এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৬ ডিসেম্বর : রাজ্য বিজেপির তিন শীর্ষ নেতা শুভেন্দু অধিকারী,দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদারের সম্পর্কের তিক্ততা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে সরগরম ছিল রাজ্য রাজনীতি ৷ তিন নেতার মধ্যে বাড়ছিল দূরত্ব । এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলকে ছেড়ে মাঝে মধ্যে একে অপরকে নিশানাও করতে দেখা গিয়েছিল তাঁদের । কোনো কোনো মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছিল দলের অভ্যন্তরে ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তিন শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্বে চিন্তায় ছিল বিজেপির হাইকম্যান্ড । নিচু তলার বিজেপি কর্মীরাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন । পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যা বিজেপির কাছে অশনি সঙ্কেত বলে মনে করছিল অভিজ্ঞমহল । এবার তিন রাজ্য নেতার দূরত্ব কমাতে উদ্যোগী হল বিজেপির শীর্ষ নেতারা । মাধ্যম করা হল শুভেন্দু অধিকারীর জন্মদিনকে ।
আসলে বৃহস্পতিবার ছিল শুভেন্দু অধিকারীর জন্মদিন । সাধারণ নিজের জন্মদিন পালনের পক্ষপাতী নন বিরোধী দলনেতা । কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা গেল বৃহস্পতিবার । তবে জন্মদিনে আড়ম্বর নয়, উত্তরীয় পরিয়ে আর মিষ্টিমুখের মাধ্যমেই দলের লড়াকু নেতার জন্মদিন পালন করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ আর রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার । পোর্ট ট্রাস্টের গেস্ট হাউসে এই শুভেচ্ছা বিনিময় হয় । দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ-সহ অন্যান্য নেতারা ।
বিরোধী দলনেতাকে শুভেচ্ছা জানানোর মুহুর্তের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শ্রী শুভেন্দু অধিকারী মহাশয়ের জন্মদিনে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ঈশ্বরের কাছে আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি ।’ দিলীপ ঘোষও নিজের ফেসবুক পেজে শুভেন্দু অধিকারীকে শুভেচ্ছা জানানোর ছবি পোস্ট করেছ লিখেছেন,’রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা । ঈশ্বরের কাছে আপনার সুস্থতা কামনা করি । পশ্চিমবঙ্গের জনগনের স্বার্থে আপনি এভাবেই কাজ করে যাবেন সেই আশা রাখি ।’ পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আজ পর্যন্ত দলের কারও বিরুদ্ধে আমি কোনো কথা বলিনি । পাল্টা মন্তব্য করিনি,আগামী দিনেও করব না । দিলীপ ঘোষ আমাদের নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই আমি বিজেপিতে যোগদান করেছিলাম । দিলীপদা আমাকে নন্দীগ্রামে জেতানোর ব্যাপারে পূর্ণ সমর্থন করেছিলেন ।’ এদিকে রাজ্য বিজেপির তিন শীর্ষ নেতার সহবস্থানে স্বস্তিতে বিজেপির হাইকম্যান্ড । স্বস্তিতে নিচু তলার বিজেপি কর্মীরাও ।
প্রসঙ্গত,এক সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড বলে মনে করা হত শুভেন্দু অধিকারীকে । সাংগঠনিক ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তায় তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই ছিল তাঁর স্থান । শুভেন্দুকেই মমতার বিকল্প হিসাবে মনে করত সাধারণ তৃণমূল কর্মীরা । কিন্তু দক্ষ সংগঠক বলে পরিচিত শুভেন্দু অধিকারীকে কোনো এক অজানা কারনে একটু একটু করে সাইড বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল । সেটা অনুধাবন করেই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেত হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করেন শুভেন্দু । তারপর থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অল আউট অ্যাটাকে নেমে পড়েন তিনি ।
রাজনৈতিক মহলের মতে সাংগঠনিক দক্ষতা,লড়াকু ইমেজ এবং রাজনৈতিক জীবনে স্বচ্ছতা শুভেন্দু অধিকারীর তিনটি মূল অস্ত্র । যে অস্ত্র তিনটে কাজে লাগিয়ে সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আর একই অস্ত্রে ১৫ বছরের তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালের যবনিকা ঘটাতে পারেন একমাত্র শুভেন্দু অধিকারী । দূর্নীতির জালে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যাওয়া শাসকদলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তা প্রয়োগও করতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি । কিন্তু দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দলে সেই প্রচেষ্টা অনেকাংশে ব্যহত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে । যদিও সুকান্ত মজুমদার বলেন,’আমাদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই ।দ্বন্দ্বের কোনও প্রশ্নই ওঠে না । এগুলো মিডিয়ার অপপ্রচার ।’।