প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৭ নভেম্বর : বিজেপি কি সামনের ডিসেম্বর মাসে রাজ্যে দাঙ্গা বাধানোর বা অস্থিরতা তৈরির ছক কষেছে ?এমন আশঙ্কার কথাই বৃহস্পতিবার প্রকাশ পেল রাজ্যের অর্থ মন্ত্রী তথা মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্যর কথায়।যা নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা।এমন পরিস্থির মধ্যে চলো গ্রামে যাই’ কর্মসূচিতে বেরিয়ে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য কে এদিন বঞ্চনার অভিযোগও শুনতে হল গ্রামের মহিলাদের কাছে ।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা বেশ কিছুদিন ধরে শুধুই ’ডিসেম্বর জুজুর’ ভয় দেখিয়ে যাচ্ছেন।এর কারনে কিছু একটা অাচকরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে এবং নাকা চেকিং বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।এর কারণ প্রসঙ্গে এদিন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের জৌগ্রামে অনুষ্ঠিত দলীয় সভায় সাংবাদিকদের বলেন,’বিজেপির দাঙ্গা করার ইতিহাসও আছে, আর দাঙ্গা তৈরি করার প্রবনতাও আছে।তাই প্রশাসন সহ সকলকে সতর্ক থাকার কথা
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন । পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘ডিসেম্বরে কি কাপবে , কি কাপবেনা তা জানি না। তবে ডিসেম্বরে শীত পড়ে। শীত আসলে ভাল হয়, মানুষ ভাল থাকে, ভালই কিছু হবে ।’
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস ’চলো গ্রামে যাই’ এই কর্মসূচি নিয়েছে।সেই কর্মসূচিকে সামনে রেখে এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলার সমস্ত মহিলা জনপ্রতিনিধি ও নেত্রীদের নিয়ে জামালপুরের জৌগ্রামে একটি লজে হয় সভা । সেই সভায় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য ছাড়াও রাজ্যের অপর মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ,জামালপুরের বিধায়ক অলক মাঝি উপস্থিত থাকে। মহিলাদের জন্য রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার যে যে প্রকল্প চালু করেছে ও কর্মসূচি নিয়েছে সেইসব বিষয় নিয়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলের মহিলাদের প্রচার চালানোর নির্দেশ দেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।তিনি সভায় উপস্থিত দলের সবাই উদ্ধেশ্য করে বলেন, আমি তো চাইবো সবাই ভোটটা আমাদের দিক।কিন্তু কেউ অন্য কাউকে ভোট দিতেও পারেন। তার জন্য তিনি জল পাবেন না,বাড়ি পাবেন না এটা হতে পারে না । এইসব যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বাস করেন না,সেটা সবাইকে তিনি মনেও রাখতে হবে।পাশাপাশি চন্দ্রিমাদেবী আরও বলেন,আপনি যখন গ্রামে যাবেন তখন হয় আপনি পঞ্চায়েত সদস্য,বা পঞ্চায়েত সমিতির কিংবা জেলা পরিষদের সদস্য। আপনি জনগণের প্রতিনিধি। তাই জনগণকে সার্ভিস দেওয়াই আপনার কাজ।আমরা সিপিএম নই যে আমাদের সঙ্গে মিছিলে না গেলে সুযোগ সুবিধা পাবে না।আমরা এই বিশ্বাসে রাজনীতি করি না ।’
একই সুরে সুর মিলিয়ে জেলার বরিষ্ঠ নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সভায় উপস্থিত দলের জনপ্রতিনিধিদের শুনিয়ে বলেন,আপনারা সদস্য নির্বাচিত হয়ে যাবার পর দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পার হয়ে গিয়েছে।এতদিন নির্বাচিত সদস্যদের অনেকেই বুথের বাসিন্দাদের বাড়ি যাওয়া, তাদের সুবিধা ও অসুবিধার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া এইসব ব্যাপারে কোন আগ্রহই দেখান নি । সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কথাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের কাছে তুলে ধরেন নি। এটা কাম্য হতে পারে না।এমন বেশকিছু জনপ্রতিনিধিদের তালিকা আজ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্যর হাতে তুলেদেবেন বলেও স্বপ্নন দেবনাথ সভায় উপস্থিত সবাইকে জানিয়ে দেন।
মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের এই বক্তব্য যে অমূলক ছিল না তা বৈঠক স্থল সংলগ্ন গ্রামের গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে মিলিত হয়েই বুঝতে পারুন রাজ্যের অর্থ মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য।জাতীয় সড়কের ধারে জৌগ্রামের একটি বসতি এলাকারার মহিলারা সরাসরি মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাযার্য্য কে বলেন ,আমরা সরকারী কোন সুবিধাই পাই নি । এক প্রৌঢ়া বলেন ,আমার পরিবারের কেউ সরকারী আবস যোজনার
ঘর পায়নি । বাড়িতে ১০ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র চারজন রেশন কার্ড পেয়েছে। দুয়ারে সরকারের শিবিরে গিয়ে আবেদন করেছিলেন । তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয় নি বলে ওই প্রৌঢ়া জানান। পানীয় জলের সমস্যার কথাও অনেকে মন্ত্রীকে জানান। বিধবা ভাতা না পাবার কথাও কয়েকজন মহিলা মন্ত্রীকে জানান ।তাঁদের মধ্যে অনেকে যদিও মন্ত্রীকে জানান ,বিধবা ভাতা না পেলেও তাঁরা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। ওইসব প্রৌঢ়াদের মন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেন,বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করুন,ওটাও পেয়ে যাবেন । ১০০ দিনের কাজের করেও পারিশ্রমিকের টাকা না পাওয়ার কথাও অনেকে মন্ত্রীকে জানান। তা শুনে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য সাফ জানিয়ে দেন কেন্দ্রের মোদি সরকারই এর জন্য দায়ী। মোদি সরকার রাজ্যের প্রাপ্য ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না ।।