প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ নভেম্বর : লেভেল ক্রসিং তো নয়, যেন মরণ ফাঁদ। ট্রেন ধেয়ে আসার প্রাক্কালে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির ইলামপুরের ওই মরণফাঁদ লেভেল ক্রসিংয়ের লাইনের ফাঁকে আটকে যায় টোটোর চাকা।সেই টোটোতে সওয়ার ছিলেন তিন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা যাত্রী।টোটো চালক অনেক চেষ্টা করেও তাঁর টোটোটিকে লেভেল ক্রসিং পার করাতে পারছিলেন না।তাই ট্রেন আসার পাবার পর রেল গেট নামাতে গিয়েও নামাতে পারছিলেন না গেটম্যান । সোমবার বেলায় জরুরী মিটিংয়ে যোগ দিতে যাবার সময়ে এমনটা দেখেই ভয়ানক বিপদের আশঙ্কা তৈরি হয় মেমারি পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ীর মনে।তৎক্ষনাত ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি দ্রত লেভেল ক্রসিংয়ে পৌছে যান।এক ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি জোরে ঠেলা দিয়ে লাইনে ফেঁসে যাওয়া টোটটিকে লেভেল ক্রসিক পার করিয়ে দেন । বড়সড় বিপদের হাতথেকে রক্ষাপেয়ে টোটোর চালক ও আরোহীরা স্বপন বিষয়ীকে কৃতজ্ঞতা জানান ।
মেমারি পৌরসভা এলাকাতেই রয়েছে ইস্টার্ন
রেলওয়ের হাওড়া- বর্ধমান মেইন শাখার মেমারি স্টেশনটি।মেমারি শহরের মধ্যেই ইলামপুর ,মেমারি বাজার ও জিটি রোডের উপরের রয়েছে রেলের লেভেল ক্রসিং। মেমারি পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ী জানান,মেমারি শহর এলাকায় থাকা তিনটি লেভেল ক্রসিংই মরণ ফাঁদের চেহার নিয়েছে। তার জন্য নিত্যদিন মেমারি শহরবাসীকে বিপদে পড়তে হচ্ছে।সোমবারও বিপদের মুখে পড়ে যাত্রী বোঝাই একটি টোটো ।
কি রকম বিপদে পড়েছিল টৌটটি ?এর উত্তরে
স্বপন বিষয়ী বলেন,বর্জ্য থেকে সার তৈরির বিষয়ে কেএমডিএর ইঞ্জিনিয়াররা এদিন মেমারি পৌর এলাকার ডাম্পিং গ্রাউন্ড দেখতে আসেন।তাই তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বেলা ১১ টার খানিক পর আমি স্কুটিতে চড়ে ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হই । ১১টা ২২ মিনিট নাগাদ আমি ইলামপুর লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে পৌছাই। ওই সময়ে ট্রেন আসার খবর হয়ে যাওয়ায় লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান গেট নামাতে শুরু করেদেন । ওই অবস্থার মধ্যেই আমি এবং আরো অনেক যানবাহন চালাক লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে যাই।কিন্তু তিন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা যাত্রীকে নিয়ে চলা একটি টোটো কিছুতেই লেভেল ক্রসিং পার হতে পারছিলো না। তাড়াতাড়ি টোট নিয়ে লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে যাবার জন্য গেটম্যানও চিৎকার করছিলেন।স্বপন বাবু বলেন, এমনটা দেখে অন্যরা চলে গেলেও আমি লোভেল ক্রসিং টপকেই আমার স্কুটি দাঁড় করিয়ে দি। ট্রেন ধেয়ে আসলে টোটো যাত্রীরা ভয়ংকর বিপদে পড়বেন এমনটা আশংকা তৈরি হওয়ায় আমি এক মুহুর্ত আর দেরি না করে টোটোর কাছে ছুটে যাই ।সেখানে গিয়ে দেখি,“ লেভেল ক্রসিংয়ে রেল লাইনের ফাঁকে থাকা বড় গর্তে ওই টোটোর চাকা অাটকে গিয়েছে ।
