জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বোলপুর,০৩ জানুয়ারী :বছরের দ্বিতীয় দিন স্থানীয় ‘বাসন্তী কলা কেন্দ্র’ এর শিল্পীদের নৃত্য-গীতে উত্তাল হয়ে উঠল বীরভূমের বাসপাড়া। উপলক্ষ্য মিলনমেলা ও লোকসংস্কৃতি উৎসব ২০২৩। সৌজন্যে বাসপাড়া মিলনমেলা ও ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। তাদের পরিচালনায় এবছর এই উৎসব সপ্তম বছরে পদার্পণ করল। আগামী ১০ ই জানুয়ারি পর্যন্ত এই মেলা চলবে বলে জানিয়েছে উদ্যোক্তরা ।
চিরাচরিত প্রথা মেনে গত পয়লা জানুয়ারি নতুন বছরের প্রথম দিনে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। উপস্থিত ছিলেন স্হানীয় সাংসদ অসিত মাল, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ (রাণা) ও স্থানীয় বিধায়ক বিধানচন্দ্র মাজি এবং যার সক্রিয় উদ্যোগে এতবড় অনুষ্ঠান হচ্ছে সেই মীর মাখন আলি এবং সবার উপরে আছেন আব্দুল কেরিম খান।
উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে উদ্বোধনের দিন একটি স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। সিয়ান হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক শাখার সহযোগিতায় শিবির থেকে ৩০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্তদাতাদের মধ্যে প্রায় ৭৫ জন মহিলা ছিলেন। সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রক্তদান শিবিরকে কেন্দ্র করে স্হানীয়দের মধ্যে প্রচুর উৎসাহ দ্যাখা যায়। প্রয়োজনীয় কিটের অভাবে অনেকেই রক্তদান করতে না পেরে বিষণ্ণ মনে বাড়ি ফিরে যান। যদিও জানা যাচ্ছে পরবর্তীকালে উদ্যোক্তারা তাদের জন্য আর একটি শিবিরের আয়োজন করবে।
মেলার দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার জানুয়ারির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল ‘বাসন্তী কলা কেন্দ্র’-এর ক্ষুদে শিল্পীদের নৃত্য ও সঙ্গীত প্রদর্শন। সঙ্গীত শিক্ষিকা তৃণা মুখার্জ্জীর তত্ত্বাবধানে এক ঝাঁক নতুন প্রতিভার সমবেত সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তারপর একে একে শুভশ্রী, জয়শ্রী, রাণী, অঙ্গনা, ঈশান, সোনিয়া, শ্রদ্ধা, গোপাল, রুদ্র, নভনীল, অনন্যাদের নৃত্য ও সঙ্গীত দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধের মত উপভোগ করে। মাত্র পাঁচ বছরের ক্ষুদে ঈশানের ‘লাল ঝুটি কাকাতুয়া….’ দর্শকদের হতবাক করে দেয়। ‘আমি কলকাতার রসগোল্লা…’ মঞ্চে কে নৃত্য পরিবেশন করছে – দেবশ্রী রায় না রাণী – এটা ভাবতে দর্শকদের বেশ কিছুটা সময় চলে যায়। বাস্তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ ছিল অসাধারণ।
অনুষ্ঠানের শেষ শিল্পী ছিলেন ‘বাসন্তী কলা কেন্দ্র’ এর সঙ্গীত শিক্ষিকা তৃণা মুখার্জ্জী। অতীতের মত এবছরও তিনি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করেন। সবচেয়ে বড় চমক অপেক্ষা করছিল অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে। দর্শকদের অনুরোধে একটানা সঙ্গীত পরিবেশন করে ক্লান্ত তৃণাকে কিছুটা সময় বিশ্রাম দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানের সঞ্চালক রাজা মাস্টার নিজেই সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। পরে তার ও তৃণার ডুয়েট সঙ্গীত দর্শকদের এত মুগ্ধ করে যে দর্শকদের চাপে তারা নির্ধারিত সময়ের পরও অতিরিক্ত একঘণ্টা সঙ্গীত পরিবেশন করতে বাধ্য হন এবং উদ্যোক্তারাও তাদের সেই সময় দেন। রাজা মাস্টারের সঞ্চালনা অনুষ্ঠানটিকে অন্য মাত্রা দেয়।
অনুব্রত মণ্ডল ও কেরিম খানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মাখন বাবু বললেন,’ আমাদের লক্ষ্য ছিল দর্শকদের আনন্দ দেওয়া। যেভাবে আজকের অনুষ্ঠানে দর্শকরা সাড়া দিয়েছেন তাতে আমি নিশ্চিত তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আশাকরি পরবর্তী অনুষ্ঠানগুলি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করবে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুশৃঙ্খলভাবে সমাপ্ত করতে মুখ্য ভূমিকা নেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে দলের কর্মীদের তিনি শুভেচ্ছা জানান ।।