এইদিন ওয়েবডেস্ক,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),৩১ ডিসেম্বর : তিন বিধায়ককে পাশে বসিয়ে গত ২৯ শে ডিসেম্বর পূর্ব বর্ধমানের ২৩ টি ব্লকের মধ্যে ২০ টি ব্লকের নতুন ব্লক কমিটি ঘোষণা করলেন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় । তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রথমেই বলে দিয়েছিল বিধায়ক ও ব্লক সভাপতি বসে এই কমিটির সদস্যদের নাম ঠিক করবে। সেই নির্দেশ মেনে এই কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে বিধায়ক ও ব্লক সভাপতি একই মেরুতে অবস্থান করছে সেখানে কোনো সমস্যা না হলেও অন্যত্র হয়েছে। যতই তৃণমূল রাজ্য বা জেলা নেতৃত্ব দাবি করুক না কেন তাদের দলে কোনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নাই সেটা সাধারণ মানুষের কাছে কখনই বিশ্বাসযোগ্য হয় না। কারণ দক্ষিণপন্থী দলের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব । একরাশ প্রশ্নকে সামনে রেখে আউশগ্রাম ১ ব্লকের তৃণমূলের নতুন ব্লক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটির সদস্য হিসাবে ৫২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সহ-সভাপতি হিসাবে রাজ্য নেতৃত্ব যার নাম কিছুদিন আগে ঘোষণা করেছিল অদ্ভুত ভাবে তার নাম কমিটির তালিকায় নাই। তাহলে কি তাকে সহ-সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে? যদিও শুরু থেকে তার নাম নিয়ে একটা বিতর্ক থেকেই গিয়েছিল। ব্লক সভাপতিকে সম্বর্ধনা দেওয়া হলেও তাকে কিন্তু দেওয়া হয়নি।
দেখা যাচ্ছে তালিকার প্রথম ত্রিশ জনের নাম যে প্যাডে ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে সভাপতি হিসাবে অরূপ সরকারের নাম রয়েছে। বাকিদের নাম যে প্যাডে ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে সভাপতি হিসাবে সেখ সালেক রহমানের নাম রয়েছে। তাহলে মূল সভাপতি কে? এনিয়ে এলাকায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও এনিয়ে দু’তরফের কোনো নেতাই মিডিয়ার সামনে মুখ খুলতে রাজি হননি ।
গুসকরা পুরসভা বাদ দিয়ে সাতটি অঞ্চল নিয়ে আউশগ্রাম ১ নং ব্লক গড়ে উঠেছে। গত বিধানসভা ভোটে চারটিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল এবং তৃণমূল এগিয়ে ছিল তিনটিতে। সেখানেও স্বচ্ছতা নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন ছিল। যদিও বুথ হিসাবে বিজেপি ৬৮ টিতে এবং তৃণমূল ৬৪ টিতে এগিয়ে আছে। এমনকি লোকসভা ভোটের সময় ফলাফল কার্যত একই ছিল। বিজেপি এখানে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তার বহিঃপ্রকাশ সাম্প্রতিক দেখা যাচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ মূলত স্থানীয় নেতৃত্বের তোলাবাজী ও উদ্ধত আচরণের জন্যই তৃণমূলের এই ভরাডুবি। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা সেই কারনে প্রশ্ন তুলছে,তারপরও কোন যাদুবলে তৃণমূল নেতৃত্ব ব্যর্থদের উপর ভরসা রাখল ? অথচ তৃণমূলের শীর্ষ স্তর থেকে বারবার বলা হচ্ছিল যারা নিজের অঞ্চলে বা বুথে জিততে পারবে না তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ বাস্তবে সেটা হয়নি। যদিও তাঁরা এযাবৎ নতুন কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখায়নি । কিন্তু তাদের মধ্যে যে সুপ্ত ক্ষোভ রয়েছে তা অনস্বীকার্য । আর এর ফলশ্রুতি হিসাবে অনেকেই ইতিমধ্যে ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয়ও হয়ে যাচ্ছেন । যা পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাসকদলের কাছে একটা অশনিসংকেত ।
স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের কথায়,পরাজয়ের সব দায়িত্ব সর্বদা নীচু তলার নেতৃত্বের থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ পালন করতে বাধ্য হয়। শীর্ষ নেতৃত্বের অস্বচ্ছ ভাবমূর্তি অনেক ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা ডেকে আনে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে,একটা রাজনৈতিক দল কাকে পদ দেবে বা কাকে দেবে না সেটা সম্পূর্ণ তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। যেহেতু এটা শাসক দলের ব্লক কমিটি এবং মূলত তারাই প্রশাসনের উপর আক্ষরিক অর্থে খবরদারি চালায়,সাধারণ মানুষের সেক্ষেত্রে নতুন কমিটি নিয়ে একটা আগ্রহ থাকবেই। সুতরাং মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অবশ্যই বিবেচ্য হওয়া উচিত। অজানা আতঙ্কে প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও সাধারণ মানুষ ইভিএমে তাদের মত প্রকাশ করে। সেক্ষেত্রে গত লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের ফলাফল কিন্তু যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ ।।