প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৬ নভেম্বর : পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই রাজ্য জুড়ে বেড়ে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী বিবাদ ও গোষ্ঠী সংঘর্ঘ।তার রেশ এখন গিয়ে পড়ছে সমবায় সমিতিতেও। গোষ্ঠী বিবাদের জেরে পূর্ব বর্ধমানের জামার সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ১০ জন সদস্যের মধ্যে ৮ জন পদত্যাগ করলেন।এই ঘটনা জেলার রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক শোরগোল ফেলে দিয়েছে।ঘটনার কথা জেনে উৎফুল্ল বিরোধী শিবির ।
বছর ঘুরলেই এই রাজ্যে হবে পঞ্চায়েত ভোট । তবুও বিরাম পড়ছে না তৃণমূলের গোষ্ঠী বিবাদ ও গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনার । অতি সম্প্রতি জেলার মেমারি, গলসি,বর্ধমান শহরে ঘটে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা । আর এবার তৃণমূলের গোষ্ঠী বিবাদের জেরে ৮ জন সদস্য পদত্যগ করায় অচলাবস্থা তৈরি হল জেলার বর্ধমান ১ ব্লকের জামার সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে।পদত্যাগের কারণ প্রসঙ্গে পদত্যাগী সদস্যরা জানিয়েছেন,যুব তৃণমূল কংগ্রেসের একটা গোষ্ঠী দিনের পর দিন তাঁদের নানান ভাবে অপমান ও হেনস্থা করে চলেছে। যার কারণে সম্মানের সঙ্গে তাঁরা সমবায়ের কাজ করতে পারছিলেন না । বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।সেকারণেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে পদত্যাগীরা দাবি করেছেন।
একসাথে ৮জন সদস্য পদত্যাগ করায় চিন্তা বেড়েছে জামার সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের ম্যানেজার পাপাই কোনারের। তিনি জানান,১০ সদস্যের মধ্যে আটজন একসঙ্গে পদত্যাগ করায় সমবায়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।তাঁর আশা খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
পদত্যাগীদের মধ্যে রয়েছেন জামার সমবায় সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কোনার। বর্তমানে তিনি স্থানীয় রায়ান ২ নম্বর পঞ্চায়েতের সদস্য।এর আগে তিনি তৃণমূলের ব্লক সহ সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষও ছিলেন। এহেন একজন উচ্চনেতৃত্ব সহ আট জন একসঙ্গে সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটির থেকে পদত্যাগ করায় বিড়ম্বনায় পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। সঞ্জয় বাবু রবিবার বলেন“,আমরা যে কজন সমিতির পরিচালনার দায়িত্বে আছি তারা সকলেই প্রবীণ। আমরা সম্মানের সাথে এতদিন দল করে এসেছি। ২০১৯ সালে দল যখন আমরা এই সমবায় সমিতির দ্বায়িত্ব পেয়েছিলাম তখন সমবায়ের লভ্যাংশ ছিল মাত্র তিন লক্ষ টাকা।এখন লভ্যাংশ দাঁড়িয়েছে ২২ লক্ষ টাকা।পাশাপাশি পাশের গ্রাম মির্জাপুরে সমবায়ের একটি শাখাও খুলতে পেরেছেন। এত কিছুর পরেও
ব্লকের যুব তৃণমূলের কিছু দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা পদে পদে আমাদের অপমানজনক কথাবার্তা বলে চলেছে । এমনকি পঞ্চায়েতে গেলেও সেখানে অপদস্থ হতে হয়।এইসব মেনে নিতে না পেরেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সঞ্জয় কোনার জানান“। অপর পদত্যাগী সমিতির সহ সভাপতি সেখ আপসিয়া বলেন, “আমরা সবাই তৃণমূল কংগ্রেস করি। কিন্তু তৃণমূলের যুব গোষ্ঠীর অত্যাচারে আমরা বাধ্য হই পদত্যাগ করতে ।’
যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি যুব নেতা অরূপ গুপ্ত ও শেখর গাঙ্গুলিরা। পাল্টা তাঁরা অভিযোগ করেন, সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তারাএকতরফা ভাবে সমিতি চালাচ্ছেন । কোনো হিসাব তাঁরা কাউকে দিতেন না। আমরা হিসাব চাইতে গেলে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। সমবায় থেকে চাষীরা ন্যায্য মূল্যে সার কেনেন। কিন্তু উনি কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।কেন সারের দাম বাড়লো সেটা গ্রামের মানুষ জানতে গিয়েছিল। সেটা অপরাধ হয়ে গিয়েছে । যুব নেতারা আরও অভিযোগ সঞ্জয় কোনার বিধানসভা ভোটের আগে জেলার এক তৃণমূল নেতাকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির কাছে গিয়েছিলেন।তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য হলেও গ্রামের উন্নয়নের জন্য কিছু করেন নি বলেও দুই যুবনেতা দাবি করেন।
যুব নেতারা এমন সব অভিযোগ করভেও বর্ধমান ১ ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি কাকলি গুপ্ত জানান,“দল সঞ্জয় কোনারকে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়েছে।সমবায়ের পরিচালন সমিতি যখন গঠন হয় তখন সঞ্জয় কোনার তাঁর পেটুয়া লোকেদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছিলেন। পদত্যাগও তাঁরা একসঙ্গেই করেছেন । চাষীরা হিসাব চেয়ে পাচ্ছিলেন না, যারা গ্রাম চালাচ্ছে তাদের কাছে চাষীরা অভিযোগ করেছে।তা নিয়ে এমন কিছু তো হয়নি যে পদত্যাগ করতে হবে।মানুষ যখন হিসাব চাইছে তখন হিসাব দিয়ে দিলেই হত“। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপত্র দেবু টুডু বলেন,”ঘটনার খবর পেয়েছি।খুব শিঘ্র মনোমালিন্য সব মিটে যাবে“। বিজেপি নেতা কল্লোল নন্দন এই বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “ওদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা,মনোমালিন্য।এমনটা তো গোটা রাজ্যেই চলছে।জামার সমবায় সমিতিতে তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি ।’।