এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,০৯ জানুয়ারী : প্রতিবেশীরা দয়াপরবশ হয়ে কিছু দিলেই তবে জোটে দু’বেলার খাবার । করগেটের ছাউনি আর বাঁশের দরমা দেওয়া ঘরে বসবাস । বর্ষায় ঘরে জল ঢোকে । শীতে দিবারাত্রি হু হু করে ঢোকে জমিয়ে দেওয়ার মত ঠান্ডা বাতাস । এই অসহায় অবস্থা সত্ত্বেও মেলেনি কোনো সরকারি সাহায্য । বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদরের সিনেমা হল এলাকায় বসবাসকারী দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিধবা বৃদ্ধা চিকন ডালা চাকমার (৭০) এই নিদারুন কষ্টের জীবন দেখেও মন গলেনি দেশের মুসলিম শাসকের । এখন মৃত্যুর প্রতীক্ষায় কাটছে তাঁর জীবন ।
জানা গেছে,১৯৮৮ সালে চিকন ডালা চাকমার স্বামী টেংগু চাকমা মারা যান । কোনো সন্তান নেই তাঁর । স্বামীর রেখে যাওয়া দীঘিনালা উপজেলা সদরের সিনেমা হল এলাকার ওই ঝুপড়ি ঘরটাই তাঁর একমাত্র আশ্রয়স্থল । যতদিন শরীরে ক্ষমতা ছিল ভিক্ষা করে নিজের ভরনপোষণ জোটাতেন । কিন্তু বয়সের ভারে আর ভিক্ষা করতে যেতে পারেন না । আশপাশের বাসিন্দাদের সরকারি প্রকল্পে ঘর দেওয়া হলেও বৃদ্ধার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। এমনকি বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড পর্যন্ত দেওয়া হয়নি তাঁকে । নিদারুন বঞ্চনার শিকার চিকন ডালা চাকমার অন্ন সংস্থান হয় প্রতিবেশীদের দয়ায় । বৃদ্ধা বলেন,’বয়স্ক ভাতার বা বিধবা ভাতার কার্ড দিলে অন্তত এক বেলার খাবারটা জুটতো । কিন্তু কোন পাপে আমি সেই সরকারি সুবিধা পেলাম না জানি না ।’ আক্ষেপ করে তিনি বলেন,’এখন মরতে পারলে এই জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে যাই ।’
প্রতিবেশী ধনক্কো চাকমা,মিলি চাকমারা বলেন, ‘চিকন ডালা খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে আছেন । তাঁর আপনজন বলতে কেউই নেই। ঘরটিও খুবই ভাঙাচোরা । প্রতিবেশীরা দিলেই তবে খেতে পায় ।’ তাঁরা বলেন,ওই বৃদ্ধার জন্য সরকারি পাকা ঘর ও একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড হলে অনেক উপকার হত ।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন,’চিকন ডালা চাকমার অসহায় অবস্থার কথা শুনে তিনি সরেজমিনে গিয়েছিলেন । তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর তৈরির পাশাপাশি বয়স্ক ভাতার অনুদানের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি উদ্যোগী হবেন ।
কিন্তু তিন দশকের অধিক সময় ধরে কেন ওই বৃদ্ধা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেন ? এর উত্তরে স্থানীয় সংখ্যালঘুরা বলেন, আসলে ভোটের মরশুম চলছে । তাই সংবাদ মাধ্যমে বৃদ্ধার খবর প্রকাশিত হওয়ায় তাঁকে সরকারি অনুদান পাইয়ে দিতে তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । তাঁদের অভিযোগ,বাংলাদেশের অসংখ্য দরিদ্র সংখ্যালঘুরা নিদারুন দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন । কিন্তু তাঁদের খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত না হওয়ায় সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেছেন ।।