শ্যামসুন্দর ঘোষ, মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),০৬ ডিসেম্বর : গরুর দুধ থেকে ক্ষীর আর ছানা তৈরি করে বিক্রি করা মূল পেশা পরিবারের । কিন্তু সেভাবে আর দাম মিলছে না ওই সমস্ত দুগ্ধজাত সামগ্রীর । এদিকে সরকারিভাবে কোনো প্রকার সাহায্য মিলছে না বলে অভিযোগ । ফলে দারিদ্রের সঙ্গে অসম যুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের দেনুড় অঞ্চলের ধেনুয়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় গোপালক মুক্তি ঘোষ ।
জানা গেছে,ধেনুয়া গ্রামের বাসিন্দা মুক্তি ঘোষের বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী পানুবালা ঘোষ,ছেলে বিভুতি ঘোষ,পুত্রবধু,এক নাতি ও এক নাতনি । নাতি নাতনিরা পড়াশোনা করেন । অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া একতলা মাটির বাড়িতে অতিকষ্টে বসবাস । বাড়ির লাগোয়া করগেটের ছাউনি দেওয়া একটি চালায় গরু ও মোষ মিলে ৮ টি গবাদি পশুর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । সেই চালার এক পাশে উনানে দুধ ফুটিয়ে ক্ষীর আর ছানা তৈরি করেন মুক্তি ঘোষ । এই কাজে পরিবারের মহিলারাও অংশগ্রহন করেন । পরে সকালের দিকে বাবা ও ছেলে মিলে দুধ,ক্ষীর আর ছানা সাইকেলে চাপিয়ে এলাকার ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে আসেন ।
সত্তরোর্ধ মুক্তিবাবু বলেন,’ক্ষীর-ছানা তৈরি করা আমাদের বংশানুক্রমিক পেশা । বাবা করে গেছেন,এখন আমিও করছি । আমার পৈতৃক জমিজমা নেই । গোরুমোষের দুধ থেকে ক্ষীর আর ছানা তৈরি করে বিক্রি করে যেটুকু আয় হয় তাতেই গবাদি পশুগুলোর খোরাকি এবং পরিবারের খরচ খরচা কোনো রকমে চলে । তার বেশি কিছু হয়না ।’
গোপালকের বক্তব্য শুনুনু :-
মুক্তিবাবুর ছেলে বিভুতি ঘোষ বলেন,’আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বাবার সঙ্গে ব্যবসা করছি । কিন্তু এখন আর ব্যবসায় বিশেষ লাভ নেই । কোনো রকমে পরিবারের অন্নসংস্থান হয় ।’ তিনি আরও জানান, বাজারে তিন লক্ষাধিক টাকার দেনা রয়েছে তাঁদের । সুদে আসলে তা ৫ লাখে এসে দাঁড়িয়েছে । তাঁর অভিযোগ সরকারি সাহায্য তো দূরের কথা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অনুদান পাওয়ার যোগ্য হলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারনে তাঁদের পরিবারকে এযাবৎ বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে ।
জানা গেছে,মন্তেশ্বরের ধেনুয়া গ্রামে প্রায় ৪০ টি পরিবার ক্ষীর আর ছানা তৈরির পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল । কিন্তু ব্যবসায় ক্রমাগত লোকসানের কারনে ওই সমস্ত পরিবারগুলি সমস্ত গরু মোষ বিক্রি করে বিকল্প পেশায় যুক্ত হয়ে পড়েছেন । স্থানীয় গ্রামবাসীদের দাবি ক্ষীর আর ছানা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করুক রাজ্য সরকার ।।