শ্যামসুন্দর ঘোষ,পূর্বস্থলী(পূর্ব বর্ধমান),২২ ডিসেম্বর : বৃদ্ধ বাবা-মা,স্ত্রী আর শিশুসন্তানকে নিয়েই ছিল পেশায় তাঁত শিল্পী যুবকের জগৎ । পরিবারে সীমাহীন অভাব থাকলেও প্রিয়জনদের মুখ চেয়ে সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করতেন তিনি । কিন্তু দূয়ারে সরকার ক্যাম্পে গিয়ে মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর থেকেই শোকে ভেঙে পড়েন তিনি । যদিও শ্মশানে গিয়ে যথাযথ মর্যাদায় মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্নও করে আসেন । কিন্তু মায়ের শোক কাটিয়ে উঠতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ওইদিন রাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ছেলে । মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরতপুর অঞ্চলের গোয়ালপাড়া এলাকায় । মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে একই পরিবারে জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম । বাকরুদ্ধ পরিবার পরিজন ।
জানা গেছে,নিহত যুবকের নাম ছিদাম দাস (৩৭) । বছর খানেক আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। মা মায়ারানী দাস,বাবা,স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার । বাড়িতে হাতে বোনা তাঁত রয়েছে তাঁর । সেই উপার্জনেই অতিকষ্টে চারজনের সংসার চালাতেন তিনি ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,শুক্রবার পারুলডাঙ্গা নসরতপুর উচ্চবিদ্যালয়ে দুয়ারে সরকারে ক্যাম্প ছিল । সরকারি পরিষেবা পাওয়ার আশায় ক্যাম্পে গিয়েছিলেন মায়ারানীদেবী । কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় হঠাৎ তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন । এরপর ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলেন্টিয়াররা তাঁকে উদ্ধার করে তড়িঘড়ি কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন । কিন্তু বুধবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় । এদিকে মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকে ভেঙে পরেছিলেন ছেলে ছিদাম দাস । তবুও পরিজন ও গ্রামবাসীদের সহায়তায় মায়ের মৃতদেহ নবদ্বীপ শ্মশানঘাটে নিয়ে গিয়ে দাহ করে আসেন তিনি । দাহ করে রাত্রি প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ তাঁরা বাড়ি ফিরে আসেন । আর তার কিছুক্ষণ পরেই ছেলেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান । এদিকে বিধবা পুত্রবধু ও নাবালক নাতিকে নিয়ে অতান্তরে পড়ে গেছেন ছিদাম দাসের বৃদ্ধ বাবা । স্থানীয় গ্রামবাসীদের দাবি, ওই দুঃস্থ পরিবারটিকে সরকারিভাবে সহায়তা করা হোক ।।