবহিত করার জন্যই এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। তার আশা – এই সেমিনার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা প্রত্যেকেই নিজ নিজ বিদ্যালয়ে সফলভাবে প্রয়োগ করতে পারবেন ।’।