এইদিন ওয়েবডেস্ক,ওয়াশিংটন,২২ নভেম্বর : অল্পবয়সী ছেলেদের যৌন শোষণ ও শিশু সৈনিক হিসাবে ব্যবহার করছে তালিবানরা । “বাচা বাজি” (Bacha bazi) বা “ছেলে খেলার” নামে কিশোরদের নির্বিচারে ধর্ষণ করছে ‘সমকামী’ তালিবানরা । মানব নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ এবং লিঙ্গ উপদেষ্টা লার্ক এসকোবারের এই সংক্রান্ত একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ওয়াশিংটন এক্সামিনারে । ২০১০ ও ২০১১ সালের মধ্যবর্তী সময় ধরে আফগানিস্তানে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে বেথ বেইলি ডেট্রয়েট এলাকার ফ্রিল্যান্স লেখক তথা প্রাক্তন বেসামরিক গোয়েন্দা বিশ্লেষক এসকোবারের । তিনি তাঁর প্রতিবেদনে জানিয়েছেন :-
২০২১ সালের আগস্টে তালিবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে, আফগান শিশু এবং কিশোররা ক্রমশই অনাহার, বাল্যবিবাহ, অঙ্গ পাচার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে । ক্রমবর্ধমান প্রমাণগুলিও ইঙ্গিত করে যে তালিবানরা অল্পবয়সী ছেলেদের যৌন শোষণ করছে বা তাদের শিশু সৈনিক হিসাবে ব্যবহার করছে।
আফগান শহরে বসবাসকারী একজন বিশেষ অভিবাসী ভিসার আবেদনকারীর মতে, তালিবানরা সৈন্য এবং দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করার জন্য ১০ বছরের কম বয়সী ছেলেদের অফিস এবং চেকপয়েন্টে নিয়ে আসে । আবেদনকারী বলেছিলেন যে একটি চেকপয়েন্টে একটি ছোট ছেলের হাতে একে-৪৭ রাইফেল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু সে রাওফেলটি সঠিকভাবে ধরে রাখতে সক্ষম ছিল না । আবেদনকারী আরও অভিযোগ করেছেন যে তালেবানরা অল্প বয়সী ছেলেদের “বাচা বাজি” (Bacha bazi) বা পেডোফিলিক “ছেলে খেলার” জন্য ব্যবহার করছে ।
কোনো পার্টির সময় তালিবানরা ওই সমস্ত কিশোরদের মাদক নিতে বাধ্য করে এবং তাদের মেয়েলি পোশাক, মেকআপ এবং উইগ পরিয়ে তাদের দিয়ে ঐতিহ্যবাহী মহিলাদের নৃত্য পরিবেশন করায় । বিনোদনের পাশাপাশি ওই কিশোররা তালিবান সদস্যদের যৌন তৃপ্তি দিতে বাধ্য হয় ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,পশতুন এবং তাজিক সংস্কৃতিতে বাচা বাজির (Bacha bazi) একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং সমগ্র মধ্য এশিয়া জুড়ে এই ঘৃণ্য প্রথা চালু আছে ৷ যদিও বলা হয় এটি ইসলামের বিরোধী। এটি সমকামিতা হিসাবে বিবেচিত হওয়ার পরিবর্তে,নৃত্যরত ছেলের সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত হওয়াকে পুরুষত্বের একটি অভিব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয় । কিছু অল্প বয়স্ক ছেলে, যারা বাচা বে রিশ(bacha be reesh) নামে পরিচিত, তারা অর্থ উপার্জনের জন্য এই অনুশীলনে আকৃষ্ট হয় । শিশু কিশোরদের হয় অন্যদের কাছ থেকে কেনা হয় অথবা অপহরণ করে আনা হয় । তারপর তাদের এই জঘন্য অনুশীলনে বাধ্য করা হয় । শেষে তাদের হয় তাড়িয়ে দেওয়া হয়, নচেৎ খুন করে মৃতদেহ পাচার করে দেয় তালিবানরা ।
তালিবানের প্রাক্তন শাসনকালে বাচা বাজির শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড । তা সত্ত্বেও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একটি নাবালক ছেলেকে মাদকদ্রব্য খাওয়ানো এবং ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল একজন তালিবান কমান্ডারের বিরুদ্ধে । বর্তমানে তিনি পুলিশ মিডিয়া প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন ।
