এইদিন ওয়েবডেস্ক,দায়েগু,১৪ নভেম্বর : মসজিদ নির্মাণের জন্য একটি সম্পত্তি কিনেছিল মুসলিমরা । মসজিদ নির্মানের জন্য আদালতের অনুমতিও আছে । কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা,মসজিদ নির্মান হলে ভিড় বাড়বে । দিনরাত্রির আওয়াজে তাদের শান্তি বিঘ্নিত হবে । বাধ্য হয়ে তাদের ভিটেমাটি ছাড়াও হতে পারে । এই আশঙ্কায় মসজিদ নির্মান রুখতে উঠেপড়ে লেগেছে দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণশীল শহর দায়েগুতে দাহেইয়ং-ডং-এর বাসিন্দারা । তারই বহিঃপ্রকাশ হিসাবে গত মঙ্গলবার দেখা গেল নির্মীয়মান মসজিদের সামনে একটি টুলের উপরে রাখা হয়েছে শুকরের কাটা মাথা । দেওয়ালে সাঁটানো একটি বড়সড় ব্যানার । তাতে লেখা “আমরা ইসলামিক মসজিদ নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করছি ।”
দিন তিনেক আগে দ্য কোরিয়া হেরাল্ডে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল । প্রতিবেদনে জানা গেছে, কিয়ংপুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পাকিস্থান ও বাংলাদেশের বেশ কিছু যুবক পড়াশোনা করে ৷ দাহেইয়ং-ডং এলাকায় মসজিদ নির্মানের জন্য তাদের মধ্যে ৬ জন মিলে একটি জায়গা কিনেছিল । ২০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মসজিদ ভবন ও শীর্ষে একটি মিনার স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছিল তারা । তারপর জেলা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে মসজিদ ভবন নির্মাণ শুরু হয় । আর মসজিদ নির্মানের বিষয়টি চাওড় হতেই স্থানীয় কোরিয়ানরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন । তীব্র আপত্তি জানানোর পাশাপাশি তারা মসজিদের নির্মাণ বন্ধ করতে আন্দোলনে নামে। পোস্টার, ব্যানার লাগানোর পাশাপাশি নির্মানস্থলে শুয়োরের মাথা কেটে রেখে দিয়ে আসে ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী,স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে রোষ দেখে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মসজিদ নির্মাণ বন্ধ করার জন্য একটি প্রশাসনিক আদেশ জারি করেছিল জেলা অফিস । তখন মুসলিম ছাত্ররা আদালতের দ্বারস্থ হয় । আদালত মসজিদ নির্মানের অনুমতি দিলে ফের মসজিদ নির্মানের কাজ শুরু হয় আর তারপর থেকেই তীব্র আন্দোলন শুরু করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা ।
পাকিস্তানি নাগরিক কিয়ংপুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র মুয়াজ রাজাক জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি নির্মিয়মান মসজিদের কাছে গেলে শুকরের কাটা মাথাটি দেখতে পান । এই প্রথম নয়,গত মাসের শেষের দিকেও একই ঘটনা ঘটেছিল । তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রার্থনার সময় জোরে জোরে গান বাজানো হয় । প্রার্থনা শেষ হলে গান বন্ধ হয়ে যায় । এইভাবে আমাদের উৎপাত করা হয় ।’
শুধু তাইই নয়,শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মসজিদ নির্মাণের বিরুদ্ধে পোস্টার ও ব্যানার লাগিয়ে দিয়েছে স্থানীয় কোরিয়ানরা । মসজিদ নির্মান হলে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা । অনেকে আবার শরণার্থীদের এমন কান্ডকে দুঃসাহস হিসেবে দেখছেন । তাদের অভিযোগ, কোরিয়ান সংস্কৃতি ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে, আর সেই চক্রান্তের পিছনে শরণার্থী মুসলিমদের হাত রয়েছে ।
স্থানীয় বাসিন্দা বছর বাষট্টির বৃদ্ধ জাং-এর বাড়িটি নির্মীয়মান মসজিদের পাশেই । তিনি বলেছেন, কল্পনা করুন মসজিদ হলে প্রচুর লোকের ভিড় আপনার বাড়ির সামনের দরজা দিয়ে দিনে কয়েকবার যাতায়াত করবে । লোকেদের আড্ডা, হাঁটাচলা এবং বাইক এবং মোটরসাইকেল চালানোর শব্দ আপনাকে পাগল করে দেবে । সেই কারনে পরিবেশ রক্ষা করার জন্যই এই আগ্রাসন । কিন্তু এর পরেও মসজিদ নির্মান হলে আমাকে অন্যত্র সরে যেতে হবে ।’ শুধু জাং নন,কাছাকাছি একটি লন্ড্রি দোকানের মালকিনও মসজিদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ।।