দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৩ নভেম্বর : প্রতি বছর অগ্রহায়ন মাসের অমাবস্যা তিথিতে পূজো হয় পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার পাগলি কালী মায়ের । প্রায় অর্ধ শতাব্দী চলে আসা পূজো ঘিরে মেতে ওঠে গোটা এলাকা । কাটোয়া শহর ছাড়াও আশপাশের বহু গ্রাম থেকে পূণ্যার্থীরা এসে ভিড় জমান কাটোয়া বাজারের ভাগিরথীর ঘাটে । বুধবার এই বিশেষ তিথিতে পাগলি কালী মায়ের পূজো ঘিরে জমজমাট হয়ে ওঠে গোটা এলাকা । এই পূজোর বিশেষত্ব হল,তারাপীঠের মহাসাধক বামাখ্যাপার বংশধর এসে দেবীর পূজো করেন । ফলে পূজো ঘিরে আলাদা আকর্ষণ থাকে পূণ্যার্থীদের মধ্যে ।
কাটোয়ার পাগলি কালী মায়ের পূজো প্রচলন হয়েছিল বাংলার ১৩৭৪ সালে । এই পূজোর প্রচলনের পিছনে একটি কাহিনী আছে । শোনা যায়, ওই বছর গ্রীষ্মের কোনো এক দিনে ভাগিরথীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা অনিল দাস, বৈদ্যনাথ সাহা ও তারা দাস নামে তিন বন্ধু । তাঁরা স্নান করার সময় একটি কালীমূর্তির কাঠামো ভেসে আসে তাঁদের কাছে । তাঁরা কাঠামোটি ফের স্রোতে ভাসিয়ে দেন । কিন্তু যতবারই তাঁরা কাঠামোটি ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ততবারই ঘুরে ঘুরে তাদের কাছে চলে আসে কাঠামোটি । শেষে অনিল দাস কাঠামোটি জল থেকে টেনে পাড়ে তুলে দেন । তারপর তাঁরা বাড়ি চলে আসেন । কিন্তু ওই দিন রাতেই দেবীর স্বপ্নাদেশ পান অনিলবাবু । স্বপ্নে তাঁকে কাঠামোয় মূর্তি নির্মান করে পূজোর নির্দেশ দেন দেবী । পরের দিন সকালে দুই বন্ধুকে ঘটনার কথা বলেন তিনি । কিন্তু তাঁরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকেন ।
জানা যায়, শেষে তিন বন্ধু মিলে তারাপীঠের মহাসাধক বামাখ্যাপার অন্যতম বংশধর উমাপদ রায়ের দ্বারস্থ হন । উমাপদবাবু তিন বন্ধুকে ওই কাঠামোতেই মূর্তি তৈরি করে দেবীর পূজো শুরু করার নির্দেশ দেন । পাশাপাশি তিনি জানান,তিনিই হবে দেবীর পুরোহিত । পুজো কমিটির কর্মকর্তা সোমনাথ সাহা জানান,বামাখ্যাপার বংশধরের নির্দেশ মত ওই বছরেই পূজো শুরু হয় । তাঁর নির্দেশেই তন্ত্রমতে পূজো হয় দেবীর । তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী পাশের শ্মশান থেকে মৃতদেহ পোড়ানোর আধপোড়া কাঠ ও মৃতদেহ বাঁধার দড়ি দিয়ে দেবীর মণ্ডপ তৈরি হয় । জোড়া বলি দেওয়া হয় পূজোর দিনে । আজও বামাখ্যাপার বংশধরের হাতেই পূজিতা হন দেবী ।।