জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),১৬ নভেম্বর : ঘোষণা না হলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই যে পঞ্চায়েত ভোট হতে চলেছে এই বিষয়ে সবাই নিশ্চিত। লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের মত বৃহত্তর মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হলে পঞ্চায়েত ভোটে জয়লাভ করা যে কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে খুবই জরুরি। এটা প্রতিটি রাজনৈতিক সচেতন মানুষ জানে। তারই প্রস্তুতি চলছে। রাজ্যের শাসকদল হিসাবে তৃণমূল অবশ্যই অন্য দলগুলোর থেকে কিছুটা এগিয়ে আছে।
ভোটে জেতার ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারই সংশোধনের কাজ চলছে। শাসকদল হিসাবে ইতিমধ্যে তৃণমূল দলের সমস্ত স্তরের নেতাদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে ফেলেছে এবং করে চলেছে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গত ১৩ ই নভেম্বরের বর্ধমানে আয়োজিত সভায় পূর্ব বর্ধমান জেলার আউসগ্রামের বিতর্কিত নেত্রী মল্লিকা চোংদারকে দেখে ‘ভুত দে খার’ মত অনেকেই চমকে উঠেছে। তাহলে কি তিনি কোনো বড় দায়িত্ব পাচ্ছেন?
বিতর্কিত মন্তব্য করার বিষয়ে কুখ্যাতি ছিল গুসকরা পুরসভার টানা চারবারের কাউন্সিলার মল্লিকা চোংদারের। এমনকি দলের নেতারাও তার হাত থেকে রেহাই পায়নি। পুরসভার অন্দরেও দলের কাউন্সিলারদের সঙ্গে তিনি বারবার বিবাদে জড়িয়েছেন। অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে মুখোমুখি বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়ার পরই রাজনীতিতে তিনি পিছু হঠতে থাকেন। অনুব্রতের সুরে সুর মিলিয়ে গুসকরায় অনেকেই বলতে শুরু করে – মল্লিকা নাকি দলের কেউ নয়। দলের কোনো মিটিং মিছিলে ডাকা হত না। অথচ তাকে দল থেকে তাড়িয়েও দেওয়া হয়নি। বারবার অপমানিত হয়েও মল্লিকাও দলত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দেয়নি।
এই রকম টানাপোড়েনের মাঝে বিগত পুরভোটে চূড়ান্ত অপমানিত হন মল্লিকা। প্রার্থী তালিকায় তার মত ‘সিনিয়র’ লিডারের নাম থাকলেও সেটা কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। শোনা যায় বোলপুরে দলীয় সভা থেকে তাকে নাকি বের করে দেওয়া হয়। পুরভোটে প্রচারের জন্য দল তাকে না ডাকলেও দলের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার জন্য তিনি ‘ফেসবুক’ লাইভ করেন। নতুন পুরবোর্ডের শপথ অনুষ্ঠানেও তিনি ডাক পাননি।
এই পরিস্থিতিতে যখন মনে করা হচ্ছিল মল্লিকার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পুরোপুরি শেষ,ঠিক তখনই বর্ধমানের দলীয় সভায় দেখা গেলো তাঁকে । অনেকেই তাকে দেখে চমকে গেলেও তার পাশে তখন পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি সহ প্রথম সারির নেতারা। কেউ কেউ পুরনো সহকর্মীকে দেখে স্বাগত জানান এবং অতীতের স্মৃতিচারণ করেন।এমনকি, আপাতত প্রকাশ্যে না হলেও, তার রাজনীতির মূল ক্ষেত্র গুসকরা তথা আউসগ্রামেও অনেক তৃণমূল কর্মীকে খুশি দেখা গেলো।
মল্লিকার সম্পর্কে জেলা নেতৃত্বের বক্তব্য,উনি সিনিয়র লিডার এবং দলের দুর্দিনের কর্মী। মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হলেও সেসব এখন অতীত। অতীতের মতই উনি আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে নিজের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে মল্লিকার বক্তব্য, আজ আর কোনো বিতর্ক নয়। অতীতকে নিয়ে টানাটানিও নয়। আমি শুধু দলের হয়ে কাজ করতে চাই। দলের জেলা নেতৃত্ব সেই সুযোগ করে দেওয়ায় সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তবে দীর্ঘদিন পর দলের সভায় ডাক পেয়ে সত্যিই খুব আনন্দ হচ্ছে । মল্লিকার মত নেত্রীকে নিশ্চয়ই বসিয়ে রাখার জন্য দল পুনর্বাসন দেয়নি। এখন দেখার দল তাকে কোন দায়িত্ব দেয় এবং কিভাবে কাজে লাগায়। এটাও দেখার অতীতের মত মল্লিকা আবার কোনো বিতর্কিত মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে কিনা। একইসঙ্গে এটাও দেখার আউসগ্রামের নেতা-কর্মীরা কতটা তাকে মন থেকে স্বাগত জানায় ।।