দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৪ ডিসেম্বর : দিন দুই ধরে জাঁকিয়ে শীত পড়েছে । এই ঠান্ডার মাঝেই দুধের শিশুদের সঙ্গে করে মাঠে নিয়ে গিয়ে ধান কাটার কাজ করছেন ঝাড়খন্ডের পরিযায়ী শ্রমিক দম্পতিরা ৷ এদিকে জমির আলের মধ্যে তাঁদের শিশুদের ঠান্ডায় কাঁপতে দেখে থাকতে পারেননি পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার মুরাতিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা শেখ আমির নামে এক সমাজসেবী যুবক । শেষে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়ে এদিন রবিবার বেশ কিছু আদিবাসী মহিলা ও তাঁদের শিশুদের হাতে তুলে দিলেন শীতবস্ত্র । যুবকের এই প্রকার মানবিকতায় আপ্লুত মুরাতিপুরে কাজে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা । ওই মুসলিম যুবকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকার বাসিন্দারা ।
জানা গেছে,কিছুদিন ধরে আমন ধান কাটার মরশুম শুরু হয়েছে এলাকায় অধিকাংশ চাষীরা হারভেস্টর মেশিন দিয়ে মাঠ থেকে ধান তোলার কাজ করলেও খড়ের জন্য কিছু চাষি হাতে ধান কাটাচ্ছেন । আর এই কাজের জন্য তাঁরা মূলত বিহার ও ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী জনমজুরদের উপর নির্ভরশীল । মুরাতিপূরের বাসিন্দা এমনই তিন চাষির ধান কাটতে এসেছে ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু শ্রমজীবি মানুষ । তাঁরা সঙ্গে করে এনেছেন তাঁদের শিশুদেরও । প্রতিদিন সকালে মাঠে কাজে যাওয়ার সময় ১ থেকে ৭ বছর বয়সী শিশুদের সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা ।
শেখ আমির বলেন,’দিন কয়েক হল ব্যাপক ঠাণ্ডা পড়েছে । তারই মাঝে একদিন মাঠে গিয়ে দেখি কয়েকটি শিশু জমির আলের উপরে জবুথবু হয়ে বসে আছে । তাদের গায়ে একটা করে ফিনফিনে জামা । ঠাণ্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছিল শিশুগুলো । দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল । তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি বন্ধুবান্ধবের কাছে চাঁদা সংগ্রহ করে ওই সমস্ত আদিবাসী শিশু ও তাদের মায়েদের শীতবস্ত্র কিনে দেবো ।’
জানা গেছে, শেখ আমির তাঁর বন্ধু আনোয়ার, সামিম, মহম্মদ আনারুল ইসলামদের কাছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন । আমিরের কাছে একথা শোনার পর এক কথাতেই তাঁরা আর্থিক সহায়তা দিতে রাজি হয়ে যান । তারপর বন্ধুদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা টাকার সাথে নিজে কিছু টাকা দিয়ে শিশু ও মহিলাদের জন্য শীতবস্ত্র এবং পুরুষদের জন্য একটি করে কম্বল কিনে আনেন আমির । এদিন মাঠে গিয়ে নিজের হাতে শিশুদের শীতের পোশাক পড়িয়ে দিয়ে আসেন তিনি । পাশাপাশি মহিলাদে হাতে একটি করে শীতবস্ত্র ও পুরুষদের হাতে একটি করে কম্বল তুলে দেন ।
মুরাতিপুরে ধান কাটার কাজে আসা নীলমনি হাঁসদা, সীতা মূর্মুরা বলেন,’আমদের জনমজুরি করে পেট চলে । ঝাড়খণ্ডে কোনো কাজ নেই তাই বর্ধমানের মুরাতিপুরে ধান কাটার কাজে এসেছি । মরশুমে যেটুকু কাজ পাই সেই উপার্জনেই আমাদের সারা বছর কোনো রকমে সংসার চলে । বাচ্ছাদের শীতের পোশাক কি করে কিনে দেবো ?’ এদিন মুরাতিপুরের ওই যুবকের কাছ থেকে শীতবস্ত্র পেয়ে তাঁরা খুশি প্রকাশ করেছেন । পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ওই যুবককে ।।