এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেহেরান,০২ জানুয়ারী : নববর্ষের পার্টিতে যোগ দেওয়ায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় ফুটবলারকে গ্রেফতার করেছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পস (IRGC) । ইরানের তাসনিম বার্তা সংস্থা ফুটবলার আটকের বিষয়ে বলেছে,’রবিবার রাতে দামাভান্দ শহরে নারী ও পুরুষদের একটি পার্টিতে তেহরানের একটি বিশিষ্ট ফুটবল ক্লাবের বেশ কয়েকজন বর্তমান ও প্রাক্তন খেলোয়াড়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘এই খেলোয়াড়দের মধ্যে কিছু অ্যালকোহল সেবনের কারণে মত্ত অবস্থায় ছিলেন । তবে ঠিক কতজন ফুটবলারকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি ।’ ইরানের ইসলামিক আইনে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে মিলন এবং মদ্যপান নিষিদ্ধ । ইরানের আইন শুধুমাত্র অমুসলিমদের ধর্মীয় উদ্দেশ্যে মদ পানের অনুমতি দেয় । বিপরীত লিঙ্গের সাথে নাচ হারাম বলে মনে করে ইরান সরকার ।
বছর বাইশের কুর্দি তরুনী মাহাসা আমিনিকে পুলিশ নৃশংসভাবে পিটিয়ে মারার পর থেকে বিগত প্রায় ৫ মাস ধরে গোটা ইরান জুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে । ১৯৭৯ সাল থেকে ইরানে শাসনকারী ধর্মতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য যাজকীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ একটি বিস্তৃত আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ অশান্তিতে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে এবং কয়েক হাজার নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । গত মাসে বিক্ষোভের সাথে জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ২৩ বছরের দুই তরুনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় । ওই দুই তরুনসহ ইতিমধ্যে ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে । বিক্ষোভের সমর্থনে সোচ্চার হওয়ার পরে বেশ কয়েকজন বর্তমান এবং প্রাক্তন ফুটবলার পাশাপাশি অন্যান্য ক্রীড়াবিদ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ।
এদিকে সংস্কারবাদী সংবাদপত্র শার্গ রবিবার ৭৩ বছর বয়সী সাংবাদিক সামিমির মুক্তির খবর দিয়েছে । যাকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং তেহরান থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পূর্বে সেমনানে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। শার্গ তার মুক্তির তারিখ নির্দিষ্ট করেননি । তবে মেহর নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, সামিমিকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য কারাগার ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কার্যকলাপ চালানোর সন্দেহে ২০২০ সালের মে মাস থেকে জেলবন্দি ছিলেন । ডিসেম্বরে আমিনীর মৃত্যুর পর প্রতিবাদ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে কারাগার থেকে তিনি একটি বার্তা দেন। সামিমি ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের আগে ও পরেও বহুবার জেল খেটেছেন ।
এদিকে রবিবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আইআরএনএ জানিয়েছে যে এই সপ্তাহান্তে সেমিরম শহরে বিক্ষোভ চলাকালীন ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে । নিহত সেনা ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের সাথে যুক্ত আধাসামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা । আইআরএনএ বলেছে যে শনিবার গভীর রাতে বিক্ষোভকারীরা রাজধানী থেকে প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে মধ্য ইসফাহান প্রদেশের শহরে জড়ো হয়েছিল। তারা সেমিরমের আঞ্চলিক প্রশাসন ভবন এবং অন্যান্য অবস্থানের সামনে সমাবেশ করে । নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে গেলে ভিড়ের মধ্য থেকে ওই সেনাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।।