জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),০৬ নভেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা পুরসভার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এলাকা ক্ষেত্রপাল তলা। ২০০২ সালে পাড়ায় আরও একটি দুর্গাপুজো শুরু করা নিয়ে আলোচনা হলেও গুসকরায় একাধিক জনপ্রিয় দুর্গাপুজো থাকার জন্য প্রথমেই সেটা বাদ দেওয়া হয়। অবশেষে অনেক আলোচনার শেষে জগদ্ধাত্রী পুজোর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । সুবীর রানার নেতৃত্বে ক্ষেত্রপাল তলার আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা মেতে ওঠে জগদ্ধাত্রী পুজোয়। আন্তরিকতার গুণে যুবকদের শুরু করা পুজো হয়ে ওঠে সর্বজনীন এবং সেটি এবছর একুশতম বছরে পদার্পণ করল।
এই পুজোর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ পুজোয় অংশগ্রহণ করে। এমনকি পাশাপাশি বসে পুজোর ভোগ গ্রহণ করে। প্রবীণ-প্রবীণাদের পুজোর মণ্ডপে দেখতে পাওয়া যায়।
গত একুশ বছর ধরে শহরের কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি ফিতে কেটে পুজোর উদ্বোধন করেন। পাশে থাকেন শিক্ষক সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। যেমন এবার উদ্বোধন করেছেন প্রবীণ চিকিৎসক ডা. শ্যামল দাস। সঙ্গে ছিলেন শহরের একগুচ্ছ বিশিষ্ট শিক্ষক। শ্যামল বাবু বললেন,’এদের ডাক এড়িয়ে যেতে পারি না।
প্রতিবছরের মত এবছরও গত বুধবার থেকে তিন দিন ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল । প্রথম দিন হয় রিয়া সরকার গ্রুপের বাউল গান। দ্বিতীয় দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা ‘জুতা আবিস্কার’ অবলম্বনে নাটক যেটির নাট্যরূপ, নির্দেশনা ও অভিনয়ে ছিলেন সুবীর রানা নিজে। পরিবেশনায় নাট্যম নাট্য সংস্থা। তৃতীয় দিন হয় এলাকার সুপরিচিত নৃত্য শিক্ষক অলোক ভাদুরির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নৃত্য। যেহেতু এই সময় গুসকরায় অন্য কোনো পুজো হয়না তাই বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দর্শনার্থীরা এখানে ভিড় করেন। ফলে পুজো চত্বর সর্বদা জমজমাট থাকে।
মূলত পাড়ার ছেলে বুলান, রোহিত, বসন্ত, টন, জয়ন্ত, চন্দন, অভি, ময়না, অর্পিতা, জ্যোৎস্না, নমিতা, সৌভিক, জয়, ভোলা, বলাই, অচিন্ত্য, রাহুল, গোরল, নটবর, স্নেহাশীষ, গোপাল প্রমুখদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার জন্য গত একুশ বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন এলাকার প্রতিটি পরিবার। সবার উপরে সুবীর রানা তো আছেনই।
সুবীর বাবু বললেন,’গত কয়েক বছর পুজোর সমস্ত আয়োজন যুব সম্প্রদায় করে চলেছে। আমি শুধু ওদের পাশে থেকে ওদের উৎসাহ দিই যাতে আগামী দিনে ওরা সাহস করে এগিয়ে আসতে পারে। তিনি আরও বললেন – আমাদের সবচেয়ে সুবিধা পাড়ার প্রতিটি বাসিন্দা পুজোটাকে নিজের মনে করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ।’।