প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ জানুয়ারি : তৃণমূল কংগ্রেসের সভার মঞ্চে জ্বলজ্বল করছিল দলের সুপ্রিপো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলেয় যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। সেই মঞ্চ থেকেই গত পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী পদের টিকিট কেনা বেচা হয়েছিল বলে প্রকাশ্যে দাবি করলেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারি শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি ফারুক আবদুল্লা । এমন দাবি করার সাথে সাথে তিনি দলেরই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডলের জেলবাসের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে মেমারির এক কাউন্সিলার ও এক নেতাকে উদ্দেশ্য করে হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগের তৃণমূল নেতার এমন দাবি ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।বিরোধীরা বলছেন,তাঁরা এতদিন যে কথা বলে আসছিলেন তাতে তৃণমূলের নেতাই শিলমোহর বসিয়ে দিলেন।
মেমারি শহর তৃণমূল কংগ্রেস শনিবার বিকালে মেমারির চকদিঘী মোড় এলাকায় সভার আয়োজন করে । সেই সভায় মেমারি শহর তৃণমূলের সভাপতি স্বপন ঘোষাল ছাড়াও ফারুক আবদুল্লা সহ অন্য অন্য বেশ কিছু নেতা উপস্থিত থাকেন।মেমারি শহর তৃণমূলের সংখ্যলঘু সেলের সভাপতি ফারুক আবদুল্লা সেই সভায় বক্তব্য রাখতে উঠে আগা গোড়াই নিজের দলের এক কাউন্সিলার ও এক নেতার বিরুদ্ধে সুর চড়ান । নাম মুখে না এনে ওই কাউন্সিলারকে তিনি ক্লাস টু পাশ কাউন্সিলার বলে কটাক্ষ করেন। এমনকি তিনি এও বলেন,“ সই করতে গেলে ক্লাস টু পাশ ওই কাউন্সিলার নাকি কলন ভেঙে ফেলেন। পাশাপাশি তিনি ওই কাউন্সিলারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে তুমি কাউন্সিলার হয়েছো । তোমার নেতাও ১কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছে ।এর পরেই ফারুক তাঁর দলের দুই নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনব্রত মণ্ডলের জেলবাসী সওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওই দুই কাউন্সিলারডের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে য়াখেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন ,“আপনার কথা বলা সাজে না। বেশী কথা বলবেন না। নয়তো আপনার কথা আপনার বুকের মধ্যে চেপে দেব “। ফারুক আবদুল্লা যখন প্রকাশ্য সভামঞ্চ থেকে দল বিরোধী এইসব কথা বলছেন তখন তার প্রতিবাদ না করে উল্টে মঞ্চে থাকা নেতারা হাততালি দিয়ে ফারুককে সমর্থন জানান ।
তৃণমূল নেতার বক্তব্য শুনুন :-
তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার টিকিট কেনাবেচা হয় ,একই তথ্য প্রকাশ্য সভা থেকে ফাঁস করার পর রাতে ফারুক আবদুল্লাকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন।তিনিয়শুধু বলেন,“ রাজনীতিতে সবই শোনা কথা থাকে । রাজনীতিতে সবই চলে। তাই আমি বলেছি।এর বাইরে আর কোন কথা বলতে অস্বীকার করেন ফারুক আবদুল্লা”। আর মেমাররি শহর তৃণমূলের সভাপতি স্বপন ঘোষাল বলেন,“ফারুক যখন মঞ্চে বক্তব্য রাখতে ওঠে তখন আমি মঞ্চে ছিলাম। একটু পরেই মঞ্চ থেকে আমি নেমে যাই । তবে ফারুক তৃণমূলের কাউন্সিলার পদ প্রাথী হওয়ার টিকিট কেনা বেচার যে কথা বলেছে সেটা আমিও শুনেছি’।স্বপন বাবু জানান, “ফারুকের বক্তব্য তিনি সমর্থন করেন না । কারণ ফারুক দলের সম্পর্কে সঠিক বলে নি ।তাই ফারুকের মণ্তব্যের বিষয়টি নিয়ে তিনি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন“।তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন,“এমন মন্তব্য দল বিরোধী । যিনি এইসব মন্তব্য করেছেন তার দায় তাঁকেই নিতে হবে। দলের উচ্চ নেতৃত্ব এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে ।’
এদিকে ফরুক আবদুল্লার মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের নেতারা দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেও বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী নেতৃত্ব । জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’তৃণমূলের আসল স্বরুপ প্রকাশ্যে এনে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা ফারুক আবদুল্লা । টাকা ছাড়া তৃণমূলের কেউ কিছু বোঝেন না। শুধু সরকারী প্রকল্প থেকে কাটমানি খাওয়া নয়, পুরসভা ভোট থেকো শুরু করে যো কোন ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হতে হলে নোটা টাকা দিয়েই টিকিট কিনতে হয় । এটা নিয়ে এতদিন বিরোধীরা যা বলে আসছিল তাতেই তৃণমূল নেতা ফারুক আবদুল্লা শিলমোহর বসিয়ে দিয়েছেন।’ একই মন্তব্য সিপিএম নেতৃত্বেরও ।।