এর পরেই আমি পথ চলতি এক ব্যক্তিকে দাঁড় করাই । দু’জনে মিলে পিছন দিক থেকে গায়ের
জোরে যাত্রী বোঝাই টোটোটিকে ঠেলতে শুরু করি। তাতেই কাজ হয়।টোটোটির চাকা গর্ত থেকে উঠে যেতেই চালক টোটোটিকে দ্রত লেভেল ক্রসিং পার করিয়ে নেন।এর পর টোটোর যাত্রীদেরও আতঙ্ক কাটে ।’
এই খবর ছড়িয়ে পড়েতে বিকালে মেমারি শহরবাসী স্বপন বিষয়ীর প্রশংসায় মুখর হন। যদিও স্বপন বিষয়ী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,আমাদের দলনেত্রী তথা বাংলার মখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় আমাদের বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন। নেত্রীর সেই কথাকে মানতা দিয়েই এদিন বিপদে পড়া ওই টোটো যাত্রীদের পাশে দাড়িয়েছি। মুখ ফিরিয়ে না নিয়ে সব মানুষ যদি বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাড়াঁয় তাহলে আমাদের সমাজের সকল মানুষেরই মঙ্গল হবে ।’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, মেমারি পৌর এলাকায় মরণ ফাঁদ হয়ে থাকা তিনটি লেভেল ক্রসিং দ্রত সংস্কারের করার জন্য তিনি মঙ্গলবার রেল দফতরে চিঠি পাঠাবেন।
টোটো চালক সাগর কর্মকার বলেন ,মেমারির
পৌর পিতা স্বপন বিষয়ী পাশে দাঁড়ানোয় বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে গিয়েছি। সাগর জানান ,তিনজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা পেসেন্ট এদিন বেলায় মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে তার টোটো ভাড়া করেন।তাঁদের নিয়ে তিনি মেমারির নুদিপুরে যাচ্ছিলেন।পথে মেমারির ইলামপুর রেল গেটের লেভেল ক্রসিংয়ে লাইনের ফাঁকের গর্তে তাঁর টোটো ফেঁসে যায়।
কিছুতেই টোটোটি আর সমান্তরাল জায়গায় তুলতে পারছিলেন না।তারই মধ্যে ওই রেল পথে ট্রেন আসার খবর হয়ে যায়। পথ চলতি অন্য মানুষরা তাঁর বিপদ দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কিন্তু মেমারির পৌরপিতা স্বপন বিষয়ী তা করেননি । সাগর কর্মকার বলেন,আমার ও আমার টোটোয় থাকা যাত্রীদের বিপদ দেখে স্বপন বাবু দ্রূত তাঁর স্কুটি দাঁড় করিয়ে ছুটে আসেন। গায়ের জোরে তিনি পিছন দিক থেকে টোটটিকে ঠেলতে শুরু করেন । সেই ঠেলায় লাইলের ফাঁকের গর্ত থেকে টোটটি সমতল জায়গায় ওঠানো সম্ভব হওয়ায় ট্রেন চলে আসার আগেই লেভেল ক্রসিং পার হতে পারেন। টোটো চালক সাগর কর্মকার এও বলেন,পৌর পিতা এই ভাবে তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় এদিন তিনি এবং তাঁর টোটোয় থাকা অন্তঃসত্তা মহিলা যাত্রীরাও রক্ষা পেয়ে গিয়েছেন। নয়তো কি হত কে জানে !
জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা কাটোয়ায় বিধায়ক ররীন্দ্রনাথ চট্টৌপাধ্যায় বলেন,মেমারির পৌরপিতা স্বপন বিষয়ী এদিন যে কাজ করেছে তার প্রশংসা না করৈ পারছি না। দেলের সর্বস্তরের নেতা ও কর্মীরা এই ভাবেই অসহায় ও বিপদে পড়া মানুষে
পাশে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশাই আমি রাখি ।।