এইদিন ওয়েবডেস্ক,তমলুক(পূর্ব মেদিনীপুর),০৯ ডিসেম্বর : সংসদের আসন্ন শীতিকালীন অধিবেশনে “ওয়ান নেশন,ওয়ান পুলিশ” বিল আসছে বলে রাজ্য পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তমলুক কো অপারেটিভ এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক লিমিটেডের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগে শুক্রবার বিকেলে একটি জনসভার আয়োজন করেছিল ভারতীয় জনতা কিষাণ মোর্চা ও সমবায় সেল । সমবায়ের ভবনের সামনে ভিড়ে ঠাসা জনসভায় বক্তব্য রাখার সময় পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার আইপিএস অমরনাথ কে’কে উদ্দেশ্য করে শুভেন্দু বলেন,’মাননীয় অমরনাথ বাবু, “ওয়ান নেশন,ওয়ান পুলিশ” বিল আসছে শীতিকালীন অধিবেশনে ৷ আপনারা আইপিএস, আইএএসরা সেন্ট্রাল ক্যাড্যারের লোক । এবার থেকে আপনাদের দিল্লি নিয়ন্ত্রণ করবে,ওয়েট-ওয়েট । ২০২৩ সালের জানুয়ারী থেকে বুঝতে পারবেন কেন্দ্রে একটা সরকার আছে,আর একটা প্রধানমন্ত্রী আছেন । সেন্ট্রাল ক্যাড্যারের লোক হয়ে আপনারা এখানে নিম্নমানের কাজ করছেন । কিছু আইএএস চুরি করার কাজ আর কিছু আইপিএস অত্যাচারের কাজ করছেন ।’ এরপর তিনি বলেন,’অমরনাথজি, আকাশ মেঘারিয়াজি আপনারা বাক্স প্যাটরা, বেডিং গুছিয়ে রাখুন । দেখা হবে জানুয়ারী মাসে, দেখা হবে বসন্ত কালে ।’
পাশাপাশি তিনি বলেন,’পুলিশের নিচুতলার ছেলেমেয়েরা খারাপ নয় । এসআই পর্যন্ত খারাপ পাবেন না । কিন্তু তার উপরে যারা আছে তারা পা চাটতে ব্যস্ত । পুলিশের কাজ হল শুধু শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা । মামলা যত খুশি করতে পারো,ব্রিটিশ খেদানো জেলা ।’
এদিন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে শুভেন্দু বলেন,’প্রত্যেকটা মদের বোতলে ৫ টাকা করে পায় ভাইপো । কয়লাটা একটু টাইট দিয়েছি, তাও চালাচ্ছে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ।’ তাঁর অভিযোগ,’ ঝাড়খণ্ড থেকে তেলের ট্যাঙ্কারে,দুধের ট্যাঙ্কারের ভিতর গরু ঢুকিয়ে পুলিশের সাহায্য নিয়ে পাচার করছে ।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে শুভেন্দু বলেন,’মাতঙ্গিনী হাজরা কোথায় শহীদ হয়েছিলেন তাই তিনি জানেন না । পশ্চিমবঙ্গের লোককে কি শেখাচ্ছেন এই মুখ্যমন্ত্রী ।’ পাশাপাশি তিনি বলেন,’আর তাঁর গুনধর ভাইপো ২০২১ সালে ভোটের প্রচারে এসেছিলেন । প্রচারে বলছেন, আপনাদের জেলা কতবড় এই জেলা । বর্ণপরিচয়ের শ্রষ্টা মাতঙ্গিনী হাজরা ।’ তিনি বলেন,’বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টার কারনে নিজের নাম,বাপের নাম লিখতে পারছে আর তার নামটাই জানে না । এ কোন রাজ্যে আমরা বাস করছি? এদের হাতে ক্ষমতা থাকলে কি হবে এই রাজ্যের?’
এদিন রাজ্য সরকারের কাছে একাধিক দাবি রাখেন শুভেন্দু অধিকারী । তাঁর দাবি,সাড়ে ৯ লক্ষ ভূয়ো জব কার্ড বন্ধ করতে হবে । সরকারি কর্মচারীদের ৩৫ শতাংশ ডিএর টাকা দিতে হবে । তিনি বলেন, ‘সময় ঘনিয়ে এসেছে । চারিদিক থেকে ঘেরা হয়ে গেছে । কয়লা চোর,গরু চোর বড়বড় চোর ভিতরে ঢুকবে । চিন্তা করবেন না ।’শুভেন্দু বলেন, ‘এসএসসিতেও ২১,৫০২ ভুয়ো । ২০১৬ সালের প্রাইমারির পুরো প্যানেলটাই ভুয়ো ।। এই ভুয়োদের লম্বা মিছিল বের হবে কলকাতায় । গান্ধীমূর্তির নিচে জড়ো হবেন চাকরি পাওয়া লোকেরা । সঙ্গে থাকবেন স্ত্রী,বাবা-মা,বাচ্ছারা । বলবে তোমার নেতা ১৫ লাখ টাকা নিয়ে আমাকে সাদা খাতা জমা দিতে বলেছিল । আমার অপরাধটা বলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মিছিলটা যাবে কালীঘাটের দিকে । হাঁটবে লক্ষ লক্ষ লোক । একদিকে যোগ্যরা হাটবে, মেধা অনুযায়ী চাকরি চাই বলবে । অন্যদিকে টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ারা টাকা ফেরতের জন্য পিসি ভাইপোর বাড়ির দিকে এগুবে । মজাটা বুঝবেন । ঠ্যালার নাম বাবাজি ।’
পাশাপাশি তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন, ‘আমি নন্দীগ্রামে হারিয়েছি । শুভেন্দুই আপনাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করবে ।’ সব শেষে তিনটে শ্লোগানকে সামনে রেখে পঞ্চায়েতের ভোটের ময়দানে নামার জন্য দলীয় কর্মীদের বার্তা দেন শুভেন্দু । তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন,’তিনটে শ্লোগান নিয়ে লড়াই করুন, পঞ্চায়েত জিততে হবে । এক,ঘুষ মুক্ত,মেধাযুক্ত চাকরি চাই । দুই, কাটমানি মুক্ত নাগরিক পরিষেবা চাই । তিন,রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত পুলিশ চাই ।’।