প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৮ নভেম্বর : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পথিকৃত বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত।বৃহস্পতিবার বিপ্লবীর ১১৩ তম জন্মদিবস ঘটাকরে পালিত হল পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামে থাকা তাঁরই জন্ম ভিটায়।দেশ মাতৃকার এই সন্তানের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি বিপ্লবীর জন্মভিটায় এদিন উত্তোলন করা হয় দেশের জাতীর পতাকা।তাতে অংশ নেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলাপরিষদের সভাধীপতি তথা বিধায়ক শম্পা ধারা ,খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ সহ জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারক গণ এবং বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সকল সদস্য। তাঁরা সকলেই এদিন দেশের স্বাধীনতার জন্য বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর লড়াই ও সংগ্রামের কাহিনী স্মরণ করেন।ওঁয়ারি গ্রামের সকল বাসিন্দাও এদিন বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর বন্দনায় মাতোয়ারা থাকেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর নাম।বিপ্লবী ভগৎ সিং এর ভাবশিষ্য বটুকেশ্বর দত্ত ১৯১০ সালের ১৮ নভেম্বর খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন । ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত বোমা নিক্ষেপ করে ১৯২৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর লাহোরে অত্যাচারী ইংরেজ পুলিশ অফিসার স্যাণ্ডারসনকে হত্যা করেন। তার পর থেকে দুই বিপ্লবীকে ধরতে ইংরেজ পুলিশ শুরু করে চিরুনি তল্লাসি।গ্রেপ্তারি এড়াতে ইংরেজ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ভগৎ সিংকে সঙ্গে নিয়ে ওঁয়ারি গ্রামে চলে আসেন বটুকেশ্বর দত্ত । সেই খবর পেয়ে ইংরেজ পুলিশ ওঁয়ারি গ্রামে বটুকেশ্বর দত্তের বাড়ি ঘিরে ফেলে । তখন তাঁরা আত্মগোপন করেন প্রতিবেশী নগেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের বাড়ির পাতাল ঘরে । দুই বিপ্লবী ১৮ দিন ওই পাতাল ঘরে আত্মগোপন করে থাকেন ।পাতাল ঘরে বসেই তাঁরা পার্লামেন্টে বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনা সেরে ফেলেন ।এরপরে ফের ইংরেজ পুলিশের চোখে ধূলো দিয়ে অকুতোভয় এই দুই বিপ্লবী মহিলার ছদ্মবেশে ওঁয়ারি গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে যান। বটুকেশ্বর দত্তর স্মৃতিচারণায় অংশ নিয়ে নগেন্দ্রনাথের উত্তরসূরি প্রণব ঘোষ এদিন জানান,দুই বিপ্লবীর এই রোমহর্ষক পরিকল্পনার কথা তিনি তাঁর ঠাকুমা পঙ্কজিনী ঘোষের মুখ থেকে শুনে ছিলেন ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ সময় অনাদরে পড়ে ছিল বিপ্লবীর বসত বাড়ি ও ভিটা ।ওঁয়ারি গ্রামের বাসিন্দা ও বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি দীর্ঘ দিন ধরে বিপ্লবীর বসত বাড়ি ও ভিটা সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে চলে ।বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মধুসূদন চন্দ্র জানান,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বটুকেশ্বর দত্তর বসত বাড়ি , ভিটা ও তার লাগোয়া নগেন্দ্রনাথ ঘোষেদের সেই পাতাল ঘর ’হেরিটেজ’ স্থান হিসাবে ঘোষনা করা হয় । এরপর ২০১৩ সালে রাজ্যের পর্যটন দপ্তর বটুকেশ্বর দত্তর জন্মভিটা ও পৈতৃক বাড়ি এবং ওই পাতাল ঘর সংস্কারের উদ্যোগ নেয় । বসত ভিটা ও টিনের চালার বাড়ির কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে হয় সংস্কার কাজ । বুকেশ্বর দত্তর একমাত্র কন্যা ভারতি বাগচী এরপর তাঁর বাবার জন্মভিটা ঘুরে দেখে যান । মধুসূদন চন্দ্র আরও জানান ,বিপ্লবীর বসত বাড়ির পাশেই তৈরি হচ্ছে সংগ্রহশালা। সেই কাজ সম্পূর্ণ হেয়ে গেলে বটুকেশ্বর দত্ত ও ভগৎ সিং এর বিপ্লবী কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত অনেক কিছু সেখানে সাজিয়ে রাখা হবে ।
মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন,’এটা আমাদের
সৌভাগ্যের যে আমাদের পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষের প্রত্যন্ত গ্রাম ওঁয়ারিতে জন্মগ্রহন করেছিলেন দেশবরেণ্য বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত ।
আজ তাঁর ১১৩ তম জন্মদিবস আমরা পালন করলাম।এই জেলার রায়নার সুবলদহ এবং ও খণ্ডঘোষের তোড়কনা এবং ওঁয়ারি গ্রাম তিন দেশবরেণ্য বিপ্লবী রাসবিহারী বোস,রাসবিহারী
ঘোষ ও বটুকেশ্বর দত্তর জন্মভূমী হিসাবেই খ্যাত। এনারা ছাড়াও রয়েছেন দাশুরথি তা। এনাদের সবাইকে আমি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে প্রণাম জানাই । স্বপন বাবু বলেন,দেশের স্বাধীনতার জন্য বিপ্লবীরা জীবন দিয়েছেন। বটুকেশ্বর দত্ত ছিলেন বিপ্লবী ভগৎ সিং এর সহয়োগী। সেদিন দেশ যখন স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল
,সেদিন মানুষের মধ্যে কোন বিভেদ ছিল না।
কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে ধনী , কে গরিব
এইসব তখন বিচার্য বিষয় ছিল না । কেউ মহাত্মা গান্ধী , আবার কেউ নেতাজী ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। নেতাজীর আজাদহীন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন শেখ শাহনওয়াজ । এছাড়াও নেতাজীর সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন হবিবুর রহমান । এই দু’জনেই ছিলেন মুসলিম
সেদিন কিন্তু কেউ ভাবেন নি , কে হিন্দু আর কে মুসলমান’। মন্ত্রী বিজেপির নাম মুখে না এনে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন,“আজ দেশ স্বাধীন হবার পর শুধু মাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য ওরা ধর্মের বিভাজন করছে । এটাই দুর্ভাগ্যের ।’।