এইদিন ওয়েবডেস্ক,ইসলামাবাদ,১৩ ডিসেম্বর : সম্প্রতি দেশ ছেড়ে কেনিয়ায় চলে যাওয়ার পর খুন হয়েছিলেন পাকিস্তানের বিশিষ্ট সাংবাদিক আরশাদ শরীফ । তিনি পাকিস্তানের সম্প্রচার নেটওয়ার্ক এআরওয়াই-এর সাথে যুক্ত ছিলেন । চলতি বছরের পয়লা সেপ্টেম্বর কোনো কারন ছাড়াই তাঁকে কর্মচ্যুত করে দেয় ওই সংবাদমাধ্যম কর্তৃপক্ষ । অবশ্য কারন হিসাবে এআরওয়াই নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছিল, আরশাদ শরীফ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে কোম্পানির আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছিলেন তাই তাঁকে সরানো হয়েছে । কিন্তু পরে জানা যায় যে আরশাদ পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রবল সমর্থক ছিলেন এবং বর্তমানে দেশের ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করার জন্য হুমকির মুখে পড়েছিলেন । এই কারনে আরশাদের বিরুদ্ধে ১৬ টি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছিল, যার মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহও ছিল, যার ফলে তাঁকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে হয়েছিল । কিন্তু কেনিয়াতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে তিনি খুন হওয়ায় স্বভাবতই শাহবাজ শরীফের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠছে । যদিও এই খুনের মামলা এখন তদন্তাধীন ৷ কিন্তু আদপেই এর সত্য সামনে সামনে আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ৷
গত ২৩ অক্টোবর কেনিয়ার রাস্তায় আরশাদ শরীফকে গুলি করে খুন করার পর থেকে পাকিস্তানের সাংবাদিকরা চরম ক্ষুব্ধ । পাকিস্তানের একটি জাতীয় মিডিয়া পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ফ্রিডম নেটওয়ার্ক পাকিস্তান সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে । তাতে দেখা গেছে,২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পাকিস্তানে বিভিন্ন মিডিয়া আউটলেটের অন্তত ৫৩ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে । ২০২০ সাল থেকে এযাবৎ খুন হয়েছে ১৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মী ।মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক উমাইমা আহমেদ মনে করেন, পাকিস্তানে স্বাধীন সাংবাদিকতা মৃত । এজন্য অবশ্য তিনি তিনি মিডিয়া সংস্থাগুলিকেই দোষারোপ করেছেন । তিনি বলেন,’সাংবাদিকদের উপর হামলা আমাদের পেশার জন্য ভয়ঙ্কর। সাংবাদিকদের জন্য কোন সুরক্ষা বা মানসিক সাহায্য নেই এদেশে । তাই তারা হয় পেশা ছেড়ে দেয় বা সেন্সর করা নির্দেশিকা অনুসারে কাজ করে ।’
সাংবাদিক তথা সম্পাদক ওয়াকাস হাবিব রানা বলেন,’রাজনৈতিক মেরুকরণের কারনে পাকিস্তানের সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে । যার ফলে সাংবাদিকদের তাদের পেশাগত নৈতিকতার সাথে আপস করতে বাধ্য হচ্ছেন । গত দুই দশক ধরে দেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলা বেড়েই চলেছে ।’ তিনি আরও বলেন,’এখনও দাবি করা হয় যে পাকিস্তানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে । কিন্তু বাস্তবটা ঠিক তার উলটো । বিশেষ করে ইমরান খানের সরকারের অধীনে সংবাদমাধ্যমকে সব থেকে বেশি লাঞ্ছিত হতে হয়েছিল ।’
তাঁর কথায়,’আমরা ইমরান খানের হাইব্রিড শাসনকালে সবচেয়ে খারাপ সেন্সরশিপ সহ্য করেছিলাম । আমরা এখন পরিবর্তনের মধ্যে আছি, হাইব্রিড শাসন ব্যর্থ হয়েছে এবং পাকিস্তানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগবে । তার আগে আমাদের আরও কিছু অশান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হবে ।’
ইসলামাবাদ-ভিত্তিক সাংবাদিক তথা লেখক আজাজ সৈয়দ বর্তমান শাসনযন্ত্রের অন্যতম সমালোচক বলে পরিচিত । তিনি বলেন,’আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল দুর্বল গণতন্ত্র । একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র নিশ্চিত করে যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এবং বিভাগকে সংবিধানে সংজ্ঞায়িত সীমা মেনে চলতে হবে । কিন্তু পাকিস্তানে এটি অনুপস্থিত ।’ তিনি বলেন,’পাকিস্তানে সুস্থ গনতন্ত্র নেই । আর যতক্ষণ না পাকিস্তান একটি সুস্থ গণতন্ত্র গড়ে তুলতে পারছি ততক্ষণ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত থাকবে ।’।