দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২১ ডিসেম্বর : প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বা আবাস প্লাস যোজনার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায় মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার সেরুয়া গ্রামে স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী মাধবী গড়াই ও ওই গ্রামের আশাকর্মী অর্চনা মালিককে গ্রামবাসীদের হাতে চুড়ান্ত হেনস্থা হতে হয়েছিল । এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি ও আশাকর্মীরা । দুই কর্মীকে হেনস্থার প্রতিবাদে বুধবার ভাতারে বিক্ষোভ মিছিল করলেন শতাধিক অঙ্গনওয়াড়ি ও আশাকর্মী । তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন চুড়ান্ত তালিকা তৈরি করলেও সার্ভের দায়িত্বে থাকা মহিলা কর্মীদের জনরোষের মুখে পড়তে হচ্ছে । ফোনে হুমকির পাশাপাশি শারিরীক ভাবে নিগ্রহ পর্যন্ত করা হচ্ছে । অথচ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা হলেও ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর পৌছাচ্ছে পুলিশ । সেই কারনে আবাস যোজনার সার্ভের কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে এদিন বিডিওর কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিলেন প্রতিবাদী অঙ্গনওয়াড়ি ও আশাকর্মীরা ।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় রাজ্য জুড়ে ব্যাপক দূর্নীতি সামনে আসার পর সার্ভের দায়িত্ব বর্তায় অঙ্গনওয়াড়ি ও আশাকর্মীদের উপর । কিন্তু তাঁরা প্রশাসনের নির্দেশে স্বচ্ছভাবে নিজের কাজ করলেও আবাস যোজনার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষোভ ও হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছেন । মঙ্গলবার সেরুয়া গ্রামের ২৯৫ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী মাধবী গড়াই ও ওই গ্রামের আশাকর্মী অর্চনা মালিককে একটি ঘরে প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে আটকে রেখে দেওয়া হয় । অকথ্য ভাষায় গালাগালির পাশাপাশি এমনকি মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে ।
ক্ষুব্ধ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বক্তব্য শুনুন :-
ভাতারের এক প্রতিবাদী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কথায়, ‘বিডিও সাহেব যখন প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন যেটা চাক্ষুষ দেখবেন সেটাই লিখবেন । আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করেছি । কিন্তু রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর আমাদের ফের ডেকে পাঠাচ্ছেন বিডিও সাহেব । আমাদের দিয়ে নাম কাটিয়ে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন । সার্ভের রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর অযোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য বলতে বাধ্য করা হচ্ছে । আমরা যে এলাকায় বসবাস করি সেই এলাকার কোন পরিবারের আর্থিক অবস্থা কেমন আমরা জানবো না ? আমাদের কাঁধে বন্দুক রেখে আমাদের জনরোষের মুখে ঠেলে দিচ্ছে প্রশাসন ।’
ভাতারের আইসিডিএস কর্মী সনকা বন্দোপাধ্যায় বলেন,’মঙ্গলবার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী মাধবী গড়াই ও ওই গ্রামের আশাকর্মী অর্চনা মালিককে মারধর,শ্লীলতাহানি, কটুক্তি করা হয়েছে । স্কুলের একটি ঘরে তাঁদের আটকে রাখা হয়েছিল । পরে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন গিয়ে নাকি মিটিং করেছিল বলে শুনেছি । ওনাদের কি কথাবার্তা হয়েছে তা আমাদের জানার দরকার নেই ।’ তিনি বলেন,’ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর পুলিশ গেল কি না গেল তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না । ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর প্রশাসন কি পদক্ষেপ নিল সেটাই আসল বিষয় ।’
সনকাদেবী বলেন,’আমাদের সামান্য বেতন । শিক্ষা,স্বাস্থ্য,পুষ্টির বিষয় নিয়ে আমাদের কাজ । অথচ আমাদের দিয়ে এরকম অনেক কাজ করিয়ে নেওয়া হয় । রেবা বিশ্বাসের মত মেয়েকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে হল । আত্মহত্যা করতে হয়েছে না আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয় আমাদের কাছে ।’
তিনি আরও বলেন,’সিডিপিও নাকি বলেছিলেন প্রশাসন সার্ভের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের নিরাপত্তা দেবে । কই নিরাপত্তা দিল ? যদিও নিরাপত্তা দিত তাহলে কেন সেরুয়া গ্রামে দুই কর্মীকে নিগৃহীত করা হল ? আজ ওরা জনরোষের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল । মানুষ কখন কি ঘটিয়ে দেবে কারোর জানা নেই । প্রাণহানী ও অঙ্গহানীও হতে পারে । অনেক অঞ্চলের মেয়েরা জনরোষের শিকার হচ্ছেন । ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে । বড়বেলুন-২, আমারুন,বনপাশসহ বিভিন্ন এলাকার কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে । প্রশাসন এটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে নিচ্ছেন । কিন্তু এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয় । আমাদের দাবি এই ধরনের কাজ যেন আমাদের দেওয়া না হয় ।’।