জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),২৩ ডিসেম্বর : শুক্রবার যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের গণপুর গ্রামে নরেন্দ্র স্মৃতি জনকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী নরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ১১৩ তম জন্মদিন পালিত হল ।জন্মদিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য ক্লাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকালে ক্লাব চত্বরে ক্লাব সদস্য সহ অন্যান্যরা নরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন। এরপর বের হয় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। আদিবাসী নৃত্য, সঙ্গীত ইত্যাদি সমৃদ্ধ শোভাযাত্রা সমগ্র গণপুর গ্রাম প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ক্লাবে ফিরে আসে।
প্রসঙ্গত,নরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসেবী। দেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করে তিনি জেলও খেটেছেন। মঙ্গলকোটের গণপুর ও আউসগ্রামের সুয়াতার বুকে তার কর্মকাণ্ড বিরাজ করে। তাই মৃত্যুর প্রায় পঞ্চাশ বছর পরেও এলাকার বাসিন্দারা আজও তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
নরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এদিন চারটি দল নিয়ে এক দিবসীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সেমিফাইনালে আয়োজক নরেন্দ্র স্মৃতি জনকল্যাণ সমিতি সাডেন ডেথে ৮-৭ গোলে হেমরম একাদশকে এবং অন্য সেমিফাইনালে জয়পুর আরজেএস-৯ স্টার ৩-২ গোলে বেঙ্গল টাইগারকে পরাস্ত করে ফাইনালে ওঠে। চূড়ান্ত পর্বের ম্যাচে আরজেএস-৯ স্টার ১-০ গোলে আয়োজক নরেন্দ্র স্মৃতি জনকল্যাণ সমিতিকে পরাস্ত করে বিজয়ী হয়। ফাইনালের সেরা গোলকিপার নির্বাচিত হন গণপুরের নিমাই হালদার এবং সেরা খেলোয়ার নির্বাচিত হন জয়পুরের তরুণ বাগ্দী।
এছাড়াও মহিলাদের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ
ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণ করে বীরভূমের রজতপুর মহিলা ফুটবল ক্লাব ও গুসকরা আমরা সবুজ। নির্দিষ্ট সময়ে ফলাফল গোলশূন্য ছিল। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে আমরা সবুজ ৪-৩ গোলে জয়লাভ করে। আমরা সবুজের নেহা মাহাতো সেরা খেলোয়ার নির্বাচিত হন। ক্লাবের পক্ষ থেকে খেলা শুরুর আগে উভয় দলের প্রতিটি খেলোয়ারের হাতে জার্সি তুলে দেওয়া হয়। উপস্থিত অতিথিরা উভয় দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য খেলার ফাঁকে একটি জনপ্রিয় বাংলার গানের তালে নৃত্য প্রদর্শন করে গ্রামের মেয়ে বর্ণালী ও শিল্পী এবং আদিবাসী নৃত্য প্রদর্শন করে গ্রামের মেয়ে পার্বতী, শর্মিলা, কবিতা, ঝুমা, দেবিকা ও সুস্মিতা। তাদের প্রত্যেকের নৃত্য যথেষ্ট আকর্ষণীয় ছিল।
ক্লাবের পক্ষ থেকে ১৩০ জন ছাত্র-ছাত্রীর হাতে স্কুল ব্যাগ তুলে দেওয়া হয়। ক্লাবের হয়ে একসময় মাঠ কাঁপানো প্রবীণ খেলোয়ারদের বিশেষ সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। তিনজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্নের হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহার। এছাড়া গণপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এই বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ‘স্টার’ পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কৃত করা হয় । ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রথমবারের জন্য প্রায় চল্লিশ জনের সৃষ্টি সমৃদ্ধ উৎসব সংখ্যা ‘তবুও প্রয়াস’ প্রকাশিত হয়। প্রকাশ করেন মঙ্গলকোট সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক জগদীশ বারুই এবং তাকে সহযোগিতা করেন সবিতাব্রত লাহা সহ অন্যান্যরা। পত্রিকাটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ মুখার্জ্জী ও
সহ-সম্পাদিকা কুহেলী মুখার্জ্জী।
আজকের অনুষ্ঠানে সেরা আকর্ষণ ছিল প্রবীণদের ফুটবল। এদের অধিকাংশের বয়স ষাট অতিক্রম করে গ্যাছে, কেউ বা ষাটের দোড়গোড়ায় অপেক্ষা করছেন। এখনো এদের ফিটনেস যথেষ্ট আকর্ষণীয়। যদিও খেলাটি গোলশূন্য থাকে। আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মঙ্গলকোট সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক জগদীশ বারুই, গণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দূর্গাপ্রসন্ন গোস্বামী, কাশেমনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সবিতাব্রত লাহা, চাণক পঞ্চায়েত প্রধান মায়া মাজি, ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক কাশীনাথ পাল ও চন্দনা চ্যাটার্জ্জী, যুগ্ম সভাপতি জনার্দন জ্যোতি ও জয়প্রকাশ মুখার্জ্জী সহ ক্লাবের প্রায় সমস্ত সদস্য-সদস্যরা । বিডিও উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে সমস্ত ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ক্লাব সম্পাদক কাশীনাথ পাল বললেন,’নরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ফুটবল ও সাংস্কৃতিক প্রেমী। তার আদর্শকে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য আমরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।’।