এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,২০ফেব্রুয়ারী : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্পগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে ‘স্বাস্থ্য সাথী’ । সকল রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রচার চলছে । এই প্রকল্পের ফায়দা যাতে ভোটব্যক্সে পড়ে তার জন্য ভোটের আগে প্রতিটি পরিবারের হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তুলে দিতে মরিয়া রাজ্য সরকার । রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলিতে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প করে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নাম নথিভুক্তিকরণের পর্ব প্রায় শেষের দিকে । চলছে কার্ড দেওয়ার পর্ব । এরই মধ্যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে মারাত্মক অভিযোগ আনল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বারোডাঙ্গা গ্রামের একটি পরিবার । ওই পরিবারের বিবাহিতা মেয়ে পিংকি দাস দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে জানা গেছে ।
পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও সরকারি ও বেসরকারি কোনও হাসপাতালেই চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না । শেষ পর্যন্ত শনিবার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিওর দ্বারস্থ হন অসুস্থ মহিলাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন । পরিবারের দাবি, হয় তাঁদের মেয়ের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হোক, নচেৎ সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুতে স্বীকৃতি দিক প্রশাসন । এদিকে ভোটের মুখেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে এহেন অভিযোগে চরম অস্বস্তিতে পড়ে গেছে শাসকদল ।
এই বিষয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন,”আমরা এই নিয়ে একটা অভিযোগ পত্র পেয়েছি তবে তাতে পরিষ্কারভাবে কিছু নেই।আমাদের বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে।প্রশাসন অবশ্যই পাশে দাঁড়াবে । আর যেসব হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথীর আওতার মধ্যে রয়েছে সেখানে গিয়ে চিকিৎসা না পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । জেলায় সমস্ত ব্যাপারটি জানানো হবে।”
জানা গেছে, হরিশ্চন্দ্রপুর থানার বারোডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ভ্যানচালক দীপক দাসের মেয়ে পিংকি দাস । বছর দশেক আগে পাশের তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মিরজাতপুর গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত দাস এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় । তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে । পিংকির অভিযোগ, বিয়ের ২ বছর পর থেকেই স্বামী প্রচন্ড অত্যাচার শুরু করে । তারপর তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে সেওয়া হয় । ফলে বাধ্য হয়ে দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে তিনি বাপের বাড়িতে চলে আসেন ।
পরিবার সুত্রে খবর,বাপের বাড়িতে আসার কিছু দিনের মধ্যেই বিভিন্ন শারিরীক সমস্যা দেখা দিতে থাকে পিংকিদেবীর । বর্তমানে মাথা ও সারা শরীরে অসহ্য ব্যাথার সঙ্গে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে । বর্তমানে শয্যাশায়ী বছর ২৪ শের ওই মহিলা । পিংকির মা লক্ষ্মীদেবী জানিয়েছেন, তাঁদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে । ফ্রিতে মেয়ের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে এই প্রত্যাশায় মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন । কিন্তু সরকারি বেসরকারি সমস্ত হাসপাতাল থেকেই জানানো হয় ওই কার্ডে চিকিৎসা পাওয়া যাবে না ।
জানা গেছে,এদিন অসুস্থ মেয়েকে নিজের ভ্যানে চাপিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ বিডিওর কাছে আসেন পিংকির বাবা দীপক দাস । সঙ্গে ছিলেন পিংকির মা লক্ষ্মীদেবী ও পিংকির দুই শিশু সন্তান ৷ লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘আমার স্বামী ভ্যান চালায় । আমি ও আমার ছেলে বিট্টু জনমজুরি করি । অনেক কষ্টে সংসার চলে । এই অবস্থায় মেয়ের চিকিৎসা কি করে করবো ? তাই প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি হয় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে আমার মেয়ের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হোক নচেৎ আমাদের সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হোক ।’
এদিকে এই ঘটনা ঘিরে জোর রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গেছে মালদা জেলায় । স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করে বিজেপি নেতা রূপেশ আগরওয়াল বলেন,’তৃণমূল সরকারের সম্পূর্ণটাই ভাওতাবাজি। কেন্দ্র সরকারের আয়ুষ্মান যোজনা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এদিকে সংবাদ মাধ্যম খুললেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ প্রতিদিন উঠে আসছে। আজ আমাদের হরিশ্চন্দ্রপুর বারোডাঙ্গা গ্রামের একটি পরিবার চিকিৎসা না পেয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছে। এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না ।’
অন্যদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন,”ঘটনাটি সত্যি বেদনাদায়ক।আমি হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে যোগাযোগ করেছি।পরে চাঁচল রেফার করা হয় সেখানেও যোগাযোগ করেছি। রোগিনীকে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছি । আমরা সেখানে সম্পূর্ণ রকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেব।’।