প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৬ নভেম্বর : প্রেমিককে আত্মহত্যা প্ররোচনা দেবার দায়ে রোষানলে পড়ে প্রেমিকা সহ তাঁর বাবা-মা ও দাদার ঠাঁই হল শ্রীঘরে। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার কেওটারা গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে,ধৃত প্রেমিকার নাম সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায় ওরফে ফুলু। অপর ধৃতরা হল প্রেমিকার বাবা তাপস চট্টোপাধ্যায় , মা পম্পা চট্টোপাধ্যায় ও দাদা তারকনাথ চট্টোপাধ্যায়।আত্মঘাতী প্রমিক রাহুল ঘোষের বাবা প্রশান্ত ঘোষের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে জামালপুর থানার পুলিশ শনিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে । সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ চার ধৃতকেই রবিবার পেশ করে বর্ধমান আদালতে।বিচারক প্রেমিকাকে তিনি দিনের পুলিশি হেপাজত ও বাকি ধৃতদের জেল হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,জামলপুর থানার আবুজহাটি ১ পঞ্চায়েতের কেওটারা গ্রামে বাড়ি বছর ২২ বয়সী যুবক রাহুল ঘোষের।একই গ্রামের বাসিন্দা বছর ১৯ বয়সী তরুণী সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়। রাহুল স্থানীয় পঞ্চায়েতের অধীনে ভেক্টর কন্ট্রোল টিম (VCT) এর স্বল্প বেতন ভুক কর্মী ছিলেন। সুপর্ণা উচ্চমাধ্যমিক স্তরেে পাঠরত কালে লেখা পড়ায় ইতি টানে। মৃতর পরিবার পরিজন ও এলাকাবাসীর দাবি রাহুল ও সুপর্ণার মধ্যে প্রণয় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। রাহুল গভীর ভাবে ভালবেশে ফেলেছিল সুপর্ণাকে।কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারনে সুপর্ণা আর সম্পর্ক রাখতে চাইতো না রাহুলের
সঙ্গে।তা নিয়ে রাহুল মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে । মনকষ্টে সে শুক্রবার কীটনাশক খেয়ে নেয় ।বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেতাঁর চিকিৎসা চললেও শেষ রক্ষা হয় নি । শনিবার সেখানেই রাহুলের মৃত্যু হয় ।
রাহুলের মৃত্যু খবর শনিবার বিকালে তাঁর বাড়িতে ও পরিজনের কাছে পৌছায়। তার পরেই গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সুপর্ণা ও তাঁর পরিবারের লোকজন রাহুলকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে স্বোচ্চার হন মৃতের পরিবার পরিজনরা । রাতে মৃত যুবকের পরিবারের রোষ আছড়ে পড়ে সুপর্ণাদের বাড়িতে। সেই খবর পেয়েই জামালপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে ক্ষোভ বিক্ষোভ সামাল দেয়।পরে মৃত যুবক রাহুলের বাবা প্রশান্ত ঘোষ পুলিশের কাছে সুপর্ণা ও তার পরিবার সদস্যদের বিরুদ্ধে ছেলেকে অত্মহতায় প্ররোচনা দেবার অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ রাহুলের প্রেমিকা সুপর্ণা এবং তাঁর বাবা-মা ও দাদাকে গ্রেপ্তার করে ।
যদিও রাহুলকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেবার অভিযোগ মিথ্যা বলে এদিন দাবি করেছেন
সুর্ণার দাদা তারকনাথ চট্টোপাধ্যায় ও বাবা
তপস চট্টোপাধ্যায় ।জামালপুর থানা থেকে বর্ধমান আদালতে নিয়ে যাবার সময়ে তারকনাথ সংবাদ মাধ্যমকে জানান ,তাঁর বোনের সঙ্গে রাহুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ঠিকই।কিন্তু সেই সম্পর্ক মেনে নেয়নি রাহুলের পরিবারই।সম্পর্ক না রাখার কথাও রাহুলের ববা ও মা সুপর্ণাকে জানিয়ে দেন।একই সঙ্গে তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছিলেন, ’সুপর্ণা যদি রাহুলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে তবে তাঁরা সুইসইড করে আত্মঘাতী হয়ে সুপর্ণাকে এবং আমদের সবাইকে ফাঁসিয়ে দেবেন’। এমন হুঁশিয়ারির কথা শোনার পর সুপর্ণা প্রায় এক বছর হল আর সম্পর্ক রাখতো না রাহুলের সঙ্গে ।তা সত্ত্বেও সুপর্ণার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে নাছোড় ছিল রাহুল। অন্য ছেলের সঙ্গে সুর্ণার বিয়ের ঠিক করা হয়েছে তা রাহুল জানতে পেরে যায় ।তখন রাহুল আবার হুঁশিয়ারি দেয় তাঁকে ছেড়ে সুপর্ণা যদি অন্য ছেলেকে বিয়ে করে তাহলে সে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে। তারকনাথ ও তাঁর বাবা তপস বাবু বলেন,“রাহুলের এই হুঁশিয়ারির কথা আমরা রাহুলের মায়ের কাছে গিয়ে সব বলি ।তা শুনে রাহুলের মা রাহুলকে প্রচণ্ড বকাবকি করেন। তার পরেই রাহুল বিষ খেয়ে নেয়।অথচ আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা করে রাহুলকে আত্মহত্যয় প্ররোচনা দেবার অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করানো হল ।’।