দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১২ ডিসেম্বর : সকল মায়ের কাছে সন্তান অমূল্য । সন্তানের খুশি দেখে সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যায় মা । কিন্তু রোগ বা দূর্ঘটনায় দুধের শিশুর মৃত্যু হলে মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে অতি নিষ্ঠুর মানুষের চোখেও জল এনে দেয় । সে মানুষ হোক বা মানবেতর প্রাণী,সন্তান হারা মায়ের যন্ত্রণা সকল মায়ের কাছেই সমান । দূর্ঘটনায় চার শিশুসন্তানের মৃত্যুর পর এক কুকুর মায়ের এমনই বুক ফাঁটা আর্তনাদ দেখলো পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার মুরাতিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দারা । কুকুর মায়ের এমন হাহাকার দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি স্থানীয় পশুপ্রেমী মুসলিম যুবক শেখ আমির । তিনিও কেঁদে ফেলেন । অবশ্য তিনি কোনো রকমে ওই কুকুরটির কাছ থেকে মৃত চার শাবককে উদ্ধার করে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে কবরস্থ করে দেন ।
জানা গেছে,দিন কয়েক আগে মুরাতিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চার শাবকের জন্ম দিয়েছিল একটি স্ত্রী কুকুর । মুরাতিপুরে বাদশাহী রোডের আশেপাশের দোকানদাররা কুকুরগুলির খাবার জোটাতো । রবিবার রাতে দিকে রাস্তার পাশে খড়ের উপর চার শাবককে নিয়ে ঘুমচ্ছিল কুকুর মা । সেই সময় বেপরোয়া গতির কোনো গাড়ি ফুটপাতে উঠে চার শাবককে পিষে দিয়ে পালিয়ে যায় । শিশু কুকুরগুলির দেহ কার্যত ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় । তবে অল্পের জন্য বেঁচে যায় মা কুকুর ।
শেখ আমির বলেন,’সকালের দিকে আমি ঘটনার কথা জানতে পারি । তারপর আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই । গিয়ে দেখি মা কুকুর তার মৃত শাবকগুলিকে শুঁকছে আর মুখে করে টেনে তোলার চেষ্টা করছে । সেই সঙ্গে মাঝে মাঝে বুকফাটা আর্তনাদ করে করে উঠছে । এই দেখে আমি থাকতে পারিনি,আমিও কেঁদে ফেলেছিলাম ।’ তিনি আরও বলেন,’বর্তমানে প্রতিটি এলাকার হাটেবাজারে স্ত্রী পথ কুকুররা সন্তান প্রসব করেছে । খাবারের সন্ধানে সড়কপথের আশেপাশে শিশু কুকুরগুলো ঘোরাঘুরি করে ।’ তিনি যানবাহন চালকদের উদ্দেশ্যে বলেন,’বাজার এলাকাগুলিতে আপনারা যদি একটু সতর্ক হয়ে যানবাহন চালান তাহলে শিশু কুকুরগুলোকে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয় । আমার অনুরোধ একটু মানবিকভাবে বিষয়টি দেখবেন, প্লিজ ।’
জানা গেছে,চার কুকুর শাবককে করবস্থ করার জন্য শেখ আমির কিছু নুন কিনে আনেন । পাশাপাশি একটি কোঁদাল ও কিছু খবরের কাগজ এনে একটি পলিথিনের বস্তার মধ্যে কুকুর শাবকগুলিকে ভরে ফাঁকা মাঠে নিয়ে যান । সেখানে ফুট খানেক গর্ত করে কাগজগুলি বিছিয়ে মৃত কুকুর শাবকগুলিকে যত্ন সহকারে শুইয়ে দেন । তারপর মৃতদেহে নুন ছিটিয়ে মাটি চাপা দিয়ে দেন । ওই মুসলিম যুবকের এই প্রকার সংবেদনশীলতার প্রশংসা করেছেন এলাকার বাসিন্দারা ।।