আফগানিস্তানে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে তালিবানরা বাচা বাজির প্রতি তাদের নীতির দিকে নজর দেয়নি। সাম্প্রতিক ফটোগ্রাফিক এবং ভিডিও প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, তালেবান সদস্যরা অনুশীলনে নিয়োজিত হয়েছে। আফগানিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্টের মতো, এই প্রমাণগুলিই তালিবান নেতাদের তাদের অধস্তনদের উপর নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করে ।
রিপোর্ট অনুযায়ী,সবচেয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় গত ৬ জুন পোস্ট করা একটি ভিডিও থেকে, যেখানে দেখা যায় একটি ভীত সন্ত্রস্ত কিশোরের চারপাশে বসে আছে বন্দুকধারী পুরুষরা । কিশোরকে যৌন উত্তেজক নাচ করার আগে একটি কক্ষের চারপাশে মেয়েলি কায়দায় ঘুরতে বলা হয় । ছেলেটি যখন তার শরীর থেকে পাতলা আবরনটি সরিয়ে নেয়, তখন ঘরের লোকেরা উল্লাস করে, হাততালি দেয়, ভাগাভাগি করে সিগারেট ফুঁকতে থাকে এবং ছেলেটির শরীরে তারা আদর করে । গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর কাবুল ম্যাগাজিনের ফেসবুক পেজে ওই দৃশ্যের একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়েছে বন্দুকধারীরা আসলে তালিবানের সদস্য ।
।একজন বিশেষ অভিবাসী ভিসার আবেদনকারী মহিলার মতে,উত্তর আফগান প্রদেশের শতশত কিশোর ও শিশুকে রাস্তা,দোকান,কর্মক্ষেত্র এমনকি বাড়ি থেকেও জোর করে তুলে আনা হয়েছে । তাদের কয়েকজনকে তালিবানের সাথে যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে । বাকিদের ব্যবহার করা হয়েছে বিনোদনের জন্য । অপহৃত ছেলেদের পরিবার সাধারণত এই কথা গোপন করে যায় কারণ এটি তাদের জন্য বড় লজ্জার বিষয় ।
আফগান প্রবাসী এক ব্যক্তি জানিয়েছেন,উত্তর আফগান প্রদেশর তাজিকে তার এক বন্ধু বসবাস করেন । বন্ধুর ১৫-১৬ বছর বয়সী ভাগ্নেকে ২০২১ সালের আগস্টে অপহরণ করে তালিবানরা । ছেলেটির বাবার সন্দেহ যে তার ছেলেকে ‘বাচা বাজি’র জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে । কিন্তু সব বুঝতে পেরেও অপহরণকারীদের হাত থেকে ছেলেকে উদ্ধার করার সাহস সঞ্চয় করতে পারেননি হতভাগ্য বাবা ।
উত্তর আফগানিস্তানে মূলত সংখ্যালঘু, অ-পশতুন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস । এর মধ্যে কয়েকটি গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে জড়িত। আর ওই সমস্ত গোষ্ঠীর শিশুদের অপহরণ করে তালিবানরা এভাবে ধীর গতিতে গণহত্যা চালাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে । বাচা বাজির মাধ্যমে তালিবানরা অল্প বয়সী ছেলেদের এটাই শিক্ষা দেয় যে মহিলাদের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত । আফগান নারীদের নিছক যৌন বস্তুর ভূমিকায় দেখানোর এটি তালিবানদের একটি মানসিকতা বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে । এই সমস্ত অভিযোগগুলি নির্দেশ করে যে শিশু অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশনের ১৯ এবং ৩৪ অনুচ্ছেদ সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করছে তালিবানরা ।।